



সাশ্রয় নিউজ ★ বিনীত শর্মা, নতুন দিল্লি : কাশ্মীরের সঙ্গে গোটা ভারতের যোগাযোগে আরও এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। চন্দ্রভাগা (Chenab) নদীর উপর নির্মিত হল বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলসেতু—অঞ্জী ব্রিজ (Anji Bridge)। সেই সেতুর উদ্বোধন করতেই শুক্রবার জম্মু-কাশ্মীর সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। একই সঙ্গে কাটরা (Katra) থেকে শ্রীনগর (Srinagar) এবং কাশ্মীর থেকে কাটরা পর্যন্ত দু’টি নতুন বন্দে ভারত (Vande Bharat) এক্সপ্রেস ট্রেনের সূচনাও করবেন তিনি। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব (Ashwini Vaishnaw) বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, “প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নই ছিল কাশ্মীরকে দেশের মূল স্রোতের সঙ্গে রেলপথে জুড়ে দেওয়া। আজ তা বাস্তব হল।” তাঁর কথায়, “উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুলা (Udhampur-Srinagar-Baramulla) রেল প্রকল্পের মাধ্যমে ২৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ তৈরি হয়েছে, যার অন্যতম অঙ্গ এই অঞ্জী ব্রিজ।” বিশ্বের সর্বোচ্চ এই রেলসেতু—চেনাব ব্রিজ (Chenab Bridge) চন্দ্রভাগা নদীর উপর অবস্থিত। এর উচ্চতা নদীর পৃষ্ঠ থেকে ৩৫৯ মিটার (১১৭৭.৮২ ফুট)। দৈর্ঘ্য ১.৩১৫ কিলোমিটার। নির্মাণ ব্যয় ১৪০০ কোটি টাকারও বেশি। ট্রেন এই সেতুর উপর দিয়ে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে। রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পেও টলবে না এই স্টিল-আর্ক ব্রিজ, যা আগামী ১২০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকবে বলে জানিয়েছে নির্মাণকারী সংস্থা কনস্ট্রাকশন ইন্ডিয়া লিমিটেড।
উল্লেখযোগ্য ভাবে, জম্মু-কাশ্মীরের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর এই সফর আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে। গত ২২ এপ্রিল, পহেলগাঁও (Pahalgam) এলাকায় একটি ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারান ২৬ জন নিরাপত্তাকর্মী। সেই হামলার প্রত্যুত্তরে ভারত চালায় ‘অপারেশন সিঁদুর’। সেই অভিযানে একাধিক পাক জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। তার পর টানা চার দিন ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা চলে, যা শেষ হয় ১০ মে দুই পক্ষের যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তে। এই আবহে মোদীর কাশ্মীর সফর শুধুমাত্র অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিক থেকেই নয়, কৌশলগত এবং রাজনৈতিক অর্থেও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ্লেষকদের মতে, “অঞ্জী ব্রিজ বা বন্দে ভারত ট্রেনের সূচনা শুধু উন্নয়নের বার্তা নয়, এটি একটি প্রতীক—কাশ্মীর যে ক্রমে স্থিতিশীলতা এবং সম্পৃক্তির পথে এগোচ্ছে।” প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় কাটরা থেকেই উদ্বোধন করা হবে প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র, জল পরিশোধন প্রকল্প, সড়ক নির্মাণ, হেলিপ্যাড, আধুনিক হাসপাতাল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বৈষ্ণো দেবী মন্দিরের প্রবেশপথ হিসেবে পরিচিত কাটরা এখন ক্রমেই আধুনিক ‘রেল হাব’-এ পরিণত হচ্ছে। রেলমন্ত্রী বলেন, “যে ভাবে এই প্রকল্পগুলি রূপ পেয়েছে, তা প্রমাণ করে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কাশ্মীর শুধু এক ভূখণ্ড নয়, ভারতীয় উন্নয়নযাত্রার অন্যতম চালিকাশক্তি।”
কাশ্মীরবাসীদের জন্য এই ব্রিজ শুধু এক অবকাঠামো নয়, একটি আশা। অনেকের কথায়, “চেনাব ব্রিজ যেন এক সেতু, যা আমাদের দেশের মূল হৃদপিণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছে।” শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্বোধন ও ঘোষণাগুলি কেবলমাত্র এক দিনের আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং কাশ্মীরের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত স্বপ্নপূরণের দিন হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Elon Musk : ‘ঋণের দাসত্ব নয়!’ ট্রাম্পের বিল বাতিলের ডাক ইলন মাস্কের
