Sasraya News

Paid Hugging in China : অর্থের বিনিময়ে পাঁচ মিনিটের আলিঙ্গন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চিনে 

Listen

স্নিগ্না সান্যাল ★ সাশ্রয় নিউজ : নতুন যুগে গতি যত বেড়েছে, মানুষের মনে ততই জমেছে শূন্যতা। শহরের কোলাহলে, ব্যস্ত জীবনের মোড়কে, অনেকানেক মানুষ আজ নিঃসঙ্গতার ভারে নুয়ে পড়ছে। ছোটবেলায় মায়ের বুকে মাথা রেখে যে শান্তির স্বাদ মিলত, বড় হয়ে সেই আশ্রয়ের খোঁজে যেন সবাই বেরিয়ে পড়েছে। তবে আশ্রয়ের সংজ্ঞা এখন বদলে গিয়েছে। কেউ প্রেমিক-প্রেমিকার ঘনিষ্ঠতায় খোঁজেন শান্তি। কেউ ফিরে যান বাবা-মায়ের কোলে। কিন্তু সব সম্পর্ক তো সহজলভ্য নয়। তাই অনেকেই ইদানীং ভরসা করছেন সম্পূর্ণ অপরিচিত, একেবারে অচেনা মানুষের উপর। শুধু একটুখানি মানসিক বিশ্রাম পেতে। তাও মাত্র পাঁচ মিনিটের (Paid Hugging in China) জন্য।

আলিঙ্গন। -প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র
আলিঙ্গনের মাধ্যমে শুধু আবেগ নয়, শরীরের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হতে পারে বলেই মত গবেষকদের। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত হওয়া, ঘুমের মান ভাল হওয়া, উদ্বেগ ও মানসিক অস্থিরতা কমে আসা সবকিছুই সম্ভব এমন একটুখানি স্পর্শের মাধ্যমে। তা প্রিয়জনের নয় বলেই যে উপকার কম, তা নয়। অচেনা মানুষের শরীরেও লুকিয়ে থাকতে পারে আরামের ছোঁয়া।

চিন (China) দেশের শহরাঞ্চলে এখন এক নতুন ধারার উত্থান হয়েছে। সেখানে মহিলারা ৬০০ টাকা মতো অর্থ ব্যয় করে পাঁচ মিনিটের জন্য অচেনা পুরুষদের আলিঙ্গন করছেন। এমন পুরুষ, যাঁরা ‘ম্যান মাম্‌স’ (Man Mums) নামে পরিচিত। অর্থাৎ এমন এক ধরনের পুরুষ, যাঁদের শরীর যেমন পেশিবহুল, তেমন মনও নরম, সংবেদনশীল। আগে এই উপাধি মিলত শরীরচর্চায় ব্যস্ত পুরুষদের। এখন তার সঙ্গে আবেগ ও কোমলতার সমীকরণও জুড়েছে। এই পদ্ধতিও বেশ অদ্ভুত। অনলাইন চ্যাটিং অ্যাপের মাধ্যমে নির্ধারিত হয় আলিঙ্গনের সময় ও স্থান। কোনও রেস্তোরাঁ নয়, কোনও নির্জন জায়গা নয়, বরং শপিং মল কিংবা ব্যস্ত মেট্রো স্টেশনের মতো জায়গাতেই দেখা হয় ‘ম্যান মাম্‌স’ ও গ্রাহকের। সেখানে সামান্য কিছু কথাবার্তা, তারপর দু’জন দাঁড়িয়ে থাকেন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। মাত্র পাঁচ মিনিট। যেন কয়েক মুহূর্তের জন্য কোনও অদৃশ্য বোঝা ফেলে রাখা যায় অন্য কারও কাঁধে।

চিনে মহিলারা কিনে নিচ্ছেন পাঁচ মিনিটের আলিঙ্গন। -প্রতীকী চিত্র

সম্প্রতি চিনের এক ছাত্রী সমাজমাধ্যমে প্রকাশ্যে জানান, তিনি এমন এক আলিঙ্গনের খোঁজে রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার চাপ সহ্য করতে না পেরে তাঁর মনে হয়েছে, কোনও অচেনা ব্যক্তির শরীরের উষ্ণতায় সামান্য আরাম মিলতে পারে। স্কুলজীবনেও একবার তাঁর এমন অভিজ্ঞতা হয়েছিল। এবং সেটা এতটাই ভাল লেগেছিল যে আবার ফিরে যেতে চাইছেন সেই অনুভবের কাছে। ছাত্রীর ওই পোস্ট ঘিরে সমাজমাধ্যমে শুরু হয় তীব্র বিতর্ক।

চিনা মহিলাদের নতুন ট্রেন্ড অর্থের বিনিময়ে আলিঙ্গন। -প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

তবে সেখানে বহু মহিলা নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করে জানান, তাঁরা এই পরিষেবায় মানসিক শান্তি পেয়েছেন। এক মহিলা জানান, তিনি একদিন কর্মস্থলে টানা তিন ঘণ্টা অতিরিক্ত কাজ করার পর এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন যে আর নিজেকে সামলাতে পারছিলেন না। ঠিক তখনই তিনি ‘ম্যান মাম্‌’ নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তিন মিনিট সময় কাটান, শুধু তাঁকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেই মুহূর্তেই যেন তাঁর মাথা হালকা হয়ে যায়, বুকের মধ্যে জমে থাকা চাপটা খানিকটা হলেও উধাও হয়ে যায়।বৈজ্ঞানিক মতে, এই ধরনের আলিঙ্গন আদতে এক ধরনের মানসিক থেরাপির মতো কাজ করে। ‘কম্প্রিহেনসিভ সাইকোনিউরোএন্ডোক্রাইনোলজ’ (Comprehensive Psychoneuroendocrinology) পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, অপরিচিত ব্যক্তির স্পর্শেও কর্টিসলের মতো স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ কমে, বাড়ে ডোপামাইন বা সুখী হরমোনের প্রভাব। এর ফলে এক ধরনের নিরাপত্তাবোধ ও মানসিক স্বস্তি তৈরি হয়। যা সাময়িক হলেও মনকে শান্ত করে।

-প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

অন্যদিকে, আলিঙ্গনের মাধ্যমে শুধু আবেগ নয়, শরীরের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হতে পারে বলেই মত গবেষকদের। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত হওয়া, ঘুমের মান ভাল হওয়া, উদ্বেগ ও মানসিক অস্থিরতা কমে আসা সবকিছুই সম্ভব এমন একটুখানি স্পর্শের মাধ্যমে। তা প্রিয়জনের নয় বলেই যে উপকার কম, তা নয়। অচেনা মানুষের শরীরেও লুকিয়ে থাকতে পারে আরামের ছোঁয়া। তবে সমস্ত থেরাপির মতো এই পদ্ধতিতেও রয়েছে কিছু সতর্কতা। যেহেতু এখানে জড়িয়ে আছে অচেনা পুরুষ ও একান্ত মুহূর্তের সংযোগ, তাই আত্মরক্ষার দিকটি মাথায় রেখেই নিতে হবে সিদ্ধান্ত। বিশ্বাসযোগ্য অ্যাপ, নিরাপদ জায়গা ও বিশ্বস্ত ব্যক্তির সঙ্গেই আলিঙ্গনের সময় কাটানোই সেরা।

-প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

ভবিষ্যতের সমাজে যখন একাকিত্ব আরও বাড়বে, তখন হয়ত এ ধরনের মানসিক নির্ভরতা আরও সাধারণ হয়ে উঠবে। হয়ত একদিন শহরের ব্যস্ত রাস্তাতেই দেখা যাবে, দুই অচেনা মানুষ দাঁড়িয়ে রয়েছেন শুধু একটু আরাম পেতে। এক নিঃশ্বাসে কিছুটা ভার নামিয়ে রাখতে। আধুনিক মনস্তত্ত্ব বলছে, এই সংযোগ শুধু প্রয়োজন নয়, বরং এক নতুন সম্পর্কের ভাষা। যেখানে ভালবাসা না থাকলেও থাকতে পারে গভীর সহানুভূতি!
ছবি : সংগৃহীত ও প্রতিনিধিত্বমূলক
আরও পড়ুন : Rinku Singh Priya Saroj Engagement : রিঙ্কু-প্রিয়ার জীবনের নতুন ইনিংস : বাগদানে খুশির আবহ

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment

Also Read