



হৈমন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় : গতকাল শনিবার সাংবাদিক সংঘের পাশে একটি সভাকক্ষে বাংলা গানের দল ‘নৌটঙ্কি’-এর একটি সুন্দর অনুষ্ঠানে থাকতে পেরে নিজেকে ভীষণ ধন্য মনে হচ্ছে। উপস্থিত ছিলেন জেলার বিশিষ্ট বিদ্বজ্জনেরা এবং সাংস্কৃতিক জগতের কিছু মানুষ। অবশ্যই কিছু বলব, কারণ এখানে সিট সংখ্যা বড় সীমিত ছিল। যাইহোক, ওর আমন্ত্রণ ভীষণ আন্তরিক ছিল তাই, খুব আন্তরিকভাবে কিছু কথা বলব। যদিও ও বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে দিদির মত ভাইয়ের প্রতি স্নেহবশত নয়, কঠোর সমালোচক হিসেবে উপস্থিত থাকতে।
একটা কথা বলি, “In the conception of the ‘ Man of the heart ‘of the Baul, we find a happy mixture of the conception of the param ~atmana of the Upanisadas, the Sahaja of the Sahajiya’s and subistic conception of the Beloved.” – Sasibhushan Dasgupta. এটাই হল বাউল সুরের আসল রহস্য। সমন্বয় সাধনা আর এই সমন্বয়ের সুরের প্রয়োজনীয়তা সমকালীন জীবনের পটভূমিকে স্পষ্ট করে দেয়। ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং জাতপাতের যে সমস্যা বর্তমানে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে তাতে এই গানগুলো অবশ্যই মানুষের মনের পরিবর্তন আনতে পারবে বলেই আমার বিশ্বাস। কাউকে ছোটো না করেই বলছি ঠিক এই কারণেই শিক্ষার বড় প্রয়োজন। এইসব শিক্ষিত ছেলেরা নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই কানু প্রেম যদি একটিবার ঢুকিয়ে দিতে পারে, তবে এ সমাজ পরিবর্তন হতে বাধ্য। আমি বহুবার বলেছি আগামী প্রজন্মের যদি কিছু খারাপ থাকে তবে তার সম্পূর্ণ দায় আমাদের। কারণ আগামী প্রজন্মের ধারক আমরা। সেদিক থেকে দেবাশিস বিপ্লব এনেছে বলেই আমার বিশ্বাস।
পরপর গানগুলো১. জাত গেল জাত গেল বলে, ২ পরের জাগা পরের জমিন… একটা আধ্যাত্মিক বার্তা বহন করেছে শ্রোতাদের কাছে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। জীবনে কিছুই থাকবে না। কিছু নিয়েও যাব না। পরে থাকবে এই কাটানো মুহূর্তগুলো। গানের সঙ্গে দেবাশিসের একাত্ম হয়ে ওঠা সকলেই লক্ষ্য করেছে। প্রথম যেদিন ও বাসভূমির অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিল, তখন ওর মধ্যে অনেক গভীরতার অভাব ছিল। সেদিনের দেবাশিস আর কালকের দেবাশিসের মধ্যে ছিল বিস্তর ফারাক। জ্ঞান যখন আত্মায় এসে বসে তখন সে ছটফটানি, চটুল স্টেজ মাতানোর দায় আর থাকে না গায়কের। এই পরিবর্তন ভীষণভাবে লক্ষ্য করেছি।
এবার কিছু নিন্দে— দর্শক বুঝে কখনও কখনও বাংলা এবং ইংরেজি দু’টো ভাষায় নিজেকে এক্সপ্রেস করলে আরও বেশি ভাল হবে বলে, আমার অন্তত মনে হয়েছে। বাকি তিনজন আমার সন্তানসম অনায়াসেই সুর নিয়ে খেলা করছিলেন তাদের জন্য আমার শ্রদ্ধা রইল। আর একজন মানুষ ছিলেন তাকেও আমার শ্রদ্ধা জানাই। আসলে সুর যখন বাজনার তালে তালে মিলে যায় তখন গানের আসল স্বাদ বেরিয়ে আসে। গানের আসল ফ্লেভারের চাবিকাঠি ওদের হাতে থাকে। তাই স্নেহ তো আছেই কিন্তু ওদের শিল্পী সত্তাকে আমার কুর্নিশ। দেবাশিস একটু মাঝেমধ্যে দর্শকদের পালস্ বোঝার চেষ্টা করছিল এটা করা চলবে না। যখন যে মাঠেই নামবে সময় তোমার, খেলা তোমার। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে যা করবে সেটার ফল হবে অমৃত। বাংলা গানের দল অনেক আছে। কিন্তু এই মফসসল শহরে যা দেখলাম তাতে জেলাবাসীর উচিত ওদের বেশি করে সুযোগ দেওয়া। আমি সামান্য একজন মানুষ এটা আবেদন হিসেবে থাকল। আসলে দেশে তো মুড়ি, মিছরির একদর হয়ে গেছে তাই আশা করব মিছিরি আর মুড়ির তফাৎটা বুঝবেন। সহজিয়াচর্চা আরও সমৃদ্ধ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। তবু বলব কাল অসাধারণ একটি অনুষ্ঠানের সাক্ষী হয়ে রইলাম। আশাকরি অচিরেই নৌটঙ্কি অর্থাৎ মূলত লোককথাকে কেন্দ্র করে নৃত্য এবং সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে সমাজসেবকের দল, সকলের মনে জায়গা করে নিতে পারবে। দেবাশিস দেবনাথ পেশায় একজন বাংলার শিক্ষক, ভাল লেখালেখি করে এরপর ওর এই গানের দল তৈরি। সত্যি প্রশংসার যোগ্য।
আরও পড়ুন : Chicham Bridge : হিমাচলের আকাশছোঁয়া সেতু, চিচাম ব্রীজে দাঁড়িয়ে যেন মেঘ ছুঁয়ে ফেলা যায়
