



সাশ্রয় নিউজ ★ নয়াদিল্লি: ইউরোপের আকাশে এবার উড়তে চলেছে ভারতীয় ড্রোন প্রযুক্তির নতুন ডানা। দেশের শীর্ষস্থানীয় ড্রোন প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সংস্থা ড্রোন ডেস্টিনেশন (Drone Destination) ঘোষণা করেছে যে, তারা ইউরোপের প্রথম সাবসিডিয়ারি চালু করতে চলেছে সাইপ্রাসে। এর লক্ষ্য ইউরোপীয় বাজারে ড্রোন উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, পরিষেবা এবং এমনকি ড্রোন স্পোর্টসের বিস্তার ঘটানো। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (PM Narendra Modi) সাম্প্রতিক সাইপ্রাস সফরের সময় এই ঘোষণা আনুষ্ঠানিকভাবে করা হয়।ড্রোন ডেস্টিনেশনের সাইপ্রাস-অভিযান নিছক একটি ব্যবসায়িক পদক্ষেপ নয়, এটি ভারতের ‘ড্রোন হাব’ হয়ে ওঠার স্বপ্নকে ইউরোপে প্রতিষ্ঠা করার এক কৌশলগত অগ্রগতি। সংস্থার চেয়ারম্যান আলোক শর্মা (Alok Sharma) এক বিবৃতিতে বলেন, “ড্রোন পরিষেবা ও পাইলট প্রশিক্ষণে ভারতের বাস্তব অভিজ্ঞতা এবার ইউরোপীয় অঞ্চলেও কাজে লাগবে। সাইপ্রাসের কৌশলগত অবস্থান, আইপি সুরক্ষা ও স্পষ্ট নীতির সঙ্গে ভারতের উদ্ভাবনী শক্তি ও পরিসর মিলিয়ে আমরা এক আন্তর্জাতিক কেন্দ্র গড়ে তুলতে চাই।”
ভারতের পক্ষ থেকে সাইপ্রাসে নিযুক্ত হাই কমিশনার মনীশ (Manish) এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “ড্রোন প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো ভবিষ্যতমুখী খাতে সাইপ্রাসে ভারতীয় বিনিয়োগ আমরা উৎসাহিত করি। প্রধানমন্ত্রীর ‘ড্রোন হাব ২০৩০’-র যে দৃষ্টিভঙ্গি, সেটির একটি আন্তর্জাতিক দিগন্ত খুলে দিতে পারে সাইপ্রাস। ড্রোন ডেস্টিনেশনের এই সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে যে, দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রসারে ভারতীয় সংস্থাগুলি কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, ড্রোন প্রযুক্তি আজ শুধু প্রতিরক্ষা নয়, কৃষি, পরিকাঠামো পর্যবেক্ষণ, পরিবেশ নজরদারি, STEM শিক্ষা, এমনকী বিনোদন খাতেও বিপ্লব ঘটাচ্ছে। সেই প্রসঙ্গে ইনভেস্ট সাইপ্রাস (Invest Cyprus)-এর সিইও মারিওস টানুসিস (Marios Tannousis) বলেন, “ড্রোন ডেস্টিনেশন যে নিরাপদ, স্বাধীন ও উদ্ভাবন-নির্ভর ড্রোন হাব তৈরি করতে চায়, তা শুধু সাইপ্রাস নয়, গোটা ইউরোপ এবং বিশ্বস্ত অংশীদারদের জন্যও দৃষ্টান্ত হতে পারে।” ড্রোন ডেস্টিনেশন জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই তারা সাইপ্রাসের সরকারি ও বেসরকারি খাতের সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি অত্যাধুনিক ড্রোন একোসিস্টেম গড়ে তোলাই তাদের লক্ষ্য। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সাইপ্রাসে প্রবেশ করবে বিদেশি বিনিয়োগ, তৈরি হবে দেশের নিজস্ব ক্ষমতা এবং গোটা অঞ্চলটিই এক আন্তর্জাতিক উদ্ভাবনী কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে। এই পদক্ষেপ যে শুধুমাত্র ড্রোন প্রযুক্তিকে এগিয়ে দেবে তা নয়, এটি ভারত ও সাইপ্রাসের কৌশলগত সহযোগিতার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার মতো অঞ্চলে ভারতীয় প্রযুক্তির প্রবেশদ্বার হিসেবে সাইপ্রাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে ড্রোনের বহুল ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছেন। কৃষিক্ষেত্র থেকে স্বাস্থ্য পরিষেবা, নির্মাণ থেকে জরুরি পরিষেবা, সব ক্ষেত্রেই ড্রোনকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে ভারত এক নতুন প্রযুক্তি বিপ্লবের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। এই পটভূমিতে সাইপ্রাসে ড্রোন ডেস্টিনেশনের আন্তর্জাতিক প্রসার, ভারতের প্রযুক্তিগত আত্মবিশ্বাস ও ভবিষ্যত দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিফলন।বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপের মতো একটি উচ্চ প্রতিযোগিতামূলক ও নিয়ন্ত্রিত বাজারে সাইপ্রাসের মাধ্যমে প্রবেশ করে ড্রোন ডেস্টিনেশন যদি সফলভাবে প্রযুক্তি, শিক্ষা ও পরিষেবার মেলবন্ধন ঘটাতে পারে। তবে তা ভারতীয় ড্রোন শিল্পের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হয়ে থাকবে। এই ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও সাইপ্রাসের দিকে নজর বাড়ছে। কারণ, একদিকে ভারতের শক্তিশালী প্রযুক্তি ও জনবল, অন্যদিকে সাইপ্রাসের মুক্ত বাজারনীতি ও ইউরোপের প্রবেশদ্বার, এই সংযোগ এক নতুন সম্ভাবনার সূচনা করছে। সার্বিকভাবে, ড্রোন ডেস্টিনেশনের এই পদক্ষেপ শুধু একটি সংস্থার ইউরোপে প্রবেশ নয়, বরং ভারতীয় প্রযুক্তির গ্লোবাল রূপান্তরের পথে এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। যার আকাশ এখন ইউরোপ থেকে আরও অনেক দূর পর্যন্ত প্রসারিত হতে চলেছে।
ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন : PM Narendra Modi | G7 Summit, Canada : সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের বার্তা, কানাডা সফর শেষে মোদীর দৃঢ় অবস্থান
