Sasraya News

Newborn Baby DNA test: জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই DNA পরীক্ষা, রোগ প্রতিরোধে যুগান্তকারী পদক্ষেপ ব্রিটেনের

Listen

Newborn Baby DNA test: জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই DNA পরীক্ষা, রোগ প্রতিরোধে যুগান্তকারী পদক্ষেপ ব্রিটেনের

ধীরেন মাহান্তী, সাশ্রয় নিউজ ★ লন্ডন : জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই শিশুর জিনগত পরীক্ষা (Newborn Baby DNA test)! শুনতে অবাক লাগলেও এমনই অভূতপূর্ব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেল্‌থ সার্ভিস (National Health Service – NHS)। লক্ষাধিক সদ্যোজাত শিশুর জিন পরীক্ষা করে আগেভাগেই চিহ্নিত করা হবে জেনেটিক বা বংশগত রোগের ঝুঁকি। লক্ষ্য, দুরারোগ্য অসুখকে ঠেকানো চিকিৎসার গোড়াতেই। এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে সদ্যোজাতের মায়ের নাড়ি (umbilical cord) থেকে কোষ সংগ্রহ করে তাতে ডিএনএ ম্যাপিং করা হবে। বিশ্বজুড়ে বিরল রোগে আক্রান্ত প্রায় ৩০ কোটির বেশি মানুষকে মাথায় রেখেই এমন পদক্ষেপ। NHS-এর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমরা রোগের অপেক্ষায় বসে থাকতে চাই না। রোগ আসার আগেই তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করতে চাই।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, বছরে যে সংখ্যক শিশু জন্ম নেয়, তার মধ্যে প্রায় ছয় শতাংশ শিশু বিরল জেনেটিক রোগ নিয়ে জন্মায়। এদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ শিশুই পাঁচ বছর বয়স হওয়ার আগেই প্রাণ হারায়। এমন দুর্দশার মূলে রয়েছে জেনেটিক মিউটেশন বা জিনের গঠনে রাসায়নিক পরিবর্তন।
সিস্টিক ফাইব্রোসিস (Cystic Fibrosis), সিক্‌ল সেল অ্যানিমিয়া (Sickle Cell Anaemia), হান্টিংটন ডিজিজ (Huntington’s Disease), স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি (Spinal Muscular Atrophy) এসব রোগ সাধারণত ধরা পড়ে রোগের উপসর্গ দেখা দিলে। তখন চিকিৎসা যেমন কঠিন, তেমন ব্যয়সাপেক্ষও। রোগ পুরোপুরি সারে না বললেই চলে।
তাই জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই ডিএনএ (Newborn baby DNA test) পরীক্ষা করে সম্ভাব্য রোগ সম্পর্কে জানা গেলে তা প্রতিরোধ করা বা সামাল দেওয়ার সুযোগ থাকে। ব্রিটেনের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডঃ ভিক্টোরিয়া বার্নস (Dr. Victoria Burns) বলছেন, “বাচ্চা যখন অসুস্থ হয়, তখন চিকিৎসা শুরু করার বদলে যদি জানাই যায় তার রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কতটা, তা হলে চিকিৎসা আরও সুচারু হয়। এটা প্রতিকারের চাবিকাঠি।”

মানবদেহের প্রতিটি কোষে থাকে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম যার মধ্যে ২২টি অটোসোম ও একটি সেক্স ক্রোমোজোম জোড়া (XX বা XY)। এই ক্রোমোজোম জুড়েই হাজার হাজার জিন (DNA segments) থাকে। এই জিনই নির্ধারণ করে দেহের গঠন, বুদ্ধি, আচরণ এমনকি রোগের সম্ভাবনাও। একটি জিনে যদি সামান্য মিউটেশন হয়, তাহলে সন্তান আক্রান্ত হতে পারে মারাত্মক জেনেটিক ডিসঅর্ডারে।
বিজ্ঞানীরা এই রোগগুলিকে ভাগ করেন মূলত তিনভাবে সিঙ্গল জিন ডিজঅর্ডার, ক্রোমোজোমাল ডিজঅর্ডার ও মাল্টি-জিন ডিজঅর্ডার। একটি জিন বদলালেই যেমন হান্টিংটনের মত রোগ হয়, তেমন দু’টি মিউটেটেড জিন একসঙ্গে এলে হয় সিক্‌ল সেল ডিজিজ বা সিস্টিক ফাইব্রোসিস। ফলে বাবা-মায়ের ডিএনএতেও থাকে সন্তানের ভবিষ্যৎ। এই কারণেই NHS চাইছে আগেভাগে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এই ত্রুটি শনাক্ত করতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু রোগ নির্ণয়ের জন্য নয়, ভবিষ্যতের চিকিৎসাব্যবস্থাকে আরও শক্তপোক্ত করতে এ এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে ব্রিটেনের জেনেটিক্স কাউন্সিলের সদস্য ডঃ থমাস গ্রেগরি (Dr. Thomas Gregory) বলেন, “জিনগত রোগকে নির্মূল করতে হলে গোড়াতেই ঢুকতে হবে। জন্মের পরপরই ডিএনএ বিশ্লেষণ সেই দরজা খুলে দেবে।”
এই রকম প্রযুক্তিগত উদ্যোগ এখনো পর্যন্ত বিশ্বের খুব কম দেশেই দেখা গেছে। ভারতে প্রতিবছর প্রায় ৫০ লক্ষ শিশু নানা রকম জিনঘটিত রোগ নিয়ে জন্মায়। যদিও সব রোগ প্রাণঘাতী নয়, তবু সচেতনতা ও প্রাথমিক নির্ণয় প্রয়োজনীয়। ভারতের জিন বিজ্ঞানী ডঃ সীমা চট্টোপাধ্যায় (Dr. Seema Chattopadhyay) বলছেন, “আমাদের দেশে এই পরীক্ষা চালু করা গেলে বহু শিশুকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা যেত। তবে এর জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী পরিকাঠামো ও প্রশিক্ষিত কর্মী।”

ব্রিটেন এই পরিকল্পনাকে আগামী দশ বছরের দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি হিসেবে শুরু করেছে। লক্ষ শিশু এই পরীক্ষার আওতায় আসবে। এর মধ্য দিয়ে গঠিত হবে এক বিশাল ‘জেনেটিক ডেটাবেস’, যা ভবিষ্যতের চিকিৎসাব্যবস্থার জন্য এক অমূল্য সম্পদ হয়ে উঠবে।
এই প্রকল্প যে শুধু চিকিৎসার ক্ষেত্রেই নয়, গবেষণার ময়দানেও এক যুগান্তকারী অধ্যায় রচনা করতে চলেছে, তা বলাই যায়। জিনকে জানলে জীবনের ভবিষ্যৎও হাতের মুঠোয় আসতে পারে, এমন বার্তা দিচ্ছে ব্রিটেন।

ছবি : প্রতীকী 
আরও পড়ুন :

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment

Also Read