



সানি সরকার ★ সাশ্রয় নিউজ, ব্যাংকক : থাইল্যান্ডের রাজনীতি চরম অনিশ্চয়তার মুখে। প্রধানমন্ত্রী পায়েটোঙ্গটার্ন শিনাবাত্রা (Paetongtarn Shinawatra)-কে সাসপেন্ড করল সে দেশটির সাংবিধানিক আদালত। শিনাবাত্রার বিরুদ্ধে নীতি লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল। ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর প্রতিবেদনে প্রকাশ, আদালত নির্দেশ দেওয়ার সময় জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে তাঁকে পাকাপাকি ভাবেও অপসারণ করা হতে পারে। পুরো বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু একটি ফোন কল। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া অডিওতে শোনা যায়, কম্বোডিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হুন সেন (Hun Sen)-এর সঙ্গে সীমান্তবিরোধ নিয়ে কথা বলছেন শিনাবাত্রা। ওই ফোন কলে হুন সেন-কে ‘আঙ্কল’ বলে সম্বোধন করতেও শোনা যায় তাঁকে বলে খবরে প্রকাশ। যদিও ২০২৩ সালে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়েছেন হুন সেন, তবে এখনও দেশটিতে দেশে তাঁর রাজনৈতিক প্রভাব বিপুল।প্রসঙ্গত, গত মাসেই সীমান্তে সংঘর্ষে এক কম্বোডিয়ান সেনার মৃত্যু হয়। এর ফলে দুই দেশের সম্পর্কের টানাপড়েন আরও গভীর হয়। এমতাবস্থায়, কম্বোডিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শিনাবাত্রার ফোনালাপ প্রকাশ্যে আসতেই দেশে শুরু হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। বিরোধীরা অভিযোগ তোলে, সীমান্ত নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করেছেন। শুধু বিরোধী দলই নয়, নিজের দলের মধ্যেও শুরু হয় ক্ষোভ। হুন সেনের সঙ্গে কথোপকথনের পর বিক্ষোভে উত্তাল হয় ব্যাংকক সহ একাধিক শহর। শিনাবাত্রার নেতৃত্বাধীন সরকার থেকে বেরিয়ে আসে রক্ষণশীল ভুমজাইথাই পার্টি (Bhumjaithai Party)। দলের ভাঙন এবং বিরোধী দলের তীব্র আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রীর পদ রক্ষাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। তাইল্যান্ডের একদল সিনেটর সরাসরি সাংবিধানিক কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে তাঁর অপসারণের আবেদন জানান। তাঁদের অভিযোগ, শিনাবাত্রা দেশের সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন ও তাঁর সততা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
অন্যদিকে, দ্রুত পরিস্থিতি সামলাতে ক্ষমা চান প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তা সত্ত্বেও আন্দোলন থামেনি। আদালত অভিযোগ খতিয়ে দেখে আপাতত তাঁকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে পাকাপাকি অপসারণের বিষয়টি এখনও বিচারাধীন। মামলার রায় কী হবে, তা নিয়ে দেশজুড়ে উৎকণ্ঠা ছড়িয়েছে।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শিনাবাত্রা (Paetongtarn Shinawatra) হলেন থাইল্যান্ডের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী থাকসিন শিনাবাত্রা (Thaksin Shinawatra)-র কন্যা। থাকসিন একসময় কোটিপতি শিল্পপতি থেকে দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতায় পরিণত হলেও, তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সেনা অভ্যুত্থানের পর তাঁকে দেশ ছাড়তে হয়। শিনাবাত্রার রাজনৈতিক উত্থানও তাই বহু রাজনৈতিক মহলে ‘পরিবারতন্ত্র’-এর ধারাবাহিকতা বলেই আলোচিত হয়। এর আগে থাইইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন স্রেঠা থাভিসিন (Srettha Thavisin)। তিনি পদচ্যুত হন আদালতের নির্দেশে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, একটি অপরাধ মামলায় দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে আইন ভেঙে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করা। থাভিসিনকে অপসারণের পর ২০২৪ সালের আগস্টে শিনাবাত্রাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ করেন থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্ণ (King Maha Vajiralongkorn)। কিন্তু মাত্র এক বছরের মধ্যেই তাঁর সরকার টালমাটাল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একের পর এক আইনপ্রণেতার দলত্যাগে শিনাবাত্রা সরকার অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হতে পারে। এমনকী আদালত যদি পাকাপাকি অপসারণের নির্দেশ দেয়, তবে থাইল্যান্ডে আবারও রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেবে। এখন সকলের নজর আদালতের চূড়ান্ত রায়ের দিকে। রাজনৈতিক মহলের আশঙ্কা, পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে, তাতে শিনাবাত্রার ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Rakul Preet Singh | তাড়াহুড়োর সময়েও নিখুঁত থাকেন রাকুলপ্রীত সিং, শিখিয়ে দিলেন চটজলদি সাজগোজের মন্ত্র
