Sasraya News

Saturday, February 8, 2025

Poet Tapas Roy | কবি তাপস রায় -এর কবিতাগুচ্ছ

Listen

🍂কবিতাগুচ্ছ 

 

বি তাপস রায় জন্ম হাবরা, বাণীপুর-এ। কবিতা লিখেই সাহিত্য জগতে প্রবেশ। তবে গল্প, উপন্যাস লিখতে এসেই সাড়া ফেলেছেন। প্রথম উপন্যাস ‘পোড়ামাটির দেউল’ বেরিয়েছে ‘দেশ’ শারদ সংখ্যায়। আর সেটি আনন্দ পাবলিশার্স থেকে বই আকারে প্রকাশ পেলে ২০১৬-র ‘প্রথম আলো’ পুরস্কারে তা স্বীকৃতিও পায়। কবিতার জন্য বীরেন্দ্র পুরস্কার ২০০৬ সালে। বইঃ ‘ব্যবহারিক রূপবিজ্ঞান তত্ত্ব’ উপন্যাস এর জন্য প্রথম আলো পুরস্কার ২০১৬ সালে। বইঃ ‘পোড়ামাটির দেউল’ উপন্যাসের জন্য রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী পুরস্কার ২০২৩ সালে। বইঃ ‘রায়গুণাকর’। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসঃ মানদাসুন্দরীর কাঁথা (আনন্দ পাবলিশার্স), বন্দেমাতরম (একুশ শতক), শুধু পটে লেখা (মিসিসিপির মেঘ), রায়গুণাকর (পত্রপাঠ), গরানহাটির কীর্তনীয়া (লালমাটি), গত বছর এই লেখকের তিনটি ধারাবাহিক উপন্যাস একসঙ্গে বের হয়েছে শ্রীমতী (সানন্দা), পুটিমাসির মিশির শিশি (গৃহশোভা), রেড পার্সেন্টেজ (ভারতবিচিত্রা, ঢাকা)। সম্পাদনা করেন, ‘সুইনহোস্ট্রীট’ নামে একটি কবিতা পত্রিকা। সাশ্রয় নিউজ -এর আজকের পাতায় রইল কবির কবিতাগুচ্ছ।🍁

 

 

 

 

তাপস রায়  

‘ক্রমে আলো নিভিয়া আসিতেছে’

 

আমি এক নষ্ট সারেং। জল ও মাটির টানাটানি চিহ্ন নিয়ে ভেসে আছি
কত কি হিসেব রাখি – কুলির সর্দার, ক্যাপ্টেন, বন্দরের মালবাবু
প্রত্যেকের আলাদা হিসেব। আমার হাওয়ারা নোনাকথা বয়ে আনে
আমাকে শিখতে হয় খচ্চরের চোখের চাউনি আর সবজান্তা হাসি
এ-দেহ ভৌতিক হয়, দূরে রাখি যমুনার বাঁশি
এক একটা রোদের আয়ু আমি চিনি। ভ্রমতৎপর হাতছানি থাকে
যেহেতু জলের ধ্বংসস্তুপের সাথে যোগসাজসরত
ঘৃণা ও থুতুরা উত্তালতা পেলে আমি খুব দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীর মতো
আনত ভঙ্গিকে নিই, চা-বিস্কুটের পাশে তাদেরও টেনে এনে
শান্ত করি, আমার ফুসফুসে
গোলাবারুদেরা জমা হতে থাকে

এতদিন বাদে দূর-দূরান্ত হারিয়ে ফেলেছি যেই,স্মৃতি ছাড়খার করে
সটকে পড়েছে যেই স্মৃতিকীট আমি শীতকাল মেলে লেপ ও তোষক
খুনসুটি দেখি, আমের মুকুল ধরা চোখে পড়ে

 

 

 

ধরো আর কখনই তোমার মনখারাপ হল না

 

 

বৃক্ষ যেভাবে ফুল ফোটায়, একজন রাঁধুনিও –
কত পর্ব থেকে পর্বান্তরের ভেতর দিয়ে এদের যেতে হয়
আঁচলের হাওয়া তেমন করে টের না পেলেও
শহরের নদীটিকে বয়ে যেতে হয়
ওই তিরতির করে জলের উপরে রাখা কাঁপন ফুরিয়ে এসেছে

ক্রমে সাহস কমে আসে, এদিকে বর্ষা নেমেছে
একটা স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে পালিয়ে বেড়াচ্ছে সে, ট্রেন
নিজেকে হারিয়ে ফেলতে কতদূর যেতে পারে! ভয় পায়
কিশানগঞ্জ আসে, একটু গেলেই তরাইয়ের বন
অথচ সে জানে বনের গন্ধটুকু দিয়ে তাকে ফিরিয়ে দেবে
চতুর মানুষ, ফিরে যেতে হবে শহরের ছলনার কাছে

কিছু কিছু অক্ষরের বনিবনা হল না কোনোদিন
কোনো অক্ষরপ্রেমিক হয়ত জীবন ধরে চেষ্টা করেছে
শয়তানের সাহসের সাথে ঈশ্বরের বরাভয় মিশিয়ে
না-ঈশ্বর সৃষ্টি করে যেতে

ফরাসের কোণে একা বসে আছে ফাঁকা হুঁকোদান
কড়ি ঝোলানো হুঁকোটিকে নিয়ে
যে মানী অতিথি আয়েস উগড়ে দিয়েছে হুহু করে
সে কখনও নজর করেনি হুঁকাদানটির দীর্ঘ হাহাকার

 

 

 

 

গোল টিপ, থ্যাবড়ানো কাজল চোখের বেলফুলেদের কথা এই

 

যেভাবে সে ভোরের দরোজা খুলে বিষণ্ণতা ভাঙে, লক্ষ করি
আমি না দেখলে কী এমন হত! কাল সারারাত ধরে
যেসব বেলকুঁড়ি প্রাণপাত শ্রম দিয়ে আজ ভোরে প্রস্ফুটিত
সেসব কি থেমে যেত! একটা স্বপ্নকেও
আমি চালনা করতে পারিনি কখনও, তারা নিজেরাই
রাত্তিরের রোদে পিঠ মেলে চোখ বুজে ফেলে, এমনই সুখকাতর
আমি নিজেই তাঁতিপাড়ায় গিয়ে বসে পড়ি, মাকুটিকে
অনুরোধ করি, নাও, আমাকে বয়ণ করো

বনগাঁ লোকালের যাত্রী শেষ ট্রেন থেকে নেমে অন্ধকারের ভেতর ঢুকে যায়
শিমুলপুর, এখানেই থাকতেন বিনয় মজুমদার, আজ দূর থেকে
মনে হল তিনি হ্যারিকেন হাতে এগিয়ে এসেছেন রেললাইন পার করে দিতে
ওইখানে অনেক কাটাপড়া মানুষের উৎপাত আছে
ইছামতী ক্রমে ছোট হয় এরপর, একটা তারাকে দেখেছি
কলোনির ঘাটে চান করে নেয়, এই অন্ধকারে বস্ত্র খুলে রেখে জলে নামে
আমি তাকে উঠে আসতে দেখিনি কখনও

দেয়ালে টানানো ক্যালেন্ডার থেকে দিনগুলি ঝরে যেতে দেখি
সমস্ত হেরে যাওয়া সহ আমাকে কি লক্ষ করে কেউ! ভাবি
দরোজা, জানালা সব খুলে রাখি

 

 

 

 

নিশ্চিত পরাজয় জেনেও সমস্ত ক্রেতা বিক্রেতার মুখোমুখি হয়

 

প্রতিবেশী ছাদে রোজ চাঁদ এসে বসে, যেভাবে নানা রঙের ফুল ফোটে
আমাদের ছাদের বাগানে, সেভাবেই, তুমিও নজর কোরো, সেই চাঁদ
আজও সকালের পর খবরের কাগজ থেকে মুখ তুলে তাকেই দেখেছি
আমার এক একটা সৈনিকতা খুব চিনি। বনগাঁ লোকাল জানে কত যোদ্ধা
সকালে সে রেখে গেছে শহরের বুকে, যেভাবে ট্রয়ের ঘোড়া রাখা ছিল
ক্যালেন্ডারের উপরে উঠে আমাকেও লাফিয়ে যেতে হয় সোম-মঙ্গল-বুধ

এই সেই ঠোঁট-আঁকা জানালাকাহিনি, চুলের কাঁটারা নক্ষত্র গেঁথে নিতে চায়
একবার দুর্গাদালানের খড়মাটি দেখে আসব নাকি! দরোজায় উবু হয়ে বসে
আমাদের একমাত্র সেপ্টেম্বর মাস, তার গায়ে উৎসবের রামধনু আঁকা, যাই

একদিন কবিতা লিখব না ভেবে আমার আত্মহত্যা পেতে পারে, সোনালি
ফ্রেমের অক্ষরেরা ধরো, আমাকে জানাবে, আর তারা বন্ধু থাকতে উৎসাহী নয়

 

 

 

কিছু কিছু কবিতা এমন জাপ্টে ধরে কবি ট্যাঁ ফোঁ করতেই পারে না

 

 

একটা অক্ষরের পেছন থেকে ষড়যন্ত্র বয়নকারী সমস্ত সাদা আমি সরিয়ে দিতে চাই
লক্ষ করেছি, ঘুম একটা অনিবার্য অসুখ, মানুষের কাজের বিরুদ্ধে সেইই কামান দেগেছে

কত লক্ষ বছর ধরে, বৃষ্টিপাতের আগে যেভাবে গ্রীষ্মের হিংসা সহ্য করে নিতে হয়
আমি নিয়মমাফিক চাবুক চালানোর পক্ষপাতী নই, ঘোড়াকে ছুটিয়ে নিতে অন্য কোনো
সম্ভাবনা খুঁজে দেখতে হবে, রাজনীতিকদের কাছ থেকে চতুরতা কেড়ে নিতেই
কত পথ আমাদের হাঁটাহাঁটি হল

পৌরাণিক আমি রামযাত্রার আসরে গিয়েছি, সেখানে কাঠের তরবারি আর পুরুষ সীতাদের দেখে
বড় হয়ে যাই, প্রতিটি চকচকে দেবী মূর্তির পেছনে বাঁশ ও খড়ের নোংরামো রাখা আছে জেনে
আমি ভৌতিকতা মেখে লোকাল ট্রেনের পেট থেকে রোজ রোজ লাফিয়ে নেমেছি শেয়ালদায়
শহরের এমাথা ওমাথা হানাবাড়ি করে দিতে প্রেমিকাদের প্ররোচনা দিই, তারা যেন তীব্র আশায়
এক একটা নদীর লেজ ধরে বনবন ঘুরিয়ে ছেড়ে দিতে পারে রাজভবনের দিকে, পথে পড়বে
খাঁ খাঁ দুপুররত ট্রামগুমটি, চানাচুরঅলা

ওই ব্যাধ কালকেতুর শিষ্য আমি, নক্কা-ছক্কা বুঝি না। সে তুমি যত মাতব্বরই হও না কেন
কবিতা লিখব বলে আমি ঠিক তুলে আনব রাজসিংহাসন

 

 

 

 

একটি আঁচলের ওড়াউড়ি আজকাল লক্ষ করি খুব 

 

শূন্য হাঁক পাড়বে আমাকে। যে যেখানে শূন্য হয়ে আছে
কীভাবে যে খবর পেয়েছে, ঘিরে ফেলবে খুব
প্রতিটি শূন্য থেকে যে আলো ছড়াবে, তাকে তুমি
বিভা বলে ডেকো

যেসব ফুলেরা বুড়ো হয়ে গেছে, মানে ফুটে আছে বহুদিন হলো
কত কি হাওয়ারা কথা দিয়ে গেছে, ফিরে আসতে পারেনি
গোলাবারুদের নীচে চাপা পড়ে গেছে, তাদেরও শীতের পোশাক
পাঠাব বলে ঘুম থেকে উঠি

আমি তো নিজেই মিছিল আর আমি একা একা হাঁটি ধারালো অশ্রুতে
মৃৎপাত্রের ভাঙা কুচি হয়ে হরপ্পানগরে গিয়ে শুয়ে থাকি, ইতিহাস শোয়
কথা রিক্ত হতে হতে দেখি তুমি ঠোঁট পেতে আছ, সেখানে ঠমক
পুরনো দেবতারাও এসময় হুড়োহুড়ি লাগিয়ে দিয়েছে

ঘুমবো কি ঘুমবো না ভেবে এই চিৎ পড়ে থাকা কত শতাব্দী ধরে যেন …

 

 

 

 

কেন যে রোজ রোজ সূর্য কাঞ্চনজঙ্ঘার পেছনে শুতে যায় 

 

আমার ইচ্ছের বাড়িতে মাঝে মাঝে যাই, অনেকেই যায়
ইচ্ছের বাড়িতে থাকে ডালমুট, আমের আচার
অনেকেই ইচ্ছের বাড়িতে গিয়ে হাত-পা টান টান করে
‘ক’বাবু সে বাড়িতে গিয়ে হাঁকডাক মেলে চা খায়
পুরনো দিনের কথা কিনে নিয়ে আসে

এই সেই লুকনো রোদ্দুর, ফুলেদের মেলে দিই আমি
অনেক ভেবেছি, রোদ্দুর এই সব ফুলেদের লোভে লুকিয়েচুরিয়ে আসে
আমি কেন সেধে তার মনোরঞ্জন করতে বা যাব
দোতলার জানালায় বসে কথোপকথনরত মাধবীলতাদের
আমি আজকাল ঈর্ষা করি, আমার কথাবার্তা ক্রমেই ফুরিয়ে আসে

আমাকে ফ্রেমের ভেতর রেখে যে বা যারা মজা লোটে
পাগল হ্রদের পাশে গিয়ে বসে, দেখেছি
কেন যে অভিশাপও খরচ করতে পারি না আর ধুনুরিদের
দিকে চেয়ে থাকি, শীতকাল নিয়ে আসবে তারা
কাঠ-কুটো জ্বেলে উবু হয়ে আগুন পোহাতে বেশ লাগে

 

 

 

🍂অলঙ্করণ : প্রীতি দেব ও আন্তর্জালিক 

 

এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনীলেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানাযোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com

 

 

 

বি: দ্র: সমস্ত লেখা লেখকের নিজস্ব। দায় লেখকের নিজস্ব। কোনও বিতর্কিত বিষয় হলে সংবাদ সংস্থা কোনওভাবেই দায়ী থাকবে না এবং সমর্থন করে না। কোনও আইনি জটিলতায় সাশ্রয় নিউজ চ্যানেল থাকে না। লেখক লেখিকা প্রত্যেকেই লেখার প্রতি দ্বায়িত্ববান হয়ে উঠুন। লেখা নির্বাচনে (মনোনয়ন ও অমনোনয়ন) সম্পাদকমণ্ডলীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।🍁

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment