শর্মিষ্ঠা সাহা মৈত্র ★ সাশ্রয় নিউজ ডেস্ক, কলকাতা : মুক্তো (Pearl) নামেই আছে শান্তি ও সৌন্দর্যের ইঙ্গিত। সমুদ্রের গভীরে জন্ম নেওয়া এই রত্নকে যুগ যুগ ধরে ‘মন শান্তির প্রতীক’ বলা হয়। প্রাচীনকাল থেকেই জ্যোতিষশাস্ত্রে (Astrology) মুক্তোর (Moti) সঙ্গে চাঁদের (Moon) এক গভীর সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়। শাস্ত্রমতে, চাঁদ নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের মস্তিষ্ক, আবেগ ও মানসিক ভারসাম্য। তাই যাঁদের জন্মছকে চন্দ্র দুর্বল, তাঁদের মুক্তো পরার পরামর্শ দেন জ্যোতিষীরা। মুক্তোর শীতল প্রভাব মনকে স্থিতি এনে দেয়, এমনটাই বলা হয়। কিন্তু এই শুভ প্রভাব সব রাশির ক্ষেত্রে সমান নয়। কিন্তু, কিছু রাশির জন্য মুক্তো হতে পারে বিপদের কারণও!
জ্যোতিষশাস্ত্র জানায়, কোনও রত্নই অন্ধভাবে ধারণ করা উচিত নয়। কারণ প্রতিটি রত্নের সঙ্গে জড়িত থাকে গ্রহের শক্তি। ভুল রত্ন ধারণ করলে সেই শক্তি উলটো প্রভাব ফেলতে পারে জীবনে, মানসিক অস্থিরতা থেকে শুরু করে আর্থিক ক্ষতি পর্যন্ত। তাই মুক্তো পরার আগে জেনে নিন, আপনার রাশির জন্য এই শুভ মুক্তো কতটা সত্যিই শুভ! যে চার রাশির জন্য মুক্তো সৌভাগ্য বয়ে আনে:

মেষ (Aries): রাশিচক্রের প্রথম রাশি মেষের চতুর্থ ঘরের অধিপতি হল চন্দ্র। এই ঘর নির্দেশ করে বাড়ি, জমি, গাড়ি ও বস্তুগত সুখ। তাই মেষ রাশির জাতকদের জন্য মুক্তো অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। মুক্তোর ইতিবাচক প্রভাবে এঁরা জীবনযাত্রায় বিলাসিতা ও আরাম উপভোগ করেন। এক জ্যোতিষ বিশেষজ্ঞের ভাষায়, ‘মুক্তোর শক্তি মেষ রাশির আগুনে প্রকৃতিকে ঠান্ডা করে, জীবনে স্থিরতা আনে।’
>কর্কট (Cancer): চাঁদ হল কর্কট রাশির অধিপতি। তাই এই রাশির জাতক-জাতিকাদের মুক্তো ধারণ করলে মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধি পায়, উদ্বেগ কমে, আর্থিক উন্নতিও ঘটে। কর্কট রাশির মানুষ সাধারণত সংবেদনশীল হয়, তাই মুক্তোর ঠাণ্ডা প্রভাব তাঁদের মনকে ভারসাম্য এনে দেয়। অনেক জ্যোতিষী পরামর্শ দেন, কর্কট রাশির জাতকরা যদি রূপার আঙুলিতে মুক্তো পরেন, তাতে ফল আরও শুভ হয়।
আরও পড়ুন : Diwali Candles | দীপাবলির ঝলমলে বাজারে দুলছে লাড্ডু-মোমবাতি, রসমালাই-জিলিপি আকারের রঙিন আলোর খেলা
তুলা (Libra): তুলা রাশির দশম ঘরের অধিপতি চন্দ্র। এই ঘর নির্দেশ করে কর্মজীবন ও সাফল্য। তাই তুলা রাশির মানুষের জন্য মুক্তো কর্মক্ষেত্রে উন্নতি এনে দিতে পারে। মুক্তো তাঁদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমায়। কর্মজীবনের ওঠানামা সামলাতে তুলা রাশির জাতকদের মুক্তো যথেষ্ট সহায়ক হতে পারে।
>মীন (Pisces): চন্দ্র মীন রাশির পঞ্চম ঘরের অধিপতি, যা শিক্ষা, প্রেম ও সন্তান-ভাগ্যের সঙ্গে যুক্ত। মুক্তো পরলে এই রাশির মানুষ মানসিক শান্তি ও সৃজনশীলতায় উন্নতি অনুভব করেন। জ্যোতিষীদের মতে, মুক্তো মীন রাশির অন্তর্দৃষ্টি শক্তি ও কল্পনাশক্তিকে বাড়িয়ে তোলে, ফলে তাঁদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে।

যে রাশিগুলির জন্য মুক্তো বিপরীত ফল দেয়:
>বৃষ (Taurus): মুক্তো বৃষ রাশির সঙ্গে ভালভাবে মানিয়ে নেয় না। এই রত্ন পরলে ভাইবোন বা পরিবারের মধ্যে অশান্তি দেখা দিতে পারে বলে ধারণা। বৃষ রাশির জাতকদের মুক্তো ধারণের আগে বিশেষ সতর্ক থাকা উচিত।
>মিথুন (Gemini): মুক্তো মিথুন রাশির জাতকদের মানসিক অস্থিরতা বাড়িয়ে দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই মুক্তোর শক্তি এঁদের চিন্তাশক্তিকে বিভ্রান্ত করে দেয়, ফলে জীবনে স্থিরতা হারায়। শারীরিক দিক থেকেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
>সিংহ (Leo): এই রাশির অধিপতি সূর্য (Sun)। আর চাঁদ ও সূর্য একে অপরের বিপরীত প্রকৃতির। তাই সিংহ রাশির জাতকরা মুক্তো পরলে আর্থিক ক্ষতি বা আত্মবিশ্বাসে ভাটা পড়তে পারে। জ্যোতিষীদের মতে, এই রাশি বরং মাণিক (Ruby) ধারণ করলে শুভ ফল পেতে পারে।
>কন্যা (Virgo): কন্যা রাশির ব্যক্তিদের জন্য মুক্তো দুইধারী তলোয়ার। একদিকে অর্থভাগ্যে উন্নতি আনতে পারে, আবার অন্যদিকে মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। তাই কন্যা রাশির জাতকদের মুক্তো না পরাই বুদ্ধিমানের কাজ।
>বৃশ্চিক (Scorpio): বৃশ্চিক রাশিতে চন্দ্র দুর্বল থাকে। তাই মুক্তো পরলে উলটো প্রভাব দেখা দিতে পারে, অস্থিরতা, উদ্বেগ বা হঠাৎ সিদ্ধান্তের প্রবণতা বাড়ে। যদি খুব প্রয়োজন হয়, তবে জ্যোতিষীর পরামর্শে মুক্তোর সঙ্গে চন্দ্রযন্ত্র ধারণ করতে হবে।
>ধনু (Sagittarius): এই রাশির জাতকদের জন্য মুক্তো মানসিক অশান্তি বয়ে আনে। মুক্তো পরলে ঘুমের সমস্যা, উদ্বেগ বা বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে। তাই ধনু রাশির ব্যক্তিদের এই রত্ন থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।

>মকর (Capricorn): মকর রাশির ব্যক্তিদের মধ্যে মুক্তো নেগেটিভ চিন্তা ও হতাশার ভাব বাড়িয়ে তোলে। ফলে জীবনে সাফল্যের পথে বাধা আসে।
>কুম্ভ (Aquarius): মুক্তোধারণে কুম্ভ রাশির ব্যক্তির শারীরিক অসুস্থতা ও মানসিক চাপ বাড়তে পারে। তাই এই রাশির মানুষের মুক্তো পরা এড়িয়ে চলা উচিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘রত্নের শক্তি গ্রহের অবস্থার ওপর নির্ভর করে। তাই কোষ্ঠী বিশ্লেষণ ছাড়া কোনও রত্নই পরা উচিত নয়।’ মুক্তো পরার আগে যোগ্য জ্যোতিষীর পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ উপায়। কখনও কখনও রত্নের শুভ নির্ভর করে জন্মপত্রিকার ক্ষুদ্রতম পরিবর্তনের ওপরও। তাই অন্ধভাবে বিশ্বাস না করে, বিজ্ঞ পরামর্শ মেনেই রত্ন ধারণ করুন, তাহলেই জীবনে শান্তি ও উন্নতি সম্ভব।
ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Megan McArthur retirement, NASA astronaut Megan McArthur | মহাকাশ ইতিহাসে নতুন অধ্যায়: স্পেসএক্স ড্রাগন-এর প্রথম নারী পাইলট মেগান ম্যাকআর্থার অবসর নিলেন নাসা থেকে




