



🍂কবিতাগুচ্ছ
কবি মমতা রায় চৌধুরী-এর জন্ম ১৯৭৬ সালের ১ মার্চ। জন্মস্থান পূর্ব বর্ধমান জেলা। পিতা পরেশ চন্দ্র রায় মা স্বর্গীয়া পুষ্পু রানী রায়। শিক্ষাগত যোগ্যতা ডাবল এম এ, বি এড। পেশা স্কুল শিক্ষিকা। সখ লেখালেখি। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাতে লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। নিয়মিত লিখছেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, চিঠিপত্র ইত্যাদি। সাশ্রয় নিউজ-এর আজকের পাতায় রইল কবির কবিতাগুচ্ছ।
মমতা রায় চৌধুরী
ঘুম
আমরা সকলেই এক গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন
চেতনার রঙগুলো পান্না সবুজ হওয়ার আগেই
কেমন বিবর্ণ ধূসর রং গ্রাস করছে প্রতিনিয়ত
আমরা দেখছি : প্রতিটা লয়
অথচ কারও মনে দাগ কাটে না কারও মন দেয় না সাড়া…
নারীর বিবর্ণ তার শরীরের ক্ষত চিহ্নগুলো
কেমন যেন উল্লাসে পরিণত হয়
কোনও শিশুর মধ্যেও মানবরূপী পশুরা খুঁজে পায় তার পুরুষত্ব।
আমরা কেমন ঘুমিয়ে আছি গভীর আচ্ছন্নে
চেতনাগুলো ঘুম পাড়িয়ে বিবেক হারিয়ে
আমরা যেন সকলেই এক গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন
প্রতিটা অন্যায়ের চিহ্ন পাহাড় সমান হলেও
আমরা নীরব দর্শক।
লয়
বুঝতে পারছি আর বেশি দেরি নেই
লয় আসন্ন আমাদের কাছে।
একদিকে প্রকৃতি
অন্যদিকে নারী
দুইই মহামায়ার অবিকল মূর্তি…
তাই লয় আসন্ন বুঝতে পারছি
আর কত সহ্য করবে ধরিত্রী
তার প্রতি ঘটে যাওয়া
অন্যায়- অত্যাচার, অবিচার
আর কত সহ্য করবে?
একদিন সরতে সরতে
দেওয়ালে পিঠ থেকে যাবে
আর সরবার জায়গা থাকবে না
তখন তাকে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে।
ঘুরে দাঁড়ানোর
পথ কবে ভয়ঙ্কর…
মা দুর্গার প্রতিমূর্তি নারী
অসুর বিনাশে অবতীর্ণ হবে না?
আমাদের গল্পটা
একদিন ভেবেছিলাম তোমায় নিয়ে
বেরিয়ে পড়ব সাত সমুদ্র
তেরো নদীর পারে
ভেবেছিলাম, তোমায় নিয়ে
রচনা করব এক সুন্দর সন্ধ্যে
অথচ তার আগেই বিকেলের কালবৈশাখী তেমন তছনছ করে দিল
সুন্দর সন্ধ্যার মুহূর্ত
আমি ভাবতে পারিনি
আমার জীবনেও নেমে আসবে এই বিপর্যয়
কে জানত আমাকে এখান থেকে আর কোনদিনও
বের হতে দেবে না
তুমিও তো আমাকে ভুল বুঝেছিলে
সে কালবৈশাখীর জন্য তো আমি দায়ী নই
কে যেন আমার হৃদয় বীণার তারগুলো
ছিঁড়ে দিয়েছিল
তবুও আমি তোমায় ভরসা করেছি
বিশ্বাসভরা দু’টো চোখ খুঁজছি
কিন্তু আমি পাইনি
এক অদ্ভুত সন্দেহ আর ঘৃণা
আমাকে ছুঁড়ে দিয়েছিলে
এরপর আমার সাজানো বাগানের
ফুলগুলো সব ঝরে গিয়েছিল
একদিন ভেবেছিলাম
তোমাকে নিয়ে
সাগরে বেড়াতে বেরব
কিন্তু হল না
ভালবাসার ঘর
ভালবাসার ঘর আমরা সকলেই চাই
ভালবাসার ঘর চায় আমার কাজের মাসি
কাজ করে যখন বাড়ি যায় জিজ্ঞেস করি
ও মাসি ভালবাসার ঘরে ফিরছ…
মাসি একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে
এক গাল হেসে উত্তর দিল
ভালবাসারই ঘর বটে!
আমাদের আবার ভালোবাসার ঘরে
চাল নেই, চুলো নেই, আছে দু’টো খুঁটি
তাঁবু খাটিয়ে তাতেই থাকি!
তবুও আমার ভালবাসার বাসা
ঘরে রয়েছে আমার অসুস্থ ব্যাটা
তার অসহায় মুখের চাহনি
আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায় সারাক্ষণ
আদরে সোহাগে ভরিয়ে রাখি
তাই তোমাদের ভালবাসার ঘর
আর আমাদের ভালবাসার ঘর
অনেক ফারাক
ঠিক প্রদীপের আলোর মত।
অসুস্থ
আমরা সবাই অসুস্থ
শরীর মন সবই বিকল
আজ শুনতে পাই না
নদীর কলকল ধ্বনি
পাখির সুমিষ্ট আওয়াজ
আজ কানে পৌঁছায় না
গোলাপের সুমিষ্ট সুবাস
আজ পাই না
শিশুর সারল্য
কাছে টানে না
প্রেমিকের চাউনি
ঢেউ তোলে না হৃদয়ে
আজ ঘটে যাওয়া
সমাজের স্তরের অন্যায়
চোখে আঙুল দিয়ে
দেখিয়ে দেয় না
“রাজা তোর কাপড় কোথায়”?
আজ সেই ছেলেটা নেই
আজ সেই ছেলেটাই পারে
আমাদের সকলের অসুস্থতা দূর করতে।
যদি সেই প্রেম আসে
আজ প্রেম আসে নীরবে
হাতছানি দিয়ে ডাকে
সেই ডাকে সাড়া দিতে ভয় লাগে
আজ প্রেমে বিশ্বাস নেই
নেই গভীর প্রত্যয়
নেই ভালবাসার দু’টি বাহু
আজ প্রেমে নেই
সবুজ ভরা দু’চোখের
ভাষার দীপ্ততা
তাই প্রেম আসে নীরবে
চলে যায়।
শুধু চেয়ে দেখি
আর ভাবি
যদি সেই প্রেম আসে…
দু’টি হাত
আজ দেখতে চাই সেই দু’টি
নির্ভীক উদ্ধত হাত
যে হাত তরোয়ালের চেয়েও শাণিত
যে হাত মানুষকে সংঘবদ্ধ হতে শেখায়
যে হাত মানুষকে বাঁচতে শেখায়
যে হাত নারীকে বেআব্রুর হতে বাঁচায়।
আজ দেখতে চাই সেই দু’টি
নির্ভীক ও উদ্ধত হাত
যে হাত অসহায় পিতা-মাতার
আশা ভরসা।
যে হাত সমাজের প্রতিটি স্তরে
পৌঁছে দিতে পারে সংগ্রামের বুলেটিন।
তোমায় আমায় মিলে
ভেবেছিলাম তোমায় আমায় মিলে
রচনা করব ভালবাসার স্বর্গ
তাতে থাকবে আমার
ছোট্টও কুটিরের জীর্ণশীর্ণ
মায়ের আদর ভরা আশীর্বাদ
আর থাকবে আমার ছোট্ট উঠান ভরা
সিম লাউ কুমড়োর ঝাড়-
আমার ভালবাসার আম গাছটার পরশ
আর তুমি
তোমায় ভরিয়ে রাখব সবুজ সোহাগে
আরোগ্য লাভের নতুন কুটিরে
যেখানে তোমাকে দূষণ-ভরা শহর
দূরে সরিয়ে কাছে টেনে নেবে
গ্রামের অকৃত্রিম অনাবিল প্রেম।
তোমাকে শোনাব
তোমাকে নিয়ে যাব সবুজ দেশে
যেখানে লাল নীল স্বপ্ন
ভিড় করে সকলের অন্তরে
তোমাকে নিয়ে যাব
সেই সুন্দরের দেশে
ক্ষতভরা সমাজ থেকে
অনেক অনেক দূরে
শাল পলাশ ঘেরা
সাঁওতালদের দেশে
তাদের সারল্য তাদের আদিম বন্যতা
তোমার ভেতরের যত কলুষতা
নিমেষেই দূরে সরিয়ে
মহুল বনের মাদকতায়
তোমাকে আচ্ছন্ন করবে।
তোমাকে নিয়ে যাব সেই
স্বপ্নেরা ভিড়ে, ওখানেই
তারারা হাতছানি দিয়ে ডাকে
আজ তুমি কত দূরে
তুমি অনেক দূরে
অথচ ইচ্ছে করলেই
তোমার কাছে ছুটে যেতে পারি
এতটাও দূরে তুমি নও
তবু কেমন তোমার সাথে
দূরত্ব আজ লক্ষ যোজন…
কেন এমন হল বলতে তুমি পারো
জানি আজ আমার স্বপ্নগুলো
তোমার স্বপ্ন ভিন্ন পথে বাঁক নিয়েছে
বোধহয় তুমি অন্য পথের
পথিক হয়ে পথ পাল্টেছো ইচ্ছে করেই।
এভাবেই প্রতিনিয়ত বিশ্বাস আর ভরসা
আহত রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত
হেমন্তের কুয়াশার মতো
কোথায় যেন তুমি অস্পষ্ট
কেমন করে হারিয়ে গেলে
তবুও কেন আমার মনে
ইচ্ছেগুলো এখনও জাগে
তোমায় ঘিরে স্বপ্ন দেখি
আমার মনের ক্যানভাসে।
🍂অঙ্কন : আন্তর্জালিক
এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি)। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com
বি: দ্র: সমস্ত লেখা লেখকের নিজস্ব। দায় লেখকের নিজস্ব। কোনও বিতর্কিত বিষয় হলে সংবাদ সংস্থা কোনওভাবেই দায়ী থাকবে না এবং সমর্থন করে না। কোনও আইনি জটিলতায় সাশ্রয় নিউজ চ্যানেল থাকে না। লেখক লেখিকা প্রত্যেকেই লেখার প্রতি দ্বায়িত্ববান হয়ে উঠুন। লেখা নির্বাচনে (মনোনয়ন ও অমনোনয়ন) সম্পাদকমণ্ডলীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।🍁
