



সাশ্রয় নিউজ ★ কটক : এক সময় ছিল যখন কলেরা (Cholera) নামটি শুনলেই গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে পড়ত মৃত্যুর ভয়। গ্রামে একজন আক্রান্ত হলেই গুজবের মতন ছড়িয়ে পড়ত আতঙ্ক। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতিতে সে ভয় অনেকটাই কমেছে ঠিকই, কিন্তু জলবাহিত এই মারণ রোগ ফের যেন পুরনো ছায়া বিস্তার করতে শুরু করেছে ওড়িশা (Odisha) রাজ্যে। উপকূলবর্তী একাধিক জেলায় হঠাৎ করে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার পর পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, আক্রান্তদের অনেকে আসলে কলেরা ভাইরাসেই (Vibrio Cholerae) সংক্রমিত। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ইতিমধ্যে রাজ্যে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন ও মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। ওড়িশা সরকারের এক আধিকারিক জানান, “এই রোগ ছড়িয়েছে মূলত দূষিত জল ও অপরিষ্কার পরিবেশের কারণে। আমরা রাজ্যের সমস্ত জেলাশাসকদের সতর্ক করে দিয়েছি।” তাঁর কথায়, শুধুমাত্র মঙ্গলবারই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় ৩০০ জন ডায়রিয়ার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। এই সংক্রমণের উৎস সন্ধানে প্রশাসন যখন তৎপর, তখন জানা যাচ্ছে ৯ জুন জাজপুর (Jajpur) জেলার একাধিক গ্রামে প্রথম ডায়রিয়ার খবর আসে। এরপরই ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে ঢেঙ্কানল (Dhenkanal), ভদ্রক (Bhadrak), কেওনঝাড় (Keonjhar) ও কটক (Cuttack)-সহ একাধিক জেলায়। জাজপুরের ক’য়েকটি নমুনা পরীক্ষায় স্পষ্ট হয়ে যায় ভিব্রিও কলেরা-ই এই হঠাৎ সংক্রমণের মূল কারণ। স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই আক্রান্তদের মধ্যে ১০ শতাংশের নমুনায় কলেরা ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিতভাবে ধরা পড়েছে। ওড়িশা স্বাস্থ্য দপ্তরের এক মুখপাত্র জানান, “বিশেষজ্ঞ দল গঠন করে জেলায় জেলায় পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি জেলার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যাপ্ত ওষুধ এবং ওআরএস (ORS) মজুত রাখা হয়েছে।”
স্বাভাবিক ভাবেই এই পরিস্থিতি মনে করিয়ে দিচ্ছে অতীতের সেই ভয়াবহ মহামারির দিনগুলিকে। ১৯৭১ সালে যখন কলেরা মহামারির রূপ নিয়েছিল, তখনই প্রথম বাংলার চিকিৎসক ও গবেষক ডঃ দিলীপ মহলানবীশ (Dr. Dilip Mahalanabis) তৈরি করেছিলেন ওআরএস (ORS)। তাঁর সেই উদ্ভাবন লক্ষ লক্ষ প্রাণ বাঁচিয়েছিল। এখনও পর্যন্ত কলেরার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ওআরএস-ই সবচেয়ে কার্যকর ও সহজলভ্য অস্ত্র।তবে এই রোগকে আজও অবহেলা করার উপায় নেই, এমনটাই মনে করেন চিকিৎসকেরা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডঃ অনিমেষ পাল (Dr. Animesh Pal) জানান, “কলেরার মূল উপসর্গ হল ঘন ঘন পাতলা জলমত মল হওয়া। এর সঙ্গে দেখা দেয় বমি, পেটে ব্যথা ও তীব্র জলশূন্যতা। রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে না নিলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “খাবার ও পানীয় জল ভাল করে ফুটিয়ে খেতে হবে। কোনওভাবেই যেন দূষিত জল পান না করা হয়।”
ওড়িশা প্রশাসনও কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। ৩০টি জেলাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যবেক্ষণ টিম কাজ করছে। জলের নমুনা পরীক্ষা, সচেতনতা প্রচার এবং আক্রান্তদের দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একজন স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, “যাঁদের হালকা ডায়রিয়ার উপসর্গ আছে, তাঁদেরও হাসপাতালে এসে চেকআপ করতে বলা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে প্রথমে উপসর্গ হালকা থাকলেও পরে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।”
প্রাক বর্ষার মরসুমে এমনিতেই জলবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ে। ওড়িশার এই হঠাৎ সংক্রমণ তাই ঘিরে ধরছে আশপাশের রাজ্যগুলোকেও। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক উচ্চপদস্থ কর্তা জানান, “পড়শি রাজ্যে সংক্রমণ ছড়ালে তার প্রভাব অন্যান্য রাজ্যেও পড়তে পারে। তাই কেন্দ্রীয় স্তর থেকেও ওড়িশা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।” সব মিলিয়ে দীর্ঘদিন পরে আবারও জলবাহিত এক প্রাচীন রোগ মনে করিয়ে দিল তার অদৃশ্য হলেও অব্যাহত উপস্থিতির কথা। চিকিৎসার উন্নতি হয়েছে, কিন্তু রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা না বাড়ালে ভবিষ্যতেও এমন পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আর সেই ভয়কে মাথায় রেখেই ফের একবার প্রশাসন ও চিকিৎসক সমাজ একত্রে সতর্ক।
ছবি : প্রতীকী
আরও পড়ুন : Abhijit Gangopadhyay health update : দিল্লির পথে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, সঙ্ককটজনক অবস্থায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে AIIMS-এ ভর্তি করা হচ্ছে প্রাক্তন বিচারপতিকে
