Sasraya News

Music Therapy | মানসিক নিরাময় আশা জাগাচ্ছে মিউজিক থেরাপি

Listen

তনুজা বন্দ্যোপাধ্যায় ★ সাশ্রয় নিউজ : শহরের ব্যস্ত রাস্তায় বাস, মেট্রো কিংবা অফিস ফেরত ভিড়ের মাঝে এক কাপ চা আর কানে হেডফোন অনেকের কাছেই দিনের শেষে এটাই সান্ত্বনা। তবে সঙ্গীত কি কেবল বিনোদনের মাধ্যম? না কি, সে পারে মনের গভীরে জমে থাকা যন্ত্রণাও উপশম করতে? আজকাল এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে চিকিৎসাবিজ্ঞানও। কারণ, বাস্তব বলছে, ‘মিউজ়িক থেরাপি’ নামের এক নিঃশব্দ বিপ্লব ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যচর্চায়। ‘মিউজ়িক থেরাপি’ এখন আর শুধু অল্টারনেটিভ থেরাপি নয়, বরং চিকিৎসাক্ষেত্রে এক সমীকরণ, যেখানে সঙ্গীত হয়ে উঠছে ওষুধের সমান কার্যকর। মানসিক ক্লান্তি, উদ্বেগ, হতাশা বা এমনকি স্মৃতিভ্রংশের মতো জটিল অসুখেও দেখা যাচ্ছে উল্লেখযোগ্য সাড়া। মনোবিদ ও মিউজ়িক থেরাপিস্ট চন্দ্রিমা বন্দ্যোপাধ্যায় (Chandrima Bandopadhyay) বলছেন, “কথার মতো সঙ্গীতও মনের দরজা খুলে দেয়। অনেক সময় রোগী নিজেই বুঝতে পারেন না তাঁর মধ্যে কী জমে রয়েছে। সঠিক সুর ও শব্দের ছোঁয়ায় তা বেরিয়ে আসে।”

এই থেরাপির ক্ষেত্রেও রকমফের আছে। কেউ রাগাশ্রয়ী বাদ্যযন্ত্রের সুরে দেহমন শিথিল করেন, কেউ বা নির্দিষ্ট গান বা শ্লোকের মাধ্যমে স্মৃতিচর্চা করেন। কেউ আবার গান শুনে না, নিজেই গান গেয়ে ফেলেন থেরাপি সেশনের মাঝপথে। শিল্পী প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Protima Bandopadhyay) ছাত্রী চন্দ্রিমা নিজেও বলেন, “আমি নিজের সেশনে অনেক সময় গান গেয়ে শোনাই। যেটা ক্লায়েন্টের সঙ্গে এক আলাদা রসায়ন তৈরি করে।” বিশেষ ভাবে সক্ষম শিশুদের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব চোখে পড়ার মতো। কাকলি চক্রবর্তী (Kakoli Chakraborty), যিনি মূলত অটিজম এবং অন্যান্য নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডারের শিশুদের সঙ্গে কাজ করেন, জানালেন, “অনেক শিশু আছে যারা কথা বলে না, মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে না। কিন্তু তারা যখন মিউজ়িক শোনে, হঠাৎ একদিন দেখি তারা তাল মেলাতে শুরু করেছে বা একটা সুর গুনগুন করে তুলছে। এটা এক ধরনের ব্রেকথ্রু।” শুধু তাই নয়, ২০২০ সালে অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chatterjee)-এর হাসপাতালে থাকার সময় চিকিৎসকেরা মিউজ়িক থেরাপির সাহায্য নিয়েছিলেন। সাড়া মিলেছিল ভালই। এমন উদাহরণ বিশ্বজুড়ে রয়েছে। ২০১৭ সালে মার্কিন ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর কমপ্লিমেন্টারি অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ হেল্থ’ ৪২১ জন মানুষের উপর একটি সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, সঙ্গীত তাঁদের উদ্বেগ কমিয়েছে এবং অবসাদ কাটাতে সাহায্য করেছে। তবে একটা প্রশ্ন থাকেই, গান তো সবাই শোনেন, তাহলে আলাদা করে থেরাপির দরকার কী? চন্দ্রিমা বলছেন, “এক জন থেরাপিস্ট ব্যক্তির মনের অবস্থা বুঝে সেই অনুযায়ী সঙ্গীত বেছে দেন। যেটা প্লেলিস্টের মাধ্যমে হয় না। যেমন ধরুন, ভৈরবী রাগ উচ্চ রক্তচাপ বা উদ্বেগের ক্ষেত্রে কাজ করে, আবার শিবরঞ্জনী রাগ স্মৃতিভ্রংশে উপকারী। বিষয়টা আসলে ‘টার্গেটেড হিলিং’-এর মতো।” এই থেরাপির কাঠামো খুবই বৈচিত্রময়। সাধারণত এক থেকে দেড় ঘণ্টার সেশন হয়। কারও ক্ষেত্রে দু-তিনটি সেশনেই ফল মিলছে, আবার কেউ নিয়মিত ফিজ়িওথেরাপির মতো মিউজ়িক থেরাপি নিচ্ছেন। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে সেশন নিচ্ছেন, কেউ আবার ছোট দলে। শুরুতেই শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা ধ্যান থাকে, তারপর সুরে সুরে আত্মবিশ্লেষণ। কখনও বাদ্যযন্ত্র, কখনও রেকর্ডেড গান, কখনও রবীন্দ্রসঙ্গীত। শেষে থেরাপিস্ট রোগীর প্রতিক্রিয়া দেখে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা তৈরি করেন। জানা যায়, এই থেরাপির খরচ সাধারণত ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। একক সেশনের খরচ দলগত সেশনের তুলনায় বেশি। তবে তুলনামূলক ভাবে এখনও খরচের মধ্যে থেকে যায় বলেই বিশ্বাস করেন অনেকেই।

শহরের বিভিন্ন প্রান্তে মিউজ়িক থেরাপি সেন্টার রয়েছে। বড় বড় বেসরকারি হাসপাতালেও এখন রোগীদের জন্য আলাদা করে এই থেরাপির ব্যবস্থা থাকে। কেউ কেউ আবার বাড়িতে গিয়ে সেশন করান। তবে এখনই কোনও নির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক মানদণ্ড না থাকায় এক এক জন থেরাপিস্ট এক এক রকম পদ্ধতি অনুসরণ করেন। যদিও থেরাপির প্রয়োগ-পদ্ধতি ভিন্ন হলেও লক্ষ্য এক, ‘সুরে সুরে মন ভালো করা’।শুধু অসুখ সারানো নয়, মিউজ়িক থেরাপি আসলে এক ধরনের আত্মিক অন্বেষণও। যেখানে সুর, তাল, লয় সব মিলিয়ে গড়ে ওঠে এক পরিপূর্ণ নিরাময়ের পথ। যে সময়ের সমাজে মানুষ যতই প্রযুক্তি-নির্ভর হোক না কেন, শান্তি ও সহানুভূতির খোঁজে মানুষকে আবার ফিরতে হচ্ছে সেই চিরকালীন আশ্রয়ে সঙ্গীতের কাছে। তাই ভবিষ্যতের শহর, ভবিষ্যতের মানুষ তারা হয়ত আরও বেশি করে বলবে, সঙ্গীতই মনের ঔষধ।
ছবি : প্রতীকী
আরও পড়ুন : Fake relationships | নতুন মানুষের খোঁজে, কেন কাছের মানুষও হয়ে ওঠে প্রতারক?

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment

Also Read