PM Modi Pinarayi Vijayan Meeting | কেরালার মুখ্যমন্ত্রীর নয়াদিল্লি মিশন: রাজ্যের আর্থিক সুরক্ষা ও উন্নয়নের গতি বাড়াতে মোদীর হস্তক্ষেপ কামনা, বার্তা : ‘কেন্দ্র-রাজ্য সহযোগিতাই জাতীয় স্বার্থের পথ’

SHARE:

বিনীত শর্মা, সাশ্রয় নিউজ ডেস্ক ★ নয়াদিল্লি, ১০ অক্টোবর, ২০২৫: দেশের আর্থিক ভারসাম্যের টানাপোড়েনের মধ্যেই কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন (Pinarayi Vijayan) আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) -এর সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক সেরে দিলেন। বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল কেরালার আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির গতি বাড়ানো এবং সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলির পুনর্বাসনের জন্য কেন্দ্রীয় সহায়তা নিশ্চিত করা। বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী একথা জানান যে, রাজ্য ও কেন্দ্র, উভয়ই এখন ‘জাতীয় উন্নয়ন ও জনকল্যাণের স্বার্থে নিরন্তর উৎপাদনশীল সম্পৃক্ততায়’ থাকবে।

পিনারাই বিজয়ন বলেন, ‘উত্থান-পতন থাকতে পারে। কিন্তু সম্পর্ক উন্মুক্ত এবং দৃঢ় থাকবে। এক পক্ষের অন্য পক্ষকে বন্ধ করে দেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। কেরালা কেন্দ্রের কাছে তার চাহিদা তুলে ধরতে থাকবে। রাজ্য কখনও আশা হারায় না।’
এই মন্তব্যে স্পষ্ট, মুখ্যমন্ত্রী রাজনৈতিক পার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে বাস্তববাদী অবস্থান নিতে চেয়েছেন, বিশেষত যখন রাজ্যের অর্থনৈতিক ঘাটতি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন নতুন দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করে রাজ্যের আর্থিক স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন এবং দুর্যোগ পুনর্বাসনের জন্য কেন্দ্রের সহায়তা চেয়েছেন। আলোচনায় উঠে এসেছে GSDP ঋণসীমা, এনডিআরএফ অনুদান ও কোঝিকোড়ে AIIMS দাবির বিষয়।
নরেন্দ্র মোদী ও পিনারাই বিজয়ন। ছবি : সংগৃহীত

কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের আবেদন ও আর্থিক সঙ্কটের বিশ্লেষণ

কেরালার মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন রাজ্যের ক্রমবর্ধমান আর্থিক সংকটের বিষয়টি। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, রাজ্যের ঋণসীমা হ্রাস করার সিদ্ধান্তের ফলে অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য তহবিল সংগ্রহ কঠিন হয়ে পড়েছে। কেরালা সরকারের দাবি, বাজেট-বহির্ভূত ঋণ, যেমন কেরালা ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড বোর্ড (KIIFB) -এর প্রকল্প ঋণ, রাজ্যের মোট সরকারি ঋণের অংশ হিসেবে গণনা করা উচিত নয়। বিজয়ন প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন, ‘কেরালার ঋণের সীমা রাজ্যের মোট দেশজ উৎপাদনের (GSDP) ০.৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হোক। এতে রাজ্য পুনরায় অবকাঠামোগত প্রকল্পে বিনিয়োগের সুযোগ পাবে।’ তাঁর এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে বিজয়ন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, দক্ষিণের রাজ্যগুলি ক্রমশই কেন্দ্রীয় আর্থিক নীতির সীমাবদ্ধতার মধ্যে পড়ছে, যা তাদের উন্নয়ন পরিকল্পনাকে ব্যাহত করছে।

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সহায়তার আবেদন

কেরালার মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দেন, সাম্প্রতিক ওয়ানাড় (Wayanad) জেলার মুন্ডাকাই (Mundakkai) ও চুরলমালা (Chooralmala) এলাকায় ভয়াবহ ভূমিধসের পর রাজ্য সরকার এনডিআরএফ (NDRF) -এর কাছে ২,২২১.০৩ কোটি টাকার অনুদান চেয়েছিল। বিজয়ন বলেন, ‘আমি মিঃ মোদীকে অনুরোধ করেছি যে এই অর্থকে এককালীন সাহায্য হিসেবে বিবেচনা করুন, ঋণ হিসেবে নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুধু কেরালার সমস্যা নয়, এটি জাতীয় সমস্যা। আমাদের প্রতিটি রাজ্যই জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই কেন্দ্রের সাহায্য এই মুহূর্তে শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, এটি এক প্রকার জাতীয় সংহতির প্রতীক।’

কেন্দ্রের বরাদ্দ হ্রাস ও রাজ্যের ক্ষোভ

কেলার মুখ্যমন্ত্রী জানান, কেন্দ্র কেরালার জন্য বরাদ্দকৃত কর-অংশ এবং অন্যান্য অনুদানের পরিমাণ সম্প্রতি কমিয়েছে। এর ফলে রাজ্যের উন্নয়ন প্রকল্পগুলিতে তহবিলের অভাব তৈরি হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, ‘কেরালার অংশ করের বিভাজ্য পুল থেকে কমানো হয়েছে, যা আর্থিক যুক্তরাষ্ট্রীয়তার চেতনার পরিপন্থী।’ তিনি আরও অনুরোধ করেন, জাতীয় মহাসড়ক প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের ২৫ শতাংশ খরচ রাজ্য সরকারকে বহন করতে হয়, কিন্তু কেরালার মতো রাজ্যে জমির মূল্য অত্যন্ত বেশি। তাই কেন্দ্র যেন এই বোঝা থেকে রাজ্যকে মুক্তি দেয়।

কোঝিকোড়ে এইমস (AIIMS) দাবি পুনরায় উত্থাপন

বিজয়ন বৈঠকে কোঝিকোড়ের কিনালুরে (Kinalur) রাজ্য নির্ধারিত জমিতে একটি সর্বভারতীয় আয়ুর্বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান (AIIMS) স্থাপনের দাবি পুনরায় উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘কেরালার উত্তরাঞ্চলে উচ্চমানের চিকিৎসা অবকাঠামোর অভাব রয়েছে। কোঝিকোড়ে AIIMS হলে শুধু কেরালাই নয়, গোটা দক্ষিণ ভারতের মানুষ উপকৃত হবেন।’ তিনি প্রধানমন্ত্রীকে আরও জানান, কেরালা এখন দ্রুত নগরায়নের পথে। সেই কারণে রাজ্যে একটি “জাতীয় পরিকল্পনা ও স্থাপত্য বিদ্যালয় (National School of Planning and Architecture)’ গঠনের প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতের নগর পরিকাঠামো আরও বৈজ্ঞানিকভাবে গড়ে তোলা যায়।

আরও পড়ুন : Modi Trump call, Gaza peace plan, Modi X post | মোদী টুইটে বললেন: ‘Gaza peace plan সাফল্য, ট্রেড আলোচনায় অগ্রগতি’ 

রাজ্যের পাওনা ও কেন্দ্রীয় দায়বদ্ধতা

কেরালা মুখ্যমন্ত্রী মোদীকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, ধান সংগ্রহে ভর্তুকি বাবদ কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের ২২১.৫ কোটি টাকা এবং ‘পরিবহন খরচ’ -এর জন্য আরও ২৫৪ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘রাজ্য সরকার কৃষকদের পাওনা পরিশোধ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু কেন্দ্র যদি তার দায় পূরণ না করে, তাহলে কৃষকদের আর্থিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।’ তাঁর এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা নীতির প্রতি কেরালার হতাশা প্রকাশ করেন।

উন্নয়নের বৃহত্তর বার্তা: সহযোগিতাই সমাধান

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে একটি স্পষ্ট বার্তা উঠে আসে, রাজনৈতিক মতাদর্শের পার্থক্য সত্ত্বেও কেন্দ্র ও রাজ্যকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘ত্রাণ, আর্থিক যুক্তরাষ্ট্রীয়তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষাগত সমতা, খাদ্য নিরাপত্তা এবং টেকসই নগর উন্নয়ন, এগুলি ভারতের জাতীয় লক্ষ্যের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।’ এ বক্তব্যের রাজনৈতিক তাৎপর্যও রয়েছে। একদিকে কেন্দ্রের সঙ্গে নরম কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখে কেরালার দাবি জোরদার করা, অন্যদিকে দক্ষিণ ভারতের অন্যান্য রাজ্য, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক ও তেলেঙ্গানার মতো  আর্থিক বৈষম্যের প্রশ্নে এক ধরনের একাত্মতা গড়ে তোলা।

রাজনৈতিক পটভূমি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

পিনারাই বিজয়ন, ভারতের অন্যতম প্রবীণ বাম নেতা, অতীতে বারবার কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির সমালোচনা করেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর কূটনৈতিক ভঙ্গি বদলেছে। বিশেষ করে রাজ্যের আর্থিক চাপ ও দুর্যোগ-পরবর্তী পুনর্গঠনের চাপে বিজয়ন এখন সমঝোতার পথে হাঁটছেন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই বৈঠক শুধু আর্থিক সহযোগিতা নয়, বরং কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের ভবিষ্যৎ রূপরেখা নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, ‘বিজয়নের এই সফর কেরালার অর্থনীতি ও রাজনীতির জন্য টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। এটি একটি নতুন বাম বাস্তববাদ, যেখানে আদর্শের সঙ্গে বাস্তবতার মেলবন্ধন ঘটছে।’ এছাড়াও, এই সাক্ষাৎ ভারতীয় রাজনীতির নতুন দিক নির্দেশ করে, যেখানে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিও উন্নয়নের স্বার্থে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনার পথ বেছে নিচ্ছে, সংঘাত নয়। কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই বৈঠক ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় রাজনীতিতে এক ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। আর্থিক সহায়তা, দুর্যোগ পুনর্বাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কেন্দ্রের ভূমিকা পুনর্বিবেচনা করার দাবি কেবল কেরালার নয়, গোটা দেশের উন্নয়নচিন্তার অংশ। উল্লেখ্য, বিজয়নের বক্তব্য যেমন বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়িয়ে তৈরি, তেমনি তা রাজনৈতিক পরিণতিও নির্দেশ করে, ভারত আজ এমন এক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্রান্তিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে সহযোগিতাই একমাত্র পথ।

ছবি : সংগৃহীত

আরও পড়ুন : GST 2.0, PM Modi Double Dose, GST Reforms 2025 | জিএসটি সংস্কার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দাবি: ‘ভারতের উন্নয়নে ডাবল ডোজ’

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment

আরো পড়ুন