



কবি অসীম দাস-এর জন্ম মুর্শিদাবাদের সের গ্রামে। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম টেক করে চাকরি জীবনে প্রবেশ। দশ বছর বয়সে মায়ের হাত ধরে ভ্রমণকাহিনী লিখে সাহিত্য চর্চার সূত্রপাত। পরবর্তীকাল থেকে গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বিভিন্ন পত্রিকা এবং সঙ্কলনে প্রকাশিত হয়ে চলেছে। বহু সাহিত্য অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ও বিচারকের ভূমিকায় ক্রমাগত সম্মানিত। সংবাদপত্র এবং সাহিত্য পত্রিকার পরিবার থেকে বিশেষ সম্মাননা প্রাপ্তি। বহু স্বনামধন্য কবি, সাহিত্যিক, সম্পাদকের সান্নিধ্য লাভে ধন্য এবং ভালোবাসায় আপ্লুত। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : ‘পদ্য পদ হাঁটে’, ‘নির্বাচিত একশত’, ‘নীল অরণ্যে হরিনাভী’, ‘হৃদয়ের তরবারী, মৃত্যু দাঁড়ালে’, ‘মধ্যবিত্ত মশারি এবং কৃপণ মেঘ’, ‘এক গাছ টুকটুকে সুর্য সকাল’। বর্তমানে কলকাতা নিউটাউনের বাসিন্দা কবি অসীম দাসের প্রিয় বিষয় থিয়েটার।
অসীম দাস-এরকবিতা
আনন্দ মগডালে
যাও জুগিয়ে মন রোমে রস
সুধার তূণীর নাকি?
পার করে দাও ঋতুর রিবন
কয়েক চক্র বাকি।
আটকে যখন পেন্ডুলামে
পাথর সময় পিঠ,
সচল বচল সর্ষে শ্বাসে
ছাড়িয়ে দিচ্ছো গিঁট।
ডুবছি জেনেও চেষ্টা যখন
চুপ -সাঁতারে থির,
পাখনা পায়ে ভাসিয়ে আনো
ভোর – রাঙানো তীর।
এমনি করেই পাই যদি হাল
ঝিমিয়ে পড়া পালে।
তুড়ির জীবন, বিষাদ বীজে
আনন্দ মগডালে।
সমর্পণ
অনর্গল রাজি আর অরাজি স্রোতের দায়িত্ব বয়ে
ক্লান্ত আমার শোভিত কঙ্কাল।
হোক ক্ষণকাল, সাগর সম্মতি পেলে
মসৃণ মিশে যাবো গতিহীন নরম নাব্যতায়।
ভাঙনের ভয় ভুলে, হাঁটুজল লজ্জার খিল খুলে
উপচানো গর্বের পালের মাস্তুল ফেলে
প্রশান্তির পূর্ণ পিপাসায়।
মহার্ঘ্য ডোবার আগে দৃশ্যের গন্ধমাদন থেকে
বিশল্যকরণী বীজ পৃথক রেখেছি।
অবাঞ্ছিত স্মৃতির জন্ম নয় আর,
সাধারণ স্বপ্ন শ্বাসে শুদ্ধ সুখী সৌম্য সমর্পণ
শুধু এক বার।
কল্কে ফুলের মধু
কল্কে ফুলের ঠোঁটে প্রথম মধু- চুম্বনের স্মৃতি
যেন টাটকা গতকাল।
ঝুলনের সাজানো পাহাড়ে
খেজুরের পাতা-রঙা টিয়ে’টার বয়স বাড়ে না।
অপরাজিতার কুঁড়ি ফুটে ফুটে এক নীল শৈশব নদী।
মিশাইল-বিদ্ধ এই দুঃসময় ছেড়ে
সময় পিছোতে চাই, হে সুসময়।
ক্রমাগত মৃত্যু দৃশ্য দেখে দেখে
শেষ অবসাদও ফুরিয়ে আসে বুঝি!
হাজারো কবিতার জন্ম যন্ত্রণায় সৃজন-আনন্দাশ্রম
কেবলই পন্ডশ্রম বলে মনে হয়।
সামরিক বাণিজ্য প্রধান যারা, কবিতা পড়ে না।
একদা কাব্যপ্রেমী ক্রেয়ন, শাসক-ট্র্যাজেডি শোকে
বিধ্বস্ত অকাল বৃদ্ধ একা
শিশুর সারল্য ফেলে আর বড়ো হতে চান না!
আমি এক সাধারণ জীবনের অপটু ঝুলন কর্মী
আপাতত কল্কে ফুলের নীচে
অপরাজিত শৈশব নদীর ওমে এক ডুব দিয়েই
ফিরে আসছি, সীজার আর ব্রুটাস দ্বৈরথ।
মধ্যবর্তী
হয় এদিক নয় ওদিক,
বেছে নিতে ব্যর্থ হলে দু’দিকের মন-ই হারাবো।
কীভাবে মধ্যবর্তী সুখের দুই ডানা
সমান ছড়াবো কিংবা গোটাবো, তথাগত!
নির্লিপ্ত শবের কোনও নিজস্ব ইচ্ছে থাকে না।
হ্যাঁ এবং না-এর ঠিক মাঝামাঝি
মনহীন জীবন্ত পাথরই হাঁটতে পারে,
পৃথিবীর কোনও শুদ্ধ সন্ন্যাসীও না।
সম্ভাবনার অসম্মতির আঁধার ছেড়ে
সম্মতি -আলোকে দুলতে চায় লতা।
সাগরের অপত্য স্নেহ নাকি ঋতুমতী বৃষ্টির প্রেম!
পাহাড়ের খাঁজে মাটির উর্বরতা বিষয়ক প্রশ্নের
চটপট উত্তরে দায়িত্ববান ভরপুর মেঘের নিঃস্বতা।
নদী তো নিরপেক্ষ নয় মোটেই
দীর্ঘ দু’কূলের বিভিন্ন দৃশ্যই প্রমাণ।
দু’নৌকোয় পা দেয় যারা
তারা বেশি দূর এগোতে পারে না।
মায়া মেয়ে ও ব্যারিকেড
এমন কী টান জিইয়ে দিলে
মর্মে মায়া মেয়ে,
তোমার নেশায় মহুল এ-মন
নিচ্ছে কলম খেয়ে!
কেমন করে বুনবো নদী
সর্বজনীন জলে!
ব্যক্তি প্রেমে পাগল হলে
বর্ণ -বাইচ চলে!
ম্যাজিক তোমার মোহন মুখে
ভুলিয়ে দিচ্ছে ভাষা,
শব্দ ছাড়া রুখতে পারি
রাজনৈতিক পাশা!
যুদ্ধ বেচে চাইছে বনিক
মুনাফা হোক ভোটে,
লিখতে গিয়ে দশের কথা
হারিয়ে যাচ্ছি ঠোঁটে।
আজকে নিঝুম নিশাসই নিই
এককগন্ধী মেয়ে,
কাল ব্যারিকেড গড়বো সরব
আখর অস্ত্রে ছেয়ে।
প্রেমের বয়স বাড়ে না
ডাগর ডাহুকী প্রেমে মিশে আছি নীল জ্যোৎস্নায়
পৃথিবীর যত সুজলা রাধিকা জল
আমার হ্লাদিনী নাভির নদীতে খেলা করে।
আমি থিতু আছি পুং-কেশর বাগানে, মৌরাণী।
এ সময় সাংসারিক সলতের ফসল জ্বরে
উসকে দিও না।
‘কুসুম’ এর দাউদাউ শরীরের মন ঠান্ডা হয়ে
বাপের বাড়িতে এসেও
তার বিজন বিষাদ ভোরে ‘শশী’র সূর্য ওঠা
ঠেকাতে পেরেছে!
তিতাস শুকিয়ে গেলেও ‘বাসন্তী’ ঢেউয়ে
‘অদ্বৈত’, ‘উৎপল ‘ আর ‘ঋত্বিক’ স্রোত বহমান।
‘রাজলক্ষ্মী’র বৈঁচি – রেণু টানে’ ‘শ্রীকান্ত ‘- ডানার মতো
আমারও মজ্জা প্রেমের হাড়েমাসে বয়স বাড়ে না।
কুসুম ও শশী— পুতুল নাচের ইতিকথা’র চরিত্র
বাসন্তী–তিতাস একটি নদীর নামে’র চরিত্র
অদ্বৈত মল্লবর্মণের লেখা তিতাস
নাটক এবং সিনেমা করেছেন যথাক্রমে
উৎপল দত্ত ও ঋত্বিক ঘটক।
শেকড় সুখে শীষের ঝিকিমিকি
পাথর শোকের স্থবির গুহা গলে’
আবার হবে ক্ষিপ্র খরস্রোতা,
এই আশাতেই অনড় ঈগল ডানায়
আকাশ-পোরা দিগন্ত-বীজ পোঁতা।
ব্যক্তি বিষাদ জমিয়ে তুষের মতো
আর কতো টন পুড়বে ধিকিধিকি?
হোক পুরোনো উপমা, অক্ষত
শেকড় সুখে শীষের ঝিকিমিকি।
যাপন মানে চিৎ সাঁতারই শুধু!
ডুব সাঁতারে বন্ধ দমের ভয়
কাটিয়ে ওঠাই জীবন জিনের ঋত
সময় গুরু হাত বাড়ালেই জয়।
আসবে সময় পক্ষীরাজে চড়ে
রূপকথা নয়, জাতক তিতিক্ষায়,
চক্র ঘোরে নিত্য জন্ম ক্ষেতে
আঁশ ছাড়ালেই, আসল প্রতীক্ষায়।
অপূর্ণ প্রেমের কবিতা
তুমি নিবিড় তাকালে এক ঝিরিঝিরি দৃষ্টিনদীর
জন্ম হয় আমার উজান উপত্যকায়।
ছড়ানো ছিটানো গোধূলি পাখনার পড়তি ছায়াদের
একঘর নিয়ে উঠি উঠতি রোদের বাগানে।
আশ্চর্য ভাবনার মিলে তুমিও তোমার কল্প-পালকির
প্রজাপতি পর্দা ঈষৎ ফাঁক করে টুকি দিয়ে বলো
–এবার কিশোর মেঘের দোলনা দুলিয়ে দাও
ঊষসী সূর্যের ডালে আবডালে,
আমি কিশোরী বৃষ্টির বেসামাল বিনুনি হতে চাই।
বয়সী সময়ের শরীর ছোট হতে হতে
আবারও ব্রজের বনে আমাদের হাতে হাতে
অনাদি রাস দৃশ্যের যৌবন ইচ্ছে জোগায়।
তুমি আমি একসাথে তমালের পাতে পাতে
অপূর্ণ প্রেমের কবিতা পেতে যাই।
🍁অঙ্কন : প্রীতি দেব ও আন্তর্জালিক
এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com
বি: দ্র: সমস্ত লেখা লেখকের নিজস্ব। দায় লেখকের নিজস্ব। কোনও বিতর্কিত বিষয় হলে সংবাদ সংস্থা কোনওভাবেই দায়ী থাকবে না এবং সমর্থন করে না। কোনও আইনি জটিলতায় সাশ্রয় নিউজ চ্যানেল থাকে না। লেখক লেখিকা প্রত্যেকেই লেখার প্রতি দ্বায়িত্ববান হয়ে উঠুন। লেখা নির্বাচনে (মনোনয়ন ও অমনোনয়ন) সম্পাদকমণ্ডলীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
