



সৌভিক দাস ★ সাশ্রয় নিউজ : বর্ষা মানেই কচি পটল আর টাটকা মাছের ডিমের প্রাচুর্য। এত দিনে ছানা বা চিংড়ির পুর দিয়ে পটলের দোলমা খেয়েছেন নিশ্চয়ই। কিন্তু কখনও কি ভেবেছেন মাছের ডিম দিয়েও তৈরি হতে পারে এক অপূর্ব স্বাদের পটলের দোলমা? হ্যাঁ, রোজকার রান্নার গতানুগতিকতা ভেঙে নতুন কিছু ট্রাই করতে চাইলে এই বিশেষ রেসিপিটি আপনাকে উপহার দিতেই পারে এক অনন্য স্বাদ-অভিজ্ঞতা।

পটল এমনিতেই বাঙালি রান্নাঘরে বহু ব্যবহৃত একটি সবজি। গরম বা বর্ষা, সব ঋতুতেই এটি বাজারে সহজলভ্য। অন্য দিকে, জুন-জুলাই মাসে বাজারে ভরে যায় নানা ধরনের মাছের ডিমে। রুই (Rohu), কাতলা (Catla), বোয়াল (Boal) অথবা মাগুর (Magur)। এই সময়ই মাছের ডিম ব্যবহার করে তৈরি হতে পারে ভিন্নধর্মী পুর, যা পটলের কোমলত্বের সঙ্গে মিশে এক নতুন মাত্রা এনে দেয়। রেসিপির প্রাথমিক ধাপটি খুব সহজ। প্রথমে টাটকা পটলগুলোকে (৫-৬টি) ভালো করে ধুয়ে নিয়ে খোসা সামান্য চেঁছে নিতে হবে। তারপর একদিকে কেটে ভিতরের বীজ বের করে নিতে হবে যত্ন করে। ওই কাটা অংশ ফেলে না দিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে, কারণ সেটিই পরে মুখ বন্ধ করার কাজে লাগবে। এরপর পটলগুলোকে নুন মাখিয়ে সরষের তেলে হালকা ভেজে রাখতে হবে।

এ দিকে পুর তৈরির কাজটাও অত্যন্ত রোমাঞ্চকর। প্রায় ২৫০ গ্রাম মাছের ডিম নিয়ে নিতে হবে। সঙ্গে চারটি বড় পেঁয়াজ (Onion), ১০-১২ কোয়া রসুন (Garlic) বাটা, ২ চামচ আদা (Ginger) বাটা মিশিয়ে কড়াইয়ে তেলে ভেজে নিতে হবে। স্বাদ মতো নুন ও হলুদ (Turmeric), প্রয়োজনে কাঁচালঙ্কা কুচি দিয়ে ঝুরো ঝুরো করে ভেজে নিতে হবে মিশ্রণটি। এটিই হবে দোলমার মূল পুর। পুর ভরে ফেলা হলে, পটলের মুখ বন্ধ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে টুথপিক বা সামান্য ময়দা জল দিয়ে মাখিয়ে তৈরি আঠা। এরপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ দোলমার ঝাল ঝোল বা কাই বানানো।

সাধারণ বাঙালি রান্নার গন্ধ ছাপিয়ে যাবে এই কাইয়ের ঘ্রাণে। কড়াইয়ে সরষের তেল দিয়ে শুকনো লঙ্কা (Dry Red Chili), গোটা দারচিনি (Cinnamon), এলাচ (Cardamom) ফোড়ন দিতে হবে। এরপর কুচি করা ২টি পেঁয়াজ দিয়ে হালকা বাদামি করে ভেজে দিতে হবে। এবার একে একে দিতে হবে আদা-রসুন বাটা, ধনে (Coriander) ও জিরে (Cumin) গুঁড়ো, কাশ্মীরি লঙ্কা (Kashmiri Red Chili Powder) ও স্বাদ মতো নুন। এই মশলা যখন তেল ছাড়তে শুরু করবে, তখন মিশিয়ে দিতে হবে জল ঝরানো টক দই (Curd), চারমগজ বাটা (Melon Seeds Paste) ও কাজু (Cashew) বাটা। আঁচ কমিয়ে ধীরে ধীরে এই মিশ্রণটি ভাল করে কষাতে হবে যতক্ষণ না বাদামের কাঁচা গন্ধ চলে যায়। এরপর সাবধানে মাছের ডিমের পুর দেওয়া পটলগুলো দিয়ে আবার কয়েক মিনিট কষাতে হবে। তারপর গরম জল ঢেলে ঢেকে দিতে হবে কিছুক্ষণ। জল কমে এসে ঝোল যখন মাখা মাখা হবে, তখন বোঝা যাবে দোলমা তৈরি।

এই পদটির বিশেষত্ব শুধু তার স্বাদেই নয়, তার খাদ্যগুণেও। মাছের ডিমে থাকা উচ্চ প্রোটিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, আর পটলের হালকা ও হজমযোগ্য গঠন মিলিয়ে এটি একটি ভারসাম্যপূর্ণ পদ হয়ে ওঠে। তেলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখলে এটি ডায়েটেও রাখা যায় মাঝেমধ্যে। শুধু রুটি বা পরোটার সঙ্গে নয়, এই দোলমা জমে উঠবে সাদাভাতেও। কোনও অতিথি আপ্যায়নে বা বিশেষ পরিবারের খাবারের মেনুতে এটি হয়ে উঠতে পারে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।সামান্য কষ্ট হলেও এই রেসিপিটি আপনার রান্নাঘরকে উপহার দিতে পারে এক দুর্মূল্য স্বাদের সম্পদ। ছানা বা চিংড়ি নয়, এ বার পটলের দোলমার পুরে থাকুক মাছের ডিমের নরম ঝুরো সঙ্গত। বর্ষার টেবিলে তার জুড়ি মেলা ভার!
ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Mutton recipe | রসুনেই বাজিমাত, পেঁয়াজ ছাড়াই জমজমাট ‘রসুনে রসালা’ খাসির মাংস
