



উত্তরবঙ্গের মনোরম জলবায়ুতে স্থান বদলের জন্য মুখিয়ে থাকেন ভ্রমণপিয়াসুরা। কাছে-পিঠে প্রকৃতির মাঝে ছুটি কাটানোর আদর্শ স্থান হিসেবে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গাকেই বেছে থাকেন। তেমনি উত্তরবঙ্গের আনাচে-কানাচে ঘুরে এসে লিখলেন : শ্রীতন্বী চক্রবর্তী
দোলপূর্ণিমার হালকা, মৃদুমন্দ বাতাস যখন অমলতাস, শিমুল, জারুলের পাতার ফাঁকে শিরশির করে বয়ে চলেছে, ঠিক এরকম এক সকালেই আমরা দু’জন হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে চড়ে পাড়ি দিলাম উত্তরবঙ্গ। এবারের গন্তব্য রঙ্গভং ও মাজুয়া হয়ে সোজা দার্জিলিং। সব মিলিয়ে পাঁচদিনের যাত্রাপথ। উত্তরবঙ্গের নদী, সপার্ষদ কাঞ্চনজঙ্ঘা আর সবুজের বৈচিত্রে পর্যটকের মনে চিরকালই এই জায়গাটি এক অনন্য স্থান অধিকার করে রয়েছে। কলকাতা ছাড়ার আগেই চামং টি এস্টেট ও রঙ্গভঙে শর্মা হোমস্টের মালিক শর্মাজীর সঙ্গে যোগাযোগ করে নিয়েছিলাম। জেনে নিয়েছিলাম আমরা মার্চ মাসের যে সময়টিতে যাচ্ছি, সেই সময় গুরাস, ম্যাগনোলিয়া ও আরও অন্যান্য ফুলেল সৌন্দর্য্যে পাহাড় মাতোয়ারা হয়ে থাকবে। উল্লেখযোগ্য, ঘরোয়া হোমস্টেগুলির মধ্যে রঙ্গভং তারসিং দাঁড়া গ্রামের শর্মা হোমস্টে নিঃসন্দেহে একটি অনবদ্য জায়গা। চারদিকে পাহাড়ে ঘেরা, একদিকে তাকদা, অন্যদিকে নেপাল, এবং এখান থেকে শুধুমাত্র সকালে গিয়ে বিকেলে ফিরে আসা যায় সান্দাকফু যাওয়ার বেশ ক’য়েকটি জায়গা- যেমন মেঘমা, টংলু, ধোত্রে এই বিভিন্ন স্থানগুলি।
শর্মা হোমস্টের নিজস্ব গাড়ির ব্যবস্থাও আছে। এছাড়াও নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন অথবা বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকে মিরিক বা সুখিয়াপোখরি পর্যন্ত গাড়িতে এসে, এসে সেখান থেকেও রঙ্গভং তারসিং দাঁড়া গ্রামটিতে আসা যায়। আমরা এখানে এক রাত্রি ছিলাম, কারণ আমাদের তিন রাত্রি ও চারদিনের ছোট একটি ট্যুর প্ল্যান করা ছিল। রঙ্গভং তারসিং দাঁড়ায় শর্মাজী, তাঁর স্বর্গত পিতৃদেব ও ভাইদের, কাকাদের হাতে গড়া একটা গোটা শহর রয়েছে বলা যেতে পারে। নিজেদের মাছ চাষ, গোয়াল (বাড়িতে বানানো সেই ঘিয়ের স্বাদ অপূর্ব!), কেয়ারী করা ফুলের বাগান, ফলের বাগান, এলাচ গাছ, চায়ের মরসুমে চা বাগানের সম্ভার, খামার সবকিছু মিলিয়েমিশিয়ে এক রাজকীয় ব্যাপার। এই গ্রামটিতে ভারতীয়রা ছাড়াও বহু বিদেশী ট্যুরিস্ট আসেন, কারণ এই জায়গাটি সান্দাকফু যাওয়ার রাস্তায় পড়বে।
একদিন এখানে শুধু এই জায়গাগুলি ঘুরতেই দিন কেটে গেল। পরদিন, শর্মাজীই আমাদের একটি গাড়ি বুকিং করে দিলেন, আমাদের সাইটসিইং করার জন্য। রঙ্গভং থেকে মিরিক লেক, সীমানা ভিউপয়েন্ট (যেখান থেকে আকাশ পরিষ্কার থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘার অবর্ণনীয় সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়), বোকার নগেডন চোখর লিং মনাস্ট্রি, নেপালের অন্তদাঁড়া, পশুপতি মার্কেট ও কন্যাম ঘুরে আসা যায়।
যারা ভাববেন জোড়পোখরি দেখে নিয়ে, লেপচাজগৎ হয়ে সোজা দার্জিলিং ঢুকবেন, তারাও রঙ্গভংকে কেন্দ্র করে চারদিন ঘোরার প্ল্যান করতেই পারেন। যদি চা-বাগান, নদীর ধার ঘেঁষে ঘন্টার পর ঘন্টা নিজের মত সময় উপভোগ করতে চান, তাহলেও এই জায়গার এক অসামান্য সৌন্দর্য রয়েছে, যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেখানে শহুরে কোলাহল থেকে অনেক দূরে, পাহাড়ের সান্নিধ্যে নৈসর্গিক চুপকথা অনুভব করার সময় আসে, সেখানে রঙ্গভং থেকে ট্রেকিং ও বার্ডওয়াচিংয়েরও ব্যবস্থা আছে।
শর্মা হোমস্টেতে আসার জন্য পুলখোলা পর্যন্ত এলেও উনি গাড়ির ব্যবস্থা করে পর্যটকদের নিজেদের হোমস্টেতে নিয়ে আসবেন। ছবি : লেখক
আরও পড়ুন : Loksabha Election 2024 : পশ্চিমবঙ্গের ভোট রাজনীতি কড়চা
