



এখানকার ধর্মপ্রাণ মানুষ বিশ্বাস করে মাতা ত্রিপুরেশ্বরী (Mata Tripureswari) খুব জাগ্রত আর কল্পতরু। ভক্তদের মনোবাঞ্ছা মাতা অপূর্ণ রাখেন না। তাই ভক্তরা মায়ের কাছে মানত রাখে আর মানত পূর্ণ হলে মায়ের কাছে আসে, ভোগ দেয়, বলি চড়ায়। পাশেই আছে কল্যাণ দীঘি। ভক্তরা বিশ্বাস করে এ দীঘির জল পবিত্র। অনেকেই এখানে পুণ্যস্নান করে। এই দীঘির মাছ ও কচ্ছপগুলোতে দেবীমায়ের কৃপাদৃষ্টি রয়েছে বলে অনেকেই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে। লিখেছেন : প্রদীপ সেন
দেবীর একান্নটি পীঠস্থান ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে। ধর্মপ্রাণ হিন্দু মাত্রই বিশ্বাস করে সেই স্থানগুলো এবং সেই সঙ্গে ওই সব অঞ্চলের মানুষগুলিও খুব ভাগ্যবান বা ভাগ্যবতী যেখানে যেখানে পীঠস্থান গড়ে উঠেছে।
পাঁচ পাহাড়ের দেশ, গোমতী মনু খোয়াই লঙ্গাইয়ের দেশ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে “ভারত-ভাস্কর” উপাধি দানকারী এই ভালবাসার রাজ্য ত্রিপুরা মহাভাগ্যবতী এজন্যে যে এ রাজ্যের উদয়পুর শহরের অদূরে রয়েছে একান্ন পীঠস্থানের অন্যতম শ্রীশ্রী মাতা ত্রিপুরেশ্বরীর মন্দির (Tripura Sundari Temple)।
রাজধানী আগরতলা থেকে ৫৫ কিমি দক্ষিণে উদয়পুরে এই পীঠস্থানের দেবী খুবই জাগ্রত আর এর প্রমাণ অনেকেই পেয়েছেন, এর মধ্যে এই প্রতিবেদকও একজন। ১৫০১ খ্রীস্টাব্দে মহারাজা ধন্যমাণিক্য এই জাগ্রত মন্দিরটি তৈরি করেন। দীপাবলি তিথিতে এখানে বিরাট উৎসব হয়। জন সমুদ্রের ঢল নামে। বছরের অন্যান্য দিনেও এখানে ভক্তদের উপস্থিতি চোখে পড়ে।
এখানকার ধর্মপ্রাণ মানুষ বিশ্বাস করে মাতা ত্রিপুরেশ্বরী (Mata Tripureswari) খুব জাগ্রত আর কল্পতরু। ভক্তদের মনোবাঞ্ছা মাতা অপূর্ণ রাখেন না। তাই ভক্তরা মায়ের কাছে মানত রাখে আর মানত পূর্ণ হলে মায়ের কাছে আসে, ভোগ দেয়, বলি চড়ায়। পাশেই আছে কল্যাণ দীঘি। ভক্তরা বিশ্বাস করে এ দীঘির জল পবিত্র। অনেকেই এখানে পুণ্যস্নান করে। এই দীঘির মাছ ও কচ্ছপগুলোতে দেবীমায়ের কৃপাদৃষ্টি রয়েছে বলে অনেকেই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে। তাই ভক্তরা এখানে এলে শুধু মায়ের মন্দিরেই ভোগ চড়ায় না, কল্যাণসাগরের মাছ ও কচ্ছপের জন্য খাবার আনে। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। জনশ্রুতি আছে, কচ্ছপ মৃত্যুর আগে সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে হেঁটে মায়ের মন্দিরের দরজায় চলে আসে। পুরোহিত তখন ওর গলায় মায়ের চরণামৃত ঢেলে দেয়।
প্রতিবেদকের একমাত্র ছেলে এক রাতে স্বপ্ন দেখে মা তাকে বলছেন পাঁঠা দিতে। সে এটিকে নিছক স্বপ্ন ভেবে উপেক্ষা করে। তার বাবা-মাকে স্বপ্নের কথা বলে। ওরাও এতে গুরুত্ব দেয়নি। দু-দিন পর তার মোটর-বাইককে একটা লরি ধাক্কা মেরে চলে যায়। সে রাস্তার পাশে বালির স্তুপে গিয়ে পড়ে। খুব একটা আঘাত লাগেনি। সেদিন রাতেই আবার স্বপ্ন দেখে। তাকে বলা হয় ‘বলেছিলাম শুনলি না। এখনও সময় আছে।’ আবারো উপেক্ষা। ক-দিন পর আবার দুর্ঘটনা। এবার হাতে পায়ে একটু লেগেছে। রাতে আবার স্বপ্ন। এবার সাবধান বাণী – ‘এখনও সময় আছে। নতুবা আরো বড়ো ক্ষতি হবে।’ এবার তার পরিবারের সবাই বিষয়টা খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখল। পরিবারের প্রথা পুজোর কোনো কিছু কেনার সময় দর কষাকষি না করে একদামে একটা পাঁঠা কেনা হয়! যেদিন প্রতিবেদকের পরিবারের সদস্য সদস্যা মাতৃপীঠে যায়, এক অলৌকিক ঘটনা ঘটে। সেদিন খুব ভিড় হয়। অনেক ভক্ত পাঁঠা নিয়ে হাজির! এক উপজাতি পরিবারও এসেছিল পাঁঠা নিয়ে। ছোটো পাঁঠা। অথচ তিন তিনবার চেষ্টা করেও পাঁঠার মুণ্ডচ্ছেদ করা যায়নি, খড়গ স্প্রিং এর মতো ছিটকে যাচ্ছিল। পুরোহিত লোকটাকে চেপে ধরতেই সে সত্যি কথা বলে ফেলে। বলির জন্য সে যে পাঁঠা রেখেছিল ওটা আনেনি। এনেছে মাঠে চরতে আসা অন্য কারোর পাঁঠা। মাতৃপীঠের মাতা ত্রিপুরেশ্বরী যে জাগ্রতা এতকাল তা জনশ্রুতি ছিল। এবার প্রতিবেদকের তা প্রতীতি হল। মা সত্যিই জাগ্রতা।
ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Kaushiki Amavasya : কৌশিকী অমাবস্যা
