



কবি মিতা নূর -এর কথায়, ‘নাম, বয়স, পদবী আমার কাছে কিছু না। আমি মানুষ, অতিসাধারণ একজন মানুষ। মনের খোরাক জোগাতে কবিতা লিখি, সৃষ্টিসুখ খুঁজি লেখার মাঝে। ভাগ করে নিই সেই শব্দ। বন্ধুমহল তেমন নেই। ছোটবেলা থেকেই আমার একা থাকার অভ্যেস। মা’কে চোখে দেখিনি। তবে আরেক মা তার সাধ্যের সবটুকু দিয়ে আমাকে বড় করেছেন। শখ করে বাবা আমার নাম দিয়েছে নূর। বাবার মনে হয়েছিল আমি তাঁর পৃথিবী আলো করে এসেছি। কিন্তু আমার জীবনের অর্ধেক আলো নিভে যায়। বাবার ছোট্ট নূর বড় হলাম পুরনো ঢাকায়। পড়াশোনা কাজ সংসার সবই পুরনো ঢাকার ভেতরে। মাঝ পথে জীবনে দখল নেয় কেউ। সেও ছিল আকাশ প্রিয়। তারার সঙ্গে মিল রেখে সে আমায় ডাকত মিতালি। আমি আমার বাবাকে খুব ভালবাসি, সেই আকাশ প্রিয় মানুষটাকেও। তা-ই দু’জনকেই আমার নামের সঙ্গে জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে রেখেছি। আজকের মিতা নূর, কমবেশি সবার পছন্দের। হঠাৎ জীবনের ছন্দপতন হওয়ায় পুরনো ঢাকার বাইরে আমার যাতায়াত শুরু হয়। আর সে থেকে সুযোগ পেলেই প্রকৃতির টানে ছুটে যাই একাই। ভ্রমণ নেশায় আমাকে কেউ আর ঘরে বেঁধে রাখতে পারেনি। অবসরের সঙ্গী কাগজ কলম কিংবা মুঠোফোনের কিবোর্ড। নিজের পরিচিতি বলতে আমার এতটুকুই। এর বেশি কিছু নেই। কে আপন কে পর, কে বন্ধু আর কে শত্রু জানি না। তবুও হাসিমুখে সবাইকে আগলিয়ে রাখতে চেষ্টা করি।’ সাশ্রয় নিউজ-এর আজকের পাতায় রইল কবির কবিতাগুচ্ছ।
মিতা নূর
অভিমানী
বোকা বোকা মুখখানি
মায়ায় জড়ানো ছোট্ট একটা মেয়ে।
নিজের সাথে কথা বলতো
আকাশ পানে চেয়ে।
কষ্ট পেলেও বলতো না সহজে,
কান্না ভেজা চোখ।
জিগ্যেস করলে বলতো কেবল,
ভালো আছি খুব।
বাবার কাছে থাকা তার আনন্দ ছিল বেশি,
মা যে আছে শুয়ে মাটির বুকে।
নইলে মা’ই দিতো আদর মেখে,
অভিমানীর চোখে।
শেষ চিঠির ঠিকানা
এই শহরে স্বর্গ খুঁজতে গিয়ে,
আমি বড্ড ক্লান্ত….!
শান্তি নামক নিঃশ্বাস নিতে গিয়ে,
অজানা আঁধারে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি,
মনের কুঠিরে এক’চিত্ত কামনায়…!
মৃত্যু যেন দেয় নিত্য হাতছানি আমায়,
শুধু মনের শেষ ইচ্ছে রয়েই গেল,
আজও জানা হল না পুরনো সেই খামের,
শেষ চিঠির ঠিকানা!
তখন জানলার গ্রীলের পাশে
হাল্কা ভিজেছি,
জানালার গ্রীল ঘেঁষে,
যতটুকু পেয়েছি।
মনের অজান্তেই,
বৃষ্টিকে ছুঁয়েছি।
আনমনা হয়ে,
তোকেই শুধু ভেবেছি।
বৃষ্টির ছলে,
আমিও যে কখন,
দু’ফোঁটা কেঁদেছি।
যদি হঠাৎ দেখা হয়!
যদি হঠাৎ দেখা হয় আমাদের,
কোনও এক ব্যস্ত শহরে!
তুমিও চমকিত চোখে থাকবে চেয়ে,
আমারও চোখের পলক পড়বে না,
তুমি হয়ত বলবে আমায়, কেমন আছ?
কেমন চলছে তোমার জীবন?
তখন বুকের ভিতর আর্তনাদ নিয়ে
ছদ্মবেসে হাসি হেঁসে বলব আমি,
এই তো ভাল-ই আছি….
এখন আর রাত জাগি না, অনুভূতি গুলোও নেই,
মন আজ আর কারোর শূন্যতায় কাঁদে না।
কাউকে আর বিরক্ত করে বলে না,
তোমায় খুব ভালবাসি…
জিজ্ঞেসা সূচক মন হয়ত তোমায় বলবে,
এখনও কি তুমি লিখালিখি করো?
আমায় নিয়ে একটা কবিতা লিখতে বলেছিলাম তোমায়!
লিখেছিলে তুমি…?
হয়ত সেদিন তুমিও আমায় জিজ্ঞেস করবে,
আমি উত্তরে বলব…
আমার ইচ্ছেগুলো নিয়েছে ছুটি।
ভালবাসাকে দুমড়ে-মুচড়ে ফেলে দিয়েছি,
অকেজো কাগজের মতো…
তুমি একসময় পাস কেটে চলে যাবে,
ফিরেও তাকাবে না তুমি…
হারিয়ে যাবে ব্যস্ত শহরে, লোকের ভিড়ে,
কিন্তু তোমার জন্য আমি…
শতশত কবিতা লিখে রেখেছি,
কোনও একদিন তোমার দরজায় কড়া নেড়ে,
ডাকপিয়ন ডাকবে…
তুমি অবাক দৃষ্টিতে দেখবে চেয়ে,
ডাকপিয়নের হাতে নীল খামে মোড়ানো
একটি কবিতা, কবিতার নাম হবে,
ভালবাসা তুমি অমর হয়ে থেক!
একরাশ স্মৃতি
এক নীরব বারান্দায়…
ভোরের হিমেল হাওয়ার স্পর্শ…
সূর্যের আদর জাড়ানো রোদ্দুর…
জরি জড়ানো শরত…!
হঠাৎ হঠাৎ ভেসে আসে…
শিশির ভাঙা ভাঙা মেঘ…
উদাসীন আকাশ….
সূর্যের কানে কানে বলে…
অতীত ফেলে আসা দিনের কথা…!
হৃদয়ের ডায়েরি’তে পড়ে আছে
একরাশ স্মৃতি…
তিক্ত হাতে বুক ভরা ব্যথা নিয়ে
বেঁচে আছি,
যেন এক জুঁই ফুলের, গন্ধ হয়ে!
বিচ্ছেদ হয়েছিল আমাদের
বিচ্ছেদ হয়ে ছিল আমাদের…
বিনা নোটিশ, স্বাক্ষর আর চুক্তিতে!
তিল তিল করে তোলা আমাদের বিশ্বাস-
ভরসার জায়গায়টা আজ…
দমকা হাওয়ায় এলোমেলো হয়ে গেল!
তোমার মন গড়া অজুহাত, আর অজুহাত-
ছাড়িয়ে যাওয়া শেষ না হওয়া ব্যস্ততা,
আমাকে বুঝতে বাধ্য করল…
প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে আমার।
বহুদিন হল একসাথে হাতে হাত রেখে-
খোলা আকাশের নিচে, শিশির ভেজা ঘাস মাড়িয়ে,
ছন্দে ছন্দ মিলিয়ে কবিতা বলি না।
আজ এই অধিকারটা হয়ত অন্য কারোর!
রাতের গভীরতায় আর হয়ত আমাদের অনুভূতির-
অনুবাদ করা হবে না…
আজ হয়ত এইসব নিয়ে আফসোস করাটা হবে বোকামি,
তবুও আমি চাই নিজের মতো…
তুমি আমার কবিতা জুড়ে বেঁচে থাকো অন্তত কাল!
এখনও খুব
শেষ দেখা,
শেষের কিছু কথা,
শেষ হাতের ছোঁয়া।
শেষ বলা,
ভালবাসি তোমায়।
শেষ চুমু,
তোমার গায়ের গন্ধটা
জ্বরের মতো করে,
এখনও খুব,
বুকের ভিতর পোড়ায়।
অলঙ্করণ : প্রীতি দেব ও আন্তর্জালিক
এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com
