Sasraya News

Meenakshi Mukherjee : লাল ঝণ্ডার মুখ: মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়

Listen

পলাশ গোস্বামী ★ সাশ্রয় নিউজ : ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের দীর্ঘস্থায়ী বামফ্রন্ট সরকারের পতন একটি রাজনৈতিক যুগের অবসান ঘটায়। তিন দশকেরও বেশি সময় রাজ্য শাসন করা কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্কসিস্ট) তথা সিপিআই(এম)-এর এই হার শুধু ভোটে নয় আদর্শগতভাবেও ছিল একটি বড় ধাক্কা। তৃণমূল কংগ্রেস ও তার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক অভূতপূর্ব জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসেন। সেই থেকে বামপন্থী রাজনীতি রাজ্যে ধীরে ধীরে কোনঠাসা হতে থাকে। পার্টির পুরনো নেতৃত্ব ও সংগঠন কাঠামো বারবার প্রশ্নের মুখে পড়ে। ঠিক এই সঙ্কটকালেই আবির্ভাব ঘটে একজন তরুণ, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় (Meenakshi Mukherjee)। 

ছবি : সংগৃহীত

নব্য প্রজন্মের এই নেত্রী রাজনীতির মঞ্চে নিজের পরিচিতি তৈরি করেন বাম ছাত্র-যুব আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। অবিভক্ত বর্ধমান জেলার একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম মীনাক্ষীর (Meenakshi Mukherjee)। ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির প্রতি ঝোঁক ছিল। স্কুল ও কলেজজীবনে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে সরব থেকেছেন। সেই সময়েই যুক্ত হন স্টুডেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া (এসএফআই)-এর সঙ্গে।

ছবি : সংগৃহীত

পরে সেখান থেকে রাজ্য রাজনীতির বৃহত্তর মঞ্চে তাঁর যাত্রা শুরু হয় ডেমোক্র্যাটিক ইয়ুথ ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া (DYFI)-এর হাত ধরে।

ছবি : সংগৃহীত

ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য নেতৃত্বে মীনাক্ষীর উত্থান ছিল তুলনামূলক দ্রুত। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, সঙ্ঘবদ্ধ সংগঠনিক ক্ষমতা ও প্রতিবাদী মনোভাব তাঁকে আলাদা করে চিহ্নিত করে। ধীরে ধীরে রাজ্য রাজনীতিতে তিনি পরিচিত নাম হয়ে ওঠেন। যুব সমাজের সমস্যা, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ, কর্মসংস্থান ও লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে মীনাক্ষীর নেতৃত্বে বারবার রাস্তায় নেমেছে সংগঠন। মুখে সপ্রতিভ যুক্তি, কণ্ঠে দৃঢ়তা আর চোখে আগুন—এই তিনে গড়ে ওঠে তাঁর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।

ছবি : সংগৃহীত

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন ছিল মীনাক্ষীর রাজনীতিক কেরিয়ারে এক বড় মাইলফলক। নন্দীগ্রাম কেন্দ্র থেকে তাঁকে প্রার্থী করে সিপিআই(এম)। এই কেন্দ্রেই তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, এবং বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াইয়ে নামেন। সেই ত্রিমুখী লড়াইয়ে মীনাক্ষী ভোটে জেতেননি ঠিকই, কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান ও জনভিত্তি দৃঢ় হয়। শহর থেকে গ্রাম, সংবাদমাধ্যম থেকে সামাজিক মাধ্যম সব জায়গাতেই মীনাক্ষীর স্পষ্ট মতামত ও জোরালো প্রচার ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। অন্যদিকে, নন্দীগ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লড়াই মানেই ছিল এক গভীর বার্তা। একটা আদর্শের মুখপাত্রে। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকই বলেন, মীনাক্ষীর মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক উত্থানের ছায়া দেখা যায়। দু’জনেই শুরু করেছিলেন আন্দোলনের মঞ্চ থেকে। দু’জনেই দৃঢ়চেতা ও স্পষ্টবাদী। যদিও আদর্শগত অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীত, কিন্তু প্রতিবাদী চরিত্রে এই তুলনা অপ্রত্যাশিত নয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, নির্বাচনের পরও থেমে থাকেননি মীনাক্ষী। যেখানেই অন্যায়, সেখানেই তিনি সরব। মহিলা সুরক্ষা, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, এবং শিক্ষাক্ষেত্রে অরাজকতার বিরুদ্ধে তাঁর ধারাবাহিক প্রতিবাদ তাঁকে আলাদা মাত্রা দেয়। মাটির কাছাকাছি থাকা, সরল ভাষায় কথা বলা, ও সমস্যাগুলিকে সরাসরি চিহ্নিত করার ক্ষমতা তাঁকে রাজনীতিতে করে তোলে বিশ্বাসযোগ্য। আজকের দিনে যেখানে রাজনৈতিক নেতাদের উপর সাধারণ মানুষের আস্থা ক্রমশ কমছে সেখানে মীনাক্ষীর মতো নেত্রীদের প্রতি আশা দেখছেন অনেকেই।

ছবি : সংগৃহীত

ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্যসভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি সংগঠনের কাজে আরও সক্রিয় হন। রাজ্যের নানা প্রান্তে গিয়ে তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করেন। আন্দোলনের রাস্তায় হাঁটার পাশাপাশি তিনি গুরুত্ব দেন বিকল্প ভাবনার উপর। শুধু ক্ষোভ নয়, সমাধানমূলক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিও তুলে ধরতে চান তিনি।
মীনাক্ষীর রাজনীতির মধ্যে আছে একটি নতুন ধারা। যেখানে শুধু আদর্শের চিৎকার নয়, আছে আধুনিক ভাষায় রাজনৈতিক বোধ তৈরি করার চেষ্টা। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তরুণ সমাজের সঙ্গে সংযোগ রাখেন, সেখানে প্রচলিত রাজনীতির বাইরে গিয়ে এক নতুন ভাষা তৈরি করতে চান। তাঁর ভিডিও বার্তা, পথসভা, ক্যাম্পেন বা সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার সবকিছুতেই লক্ষ্য করা যায় স্পষ্টতা, আন্তরিকতা ও লড়াকু মানসিকতা। তবে রাজনীতির পথ কখনই মসৃণ নয়। সিপিআই(এম)-এর অভ্যন্তরীণ জটিলতা, পুরনো নেতৃত্বের ছায়া, এবং রাজনৈতিক বাস্তবতা এই সবই মীনাক্ষীর পথের কাঁটা। তবুও তিনি নিজেকে প্রমাণ করছেন এক দৃঢ়চেতা নেতৃত্ব হিসেবে। তিনি পরিবর্তনের পক্ষেই শুধু কথা বলেন না, রাস্তাতেও থাকেন।

ছবি : সংগৃহীত

বর্তমান বাংলার রাজনীতিতে যখন একদিকে আছে ব্যক্তিপূজা, হিংসা ও কর্পোরেট প্রভাব, সেখানে মীনাক্ষীর মতো নেত্রী এক বিকল্প আশা। তিনি বিশ্বাস করেন সংগঠনের শক্তিতে, নীতিতে ও আদর্শে। তাঁর মতে, রাজনীতির উদ্দেশ্য হওয়া উচিত সাধারণ মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা। একটা সময় যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন বিরোধিতার প্রতীক, তেমনি আজকের প্রজন্মের কাছে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় হয়ে উঠেছেন এক আদর্শ লড়াকু মুখ। পার্থক্য শুধু আদর্শে, কিন্তু আকাঙ্ক্ষা একই—বদল আনা। আর ঠিক এখানেই মীনাক্ষীর গুরুত্ব। তিনি শুধু একজন রাজনৈতিক নেত্রী নন, তিনি এই প্রজন্মের আশার প্রতীক।

বহু বাধা, প্রশ্ন ও প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখনো নির্মাণাধীন, কিন্তু ইতিমধ্যেই তিনি প্রমাণ করেছেন—রাজনীতির শূন্যতার মাঝে এক নতুন চেতনার নাম হতে পারেন তিনি। “লাল ঝড়”-এর সেই নবীন মুখ হিসেবে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় আজ বাংলা রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা করেছেন।

ছবি : সংগৃহীত 

আরও পড়ুন : Sourav Ganguly : সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়: এক লড়াকু অধিনায়কের কাহিনি

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment

Also Read