Sasraya News

Pregnancy Test Kit : প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট: এখনকার নারীদের নির্ভরতা ও বাস্তবতা

Listen

বিভিন্ন মেডিকেল গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিকভাবে ব্যবহৃত হলে প্রেগন্যান্সি (Pregnancy) টেস্ট কিট প্রায় ৯৭%–৯৯% পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য ফলাফল দিতে সক্ষম। লিখেছেন : পার্বতী কাশ্যপ 

 

র্তমান সময়ে নারীদের জীবনে স্বাস্থ্য সচেতনতা অনেক বেড়েছে। সময়ের অভাব, গোপনীয়তা রক্ষা ও সহজলভ্যতার কারণে এখনকার মেয়েরা অনেকটাই নির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের (Pregnancy Test Kit) ওপর। ওষুধের দোকানে বা অনলাইন ফার্মেসিতে সহজেই পাওয়া যায় এই কিট। যা ক’য়েক মিনিটের মধ্যেই গর্ভধারণ হয়েছে কি না তা জানিয়ে দেয়। কিন্তু প্রশ্ন হল— এই কিট কতটা নির্ভরযোগ্য? এর ফলাফল কি একেবারেই নিশ্চিত? এবং নারীরা কতটা নিরাপদ এই কিটের ওপর ভরসা করে?

ছবি : প্রতীকী

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট কীভাবে কাজ করে? প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট মূলত নারীর প্রস্রাবে উপস্থিত একটি নির্দিষ্ট হরমোন, হিউম্যান করোনিক গনাডোট্রপিন (hCG), শনাক্ত করে। গর্ভধারণের পর শরীরে এই হরমোন তৈরি হতে শুরু করে এবং সাধারণত নির্দিষ্ট একটি মাত্রা অতিক্রম করলেই সেটি টেস্ট কিটে ধরা পড়ে। তাই গর্ভধারণের পর ৭-১০ দিনের মধ্যেই একটি প্রাথমিক ফলাফল পাওয়া সম্ভব হয়।

কতটা নির্ভরযোগ্য? বিভিন্ন মেডিকেল গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিকভাবে ব্যবহৃত হলে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট প্রায় ৯৭%–৯৯% পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য ফলাফল দিতে সক্ষম। তবে এতে নির্ভুলতার কিছু শর্ত থাকে—যেমন: টেস্টটি সঠিক সময়ে করা হয়েছে কি না (যথাযথ মাসিক মিস হওয়ার পর)! সকালবেলার প্রথম প্রস্রাব ব্যবহার করা হয়েছে কি না (এই সময় hCG হরমোনের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি থাকে)! মেয়াদোত্তীর্ণ কিট ব্যবহার করা হয়েছে কি না! তবে মাঝে মাঝে ফলাফল ভুল (গর্ভধারণ হলেও ফলাফল না আসা) বা গর্ভধারণ না হলেও ফল পজিটিভ আসা— এমন হতে পারে। এর কারণ হতে পারে কিটের গুণমান, ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধের প্রভাব, অথবা শরীরের বিশেষ কোনও শারীরিক অবস্থা।

ছবি : প্রতীকী

নারীদের স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বাড়লেও অনেক সময় দেখা যায়, কেবল কিটের ওপর ভরসা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা হয়। এটি বিপজ্জনক হতে পারে। যেমন কেউ যদি ভুলবশত নেগেটিভ ফলাফলে ভরসা করে জরুরি চিকিৎসা না নেন, তবে গর্ভাবস্থার জটিলতা বাড়তে পারে। আবার কেউ পজিটিভ ফলাফলে আতঙ্কিত হয়ে ভুল পদক্ষেপ নিতে পারেন। চিকিৎসকরা বরাবরই পরামর্শ দেন, ঘরে টেস্ট করার পর যদি পজিটিভ ফল আসে, তবে অবশ্যই একজন গাইনোকোলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। আলট্রাসাউন্ড বা রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন, কারণ শুধু কিটের ওপর নির্ভর করা নিরাপদ নয়।

ছবি : প্রতীকী

এই সমাজে, যেখানে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য এখনও একটি গোপন ও সংবেদনশীল বিষয়, সেখানে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট কিছুটা হলেও স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। অনেক নারী গোপনে, পরিবারের অজান্তেই টেস্ট করে নিজের শারীরিক অবস্থান বুঝতে পারছেন। কিন্তু এই সুবিধার পাশাপাশি রয়েছে মানসিক চাপে ভোগার সম্ভাবনাও। যদি কেউ অপ্রত্যাশিতভাবে পজিটিভ ফলাফল পান, তবে অনেকেই আতঙ্ক, লজ্জা কিংবা সামাজিক চাপের কারণে চুপচাপ থাকেন, যা পরবর্তী সময়ে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

ছবি : প্রতীকী

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট একটি প্রাথমিক ধারণা দেয় মাত্র। এটি চিকিৎসকের বিকল্প নয়। নারীদের উচিত:
১. টেস্ট করার আগে নির্দেশনা ভালভাবে পড়ে নেওয়া।
২. মেয়াদোত্তীর্ণ কিট না ব্যবহার করা।
৩. ফলাফল যাই হোক না কেন, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
৪. টেস্টের ফলাফল নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে, সঠিক তথ্য ও সহায়তা গ্রহণ করা

ছবি : প্রতীকী

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট নারীদের জন্য একটি বড় সুবিধা, বিশেষ করে সময় ও গোপনীয়তার দিক থেকে। তবে এটি শুধুমাত্র একটি প্রাথমিক নির্দেশনা। এর ওপর সম্পূর্ণ ভরসা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া কখনওই উচিত নয়। নারীদের উচিত এই কিটকে একটি সহায়ক মাধ্যম হিসেবে দেখা, এবং ফলাফলের ভিত্তিতে চিকিৎসা গ্রহণ করা।
বর্তমান যুগে প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যসচেতনতাও বাড়ছে। তবে এর সঙ্গে চাই সচেতন ব্যবহার এবং সামাজিক সমর্থন। তাহলেই নারীরা হয়ে উঠবেন আরও সুস্থ, নিরাপদ ও আত্মবিশ্বাসী।

(ফিচারটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে লেখা।)

ছবি : প্রতীকী
আরও পড়ুন : Koel Mallick : বাংলা সিনেমার রাজকন্যা: কোয়েল মল্লিক

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment

Also Read