



কবি শারমিন সুলতানা -এর জন্ম ৮ জুলাই। ঢাকায়। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে অর্থনীতি বিভাগ থেকে মাস্টার্স করেন। পরবর্তীতে একটি প্রাইভেট কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সংসার জীবন ও কর্মব্যস্ততার পরে অবসরের সময় কাটে কবিতা লিখে। আনন্দ সংবাদ, আত্মকথা, সৃষ্টি সুখের উল্লাস প্রভৃতি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও ৫ টি যৌথ কাব্যগ্রন্থ প্রভাত ফেরী ,সঞ্চিত কথামালা, কালের কাব্যকথা, কালের কাব্যকথা- ৪, কবি ও কবিতা। একক বই দু’টি বই। সময়ের অব্যক্ত ভাষা (গল্পগ্রন্থ) ও কবিতার বই : প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। লেখকের তিনটি ই-বুক : দ্যা রিভেঞ্জ অব ন্যাচার (গল্পগ্রন্থ), কাব্যগ্রন্থ : পড়ন্ত বিকেলের শেষ রোদটুকু, ও সামাজিক উপন্যাস : হোমিসাইডাল টেন্ডেন্সিস। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ নারী লেখক সোসাইটির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাংলা সাহিত্য নিয়ে নিরলস চর্চা করে যাচ্ছেন। সাশ্রয় নিউজ -এর আজকের পাতায় কবির কবিতা গুচ্ছ।
শারমিন সুলতানা
এক মুঠো রোদ্দুর আমার উঠোনে
দিনের শেষ বেলায় যেন পেলাম খুঁজে মনের
ভিজে মাটিতে উড়ে আসা কোনো রাঙা গোধূলি,
পুলকিত হয়ে অধীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি স্পষ্ট রূপে শুনবো বলে তোমারই মিষ্টি মুখের বুলি।
ভুবনের অদেখা নিয়তিতে প্রকৃতির
অন্ধকার গর্ভের সন্ধান পেলাম আবারও,
হৃদয়ের চোখে দেখা কোনো এক অস্পষ্ট মুলি,
সময়-অসময়ে মনের দুয়ারে এসে জমা হওয়া কতো অব্যক্ত ব্যথাগুলোকে তাই আজ নিমেষেই ভুলি।
সেই স্মৃতি মাখা দিনগুলোতে তুমিই ছিলে গো প্রথম গানের সুর আর প্রথম গানের কলি,
তাই যে শুধুই কারণে-অকারণে তোমারই
ছবি আঁকবো বলে হাতে তুলে নিয়েছি
মনের মাধুরী মেশানো রং তুলি।
বেশ খানিকটা পর এক মুঠো রোদ্দুরের
আলতো পরশে ছেয়ে আছে আমার
উঠোনের পুরোনো এক ঝুলি।
বইয়ের ভাঁজে রাখা কোনো
গোলাপের পাঁপড়ির নির্যাসের মতোই
ভরে গেছে জীবনের অপূর্ণ স্বপ্নগুলি।
নববর্ষের বন্দনা
নতুন বছরের খুশিতে আমি
নয়নে কাজল মাখি,
আলতা রাঙ্গিয়ে হাতে পায়ে
কোমর দুলিয়ে নাচি।
দুহাত ভরা চুড়িতে আজ
বিনুনি ঘুরিয়ে খেলি,
কানে ঝুমকো, গলায় হার
আঁচল উড়িয়ে মেলি।
এইতো আমি বেশ আছি
রাঙ্গিয়ে ঠোঁটের হাসি,
কপালে দিয়েছি লাল টিপ
কতো যে ভালোবাসি।
ফুলের মালা গুঁজে দিয়ে
সেজেছি কেশবতী চন্দনা,
সাদা লাল পেড়ে শাড়ি জরিয়ে
করেছি নববর্ষের বন্দনা।
নব জন্মের প্রতীক্ষায়
বসন্তের কোমল বীণায় ঝংকৃত করে তোলে
প্রকৃতির রূপের নেশায় মাতাল হয়ে উঠা
কোনো এক জীর্ণ শীর্ণ আমায়,
তোমার সুখপ্রদ সৌরভ নিয়ে ভেসে বেড়ায়
প্রানান্ত হয়ে পূর্ণ চাঁদের মায়ায় এসে
ঋতুরাজ বসন্তেরই ছোঁয়ায়।
কোকিলের কুহুধ্বনি আর প্রজাপতির রঙিন
ডানা মেলে উড়তে থাকা গুঞ্জনে
চারদিকে মুখরিত হয়ে যায় নিমেষে।
ভোরের সূর্যের উজ্জ্বল আলো ও রাতের আকাশে
চাঁদের স্নিগ্ধ কিরণ পৃথিবীর বুক থেকে হৃদয় রাজ্যে
রঙের পরশ বুলিয়ে দেয় আমায় দারুণ আবেশে।
বসন্তের প্রকৃতির নব যৌবনের প্রতিমূর্তি হিসেবে
সেই কবেকার মন জুড়ানো ক্ষণের
অনুভূতিটুকু রয়ে যায় কোনো বদ্ধ পাড়ায়,
তবুও বিপরীতমুখী কোনো গ্রীষ্মের মাথা ফাটা
উত্তাপকে পেছনে ফেলে মলয় বায়ুর প্রবাহে
সেই পুরোনো জায়গায় এসেই সে থমকে দাঁড়ায়।
এদিকে শীতের জড়তা কাটিয়ে
এলো যে কতো বসন্তের আগমনে
মৃদমন্দ শীতল দক্ষিনা বাতাস,
ঠিক তেমনি,তোমার জাদু স্পর্শে বর্ণ বিরল
পৃথিবী হয়ে উঠে পুলক প্রবাহের আবাস।
শীতের হাড়কাঁপানো রথের ঘূর্ণি ধূলির আড়ালে
নবীন সূর্যের আলোয় স্নাত হয়ে
যেমনি করে বসন্তেরই হাওয়া উড়ে আসে,
তেমনি করেই বনবীথির রিক্ত শাখায় কচি
কিশলয়ের অফুরন্ত উল্লাসে নবজন্মের প্রতীক্ষায়
সেই প্রিয় মুখ তোমারই ছবি ভাসে।
গ্রীষ্মের ভিন্ন রূপ
গ্রীষ্মের লেলিহান তাপের সূচনায়
বৈশাখের দুর্ধর্ষ আশ্বাসবাণী
ঘোষণা করে ত্রিভুবনে,
নির্মল আকাশে ভেসে বেড়ানো
বৈশাখের মন মাতানো আনন্দক্ষণ
উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠে কোনো অপরাহ্নে।
প্রকৃতির পালাবদলের হাওয়ায় উড়ানো
রূদ্ধশ্বাসের পরিত্যক্ত পথে
গ্রীষ্ম নামক ঋতুর হয় আবির্ভাব,
কখনো বিক্ষুব্ধ হয়ে বৈশাখের
অবগুণ্ঠনকে মোচন করে রাঙ্গিয়ে দিয়ে যায়
তারই নিঃসঙ্গ তপ্ত প্রভাব।
গ্রীষ্মের ডালি ভরে উঠে সূরসাল
আম,জাম, কাঁঠালের প্রাচুর্যে –
তাইতো আত্মহারা পুলকিত মন তাই
কেনো ভাষা পায় না,
জীবনানন্দের রূপসী বাংলার
অফুরন্ত রূপ সুধা যেনো
কখনোই ফুরিয়ে যায় না।
মধ্যরাতের পাখি
প্রায়শই নির্ঘুম আমি বিছানা ছেড়ে উঠে পরি
ঠিক যখন কোলাহল মুক্ত মধ্যরাত,
দুকদম এগিয়ে সামনের ঝুলন্ত বাহারি পর্দা সরিয়ে
দৃষ্টিগোচর হয় জোৎস্নায় মাখামাখিতে রূপালী চাঁদ।
সেই আভার ঝলকানিতে ব্যালকনির ঝকঝকে কাঁচে
মাথা ঠেকিয়ে আনমনে আমি ভাবতে থাকি নির্বাক,
চারপাশের নিস্তব্ধ পরিবেশের মাঝেই শুনতে পাই
ছন্নছাড়া অতন্দ্র কয়েকটি কুকুরের ডাক।
তখনই হঠাৎ চোখ সরিয়ে অন্য কিছুর উপর
চোখ পড়ে যায় মাঝে মাঝে,
বড় রাস্তার গলি’র এক পাশের নিথর কবরস্থান
যা থাকে মধ্যরাতের অদ্ভুত প্রকৃতির ভাঁজে।
যেখানে নাম না জানা অচেনা মানুষ গুলো শুয়ে
আছে চিরনিদ্রায়-আমাদেরই ছোট্ট শহরে,
সকাল সকাল জেগে উঠে না কখনোই তারা
শুধুই পরে থাকে শক্ত মাটির বহরে।
হয়তো এমনই ভাবে আমরাও একদিন অসময়ে চলে
যাবো সেই চেনা মাটির গন্ধের টানে,
তাইতো নগরী জীবনের প্রাণের অস্তিত্বকে নিয়ে মধ্যরাতেই যতো ভাবনা ভেসে উঠে মনের কোণে।
দিনের আলোতে খুঁজে পাই না কোনো মানুষ
শুধুই মানুষের মুখোশ পড়া কোনো কিছুকে দেখি,
মোহময় কৃত্তিমতার বিদ্ঘুটে অন্ধকারের পিছনে
ছুটছে কেবলই, যেখানে রয়েছে নিছকই ফাঁকি।
হয়তো তাই প্রবল বেগে পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক
অবস্থানের কোনো এক ক্ষুদ্র পরিসরে শহরের
এক কোণে আমিই যে মধ্যরাতের পাখি।
উত্তাল তরঙ্গের অভিঘাতে জড়িয়ে নিঝুম কুঞ্জ
ছায়ায় এক গহীন রহস্য খেলা করে বারে বারে-
আমারই চেতনা জগতের গোপন আঁখি।
অঙ্কন : প্রীতি দেব
এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com
