



পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায় ★ সাশ্রয় নিউজ : আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (ICC) তাদের সম্মানজনক ‘হল অব ফেম’-এর তালিকায় এবার অন্তর্ভুক্ত করল ভারতের সর্বকালের অন্যতম সফল অধিনায়ক ও ফিনিশার মহেন্দ্র সিং ধোনি (Mahendra Singh Dhoni)। ২০২৫ সালে মোট সাতজন প্রাক্তন ক্রিকেটারকে এই মর্যাদাপূর্ণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ধোনির নাম বিশেষভাবে নজর কেড়েছে বিশ্ব ক্রিকেট মহলে। উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে ভারতকে প্রথম টি-২০ বিশ্বকাপ (T20 World Cup) এবং ২০১১ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ (ODI World Cup) জেতানো ‘ক্যাপ্টেন কুল’-এর এই স্বীকৃতি যেন তাঁর বর্ণময় ক্রিকেট জীবনের একটি প্রতীকী সীলমোহর। নিজস্ব ঠান্ডা মাথার নেতৃত্ব, ম্যাচ ফিনিশ করার অসাধারণ দক্ষতা, ও কিপিং-ব্যাটিংয়ের সমন্বয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এবার সেই কীর্তিরই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলল আইসিসির তরফে।
আইসিসি’র (ICC) দেওয়া বিবৃতিতে ধোনির খেলোয়াড়ি দক্ষতা ও মানসিক দৃঢ়তার বিশেষ প্রশংসা করা হয়েছে। তারা বলেছে, “মহেন্দ্র সিং ধোনি এমন একজন ক্রিকেটার যিনি বিপুল চাপের মধ্যেও স্থির সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। তাঁর নেতৃত্ব কেবল দলকে একত্রিত করেই রাখেনি, বরং একাধিক চরম পরিস্থিতিতে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছে।” ক্রিকেটবিশ্বে তাঁকে এক ‘ক্লাচ প্লেয়ার’ বা প্রতিকূল মুহূর্তের নির্ভরযোগ্য নাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নিজের প্রতিক্রিয়ায় ধোনি এই স্বীকৃতিকে “একটি সম্মান এবং গর্বের মুহূর্ত” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “এই তালিকায় যুক্ত হওয়া শুধু আমার জন্য নয়, আমার পরিবারের, সতীর্থদের, ও ভক্তদের জন্যও একটি আবেগঘন ব্যাপার। ক্রিকেট শুধু একটি খেলা নয়, এটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে একটি অনুভূতির নাম। আমি কৃতজ্ঞ যে, সেই যাত্রার অংশ হতে পেরেছি।”
ধোনি ছাড়া যাঁরা এই বছর (২০২৫) আইসিসি হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তাঁরা হলেন: অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথু হেডেন (Matthew Hayden), দক্ষিণ আফ্রিকার হাশিম আমলা (Hashim Amla), গ্রায়েম স্মিথ (Graeme Smith), নিউজিল্যান্ডের ড্যানিয়েল ভেট্টোরি (Daniel Vettori), পাকিস্তানের সানা মীর (Sana Mir) এবং ইংল্যান্ডের সারা টেলর (Sarah Taylor)। প্রত্যেকেই তাঁদের নিজ নিজ সময়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনন্য অবদান রেখেছেন। প্রসঙ্গত, আইসিসি হল অব ফেমের সূচনা হয়েছিল ২০০৯ সালে দুবাইয়ে (Dubai), ফেডারেশন অফ ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন (FICA)-এর সহযোগিতায়। এটি মূলত আইসিসি’র শতবর্ষ উদযাপন প্রকল্পের অংশ হিসেবে চালু হয়। উদ্দেশ্য ছিল, যেসব ক্রিকেটারদের অবদান ইতিহাসে অনন্য হয়ে থাকবে, তাঁদের সম্মানিত করা। এরপর থেকে প্রতিবছরই কিছু প্রাক্তন ক্রিকেটার এই তালিকায় জায়গা করে নিচ্ছেন। আজ পর্যন্ত মোট ১২২ জন এই সম্মান পেয়েছেন, যাঁদের মধ্যে মাত্র ১১ জন ভারতীয়।
ভারত থেকে যাঁরা এই সম্মান অর্জন করেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন লিটল মাস্টার সুনীল গাভাসকর (Sunil Gavaskar), কিংবদন্তী স্পিনার বিষেন সিং বেদী (Bishan Singh Bedi), বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কপিল দেব (Kapil Dev), স্পিন জাদুকর অনিল কুম্বলে (Anil Kumble), নিখুঁত টেকনিকের ধারক রাহুল দ্রাবিড় (Rahul Dravid), ব্যাটিং মহারথী শচীন তেন্ডুলকর (Sachin Tendulkar), বিখ্যাত অলরাউন্ডার ভিনু মানকড় (Vinoo Mankad), দুই মহিলা ক্রিকেটার ডায়ানা এডুলজি (Diana Edulji) ও নীতু ডেভিড (Neetu David), এবং ওপেনার ব্যাটার বীরেন্দ্র সহবাগ (Virender Sehwag)। এবার তাঁদের লাইনে যুক্ত হলেন মহেন্দ্র সিং ধোনিও।বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ধোনির এই অন্তর্ভুক্তি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত স্বীকৃতি নয়, বরং ভারতীয় ক্রিকেট সংস্কৃতির এক গৌরবজনক অধ্যায়। কারণ, তাঁর নেতৃত্বেই একটি তরুণ দল বিশ্বের দরবারে নিজেদের আত্মবিশ্বাস ও ক্ষমতা প্রমাণ করেছিল। ক্রিকেটবিশ্বে নেতৃত্বের ধাঁচ, স্টাম্পের পেছনের ক্ষিপ্রতা, এবং ঠান্ডা মাথায় জয়ের নায়ক হয়ে ওঠা, এই তিনটি ক্ষেত্রেই ধোনির নাম এক মাইলস্টোন।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পরও ধোনি রয়েছেন খেলার সঙ্গেই। আইপিএলে (IPL) চেন্নাই সুপার কিংসের (Chennai Super Kings) নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন রেকর্ড পরিসংখ্যান গড়ে। তবে আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা করে নেওয়ার পর তাঁর নাম ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে রইল।এই সম্মান তাঁর জীবনের শেষ অধ্যায় নয়। বরং শুরু আরও অনেক অনুপ্রেরণার। কারণ, ক্রিকেট শুধু মাঠেই খেলা হয় না তা ইতিহাসেও লেখা থাকে। এবার সেই ইতিহাসে ধোনির নাম আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ূন : Deepika Padukone : মুম্বইয়ের বর্ষায় অটো রোম্যান্স, দীপিকার ‘প্রথম প্রেমিক’ কী বললেন?
