Sasraya News

Saturday, February 15, 2025

Mary Leaky : মেরি লিকি : গ্র্যান্ড ডেম অফ আর্কিওলজি

Listen

জীবাশ্ম নিয়ে ক্রমাগত অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে লাগলেন তিনি।
এতটাই কাজ পাগল ছিলেন
মেরি (Mary Leaky) যে আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও চলে যেতে দ্বিধা করতেন না, তবে সেই সময় তিনি তাঁর পোষা ডালমেশিয়ান কুকুরদের সঙ্গে নিয়ে আসতেন তাঁর নিরাপত্তার জন্যে। তারপর কী হল? লিখলেন : রাখী নাথ কর্মকার

 

 

লিকি মেরি… 

 

 

ছোট্ট মেরির (Mary Leaky) গুপ্তধনের বাক্সটিতে কী কী আছে জানো? স্ক্র্যাপার, চাঁছনি, পাথরের ধারালো ছুরি, হাজার হাজার বছর আগে মানুষের তৈরি বিভিন্ন হাতিয়ারের অংশ… আরও আরও কত্ত কিছু! ফ্রান্সের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের সময় গুরুত্বপূর্ণ আর অমূল্য জিনিসপত্র সব সংগৃহীত হয়ে যাবার পরেই সেই টীমের ডিরেক্টর অত্যুৎসাহী মেরিকে অনুমতি দিয়েছিলেন খননকার্যের পর পড়ে থাকা টুকরো-টাকরা প্রত্নসামগ্রী যা মেরি নিজে উদ্ধার করতে পারবে, তা সব হবে ওর একার। সারাদিন ধরে মেরি খুঁজে গিয়েছে তাঁর গুপ্তধন। ভাঙা হোক, সে যে অমূল্য তাঁর কাছে। একাকী ছোট্ট মেরি গালে হাত দিয়ে বসে বসে ভাবে। কতশত প্রশ্ন এসে ভিড় করে তাঁর সবুজ মনের মধ্যে—আচ্ছা,কত যুগ আগে তৈরী হয়েছিল এই অস্ত্রগুলি? কারা তৈরি করেছিল?

 

 

 

প্রায় পনেরো হাজার বছর আগের পুরনো গুহা আবিষ্কৃত হলে ছোট্ট মেরি সেখানে গিয়ে গুহার দেওয়ালে আঁকা সুপ্রাচীন ছবিগুলির নমুনার সামনে গোল গোল চোখে তাকিয়ে থাকত। মেরির বাবা, মা-মিস্টার অ্যান্ড মিসেস নিকোল দু’জনেই ভীষণ ভালবাসতেন প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের স্থানগুলো ঘুরে বেড়াতে। মেরির কাছেও একেকটি গুহা ছিল যেন একেকটি ধনরত্নে পূর্ণ আলিবাবার গুহা, গুহাগুলি দর্শনের অভিজ্ঞতা মেরিকে মুগ্ধ করত। মেরির বাবা কোনও ছোট গুহামুখের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করতে না পারলে ছোট্ট মেরি আর তাঁর মা দু’জনে মিলে গুহা অভিযানে পা বাড়াতেন।
মেরির ছেলেবেলাটি ছিল রোমাঞ্চে, উত্তেজনায় পরিপূর্ণ। বিখ্যাত ব্রিটিশ শিল্পী বাবা এডোয়ার্ড নিকোলের সঙ্গে মেরি ও তাঁর মা-ও ঘুরে বেড়াতেন ইউরোপের নানা জায়গায়। বাবা শহরতলির ছবি আঁকতে বড় ভালবাসতেন। ঘুরে বেড়ানোটা-ই ছিল তাঁদের জীবনের অন্যতম ঘটনা। ট্রেনের দু’খানি সিটের মাঝে ঠেসে রাখা স্যুটকেসের অস্থায়ী বিছানায় ওপরেই ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কেটে গেছে মেরির অনেক চলমান রাত। যাযাবর জীবনহেতু মেরি স্কুলে ভর্তি হতে পারেননি ঠিকই, কিন্তু বাড়িতেই মাবাবার কাছে তাঁর অঙ্ক আর ভাষা শিক্ষার পাঠ শুরু হয়ে গিয়েছিল। তাতে অবশ্য মেরির কোনও দুঃখ ছিল না। বাবামা আর প্রকৃতির কাছে পাঠগ্রহণের সুযোগ তাঁকে অনেক বেশি অভিজ্ঞ করে তুলছিল। কিন্তু… হঠাৎই একদিন মেরির জীবনে অন্ধকার ঘনিয়ে এল। তখন তাঁর মোটে তেরো বছর বয়স, ফ্রান্সে এক সফর চলাকালীন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বাবা মারা গেলেন। প্রবল অর্থকষ্টে পড়ে বাবার আঁকা ছবিগুলি বিক্রি করে মা ভবিষ্যৎটাকে সুনিশ্চিত করার চেষ্টা করতে শুরু করলেন। মা তখন মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত, মেরি কিন্তু ভেবে নিয়েছেন তিনি কী করবেন, হয় প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে কাজ করবেন, নয়ত… দুঃসাহসী মেয়ের মনে উঁকি মেরে যায় গ্লাইডার পাইলট হবার ইচ্ছে। সেই ইচ্ছেই সাময়িকভাবে অদম্য হয়ে উঠলে একটি গ্লাইডিং ক্লাবে তিনি যোগ দিলেন।

 

 

গ্লাইডার হওয়ার স্বপ্ন তাঁর বহুদিনের। কিন্তু হায় কপাল! গ্লাইডার হিসেবে যোগ দেওয়ার পর কিছু দিন যেতে না যেতেই একটা দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়ে তিনি বাধ্য হলেন অন্য কিছু ভাবতে। নিরুপায় মেরি সময় কাটাতে লাগলেন কাছের একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্টরি মিউজিয়ামে প্রত্নতত্ত্বের ওপর বক্তৃতা শুনে শুনে। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত খননকার্যের স্থানগুলিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে যোগ দেবার ইচ্ছে প্রকাশ করে চিঠি দিতে শুরু করলেন সেইসব জায়গায়। ১৯৩০ সালে বেশ কতগুলি খননকার্যে মেরি সহকারী হিসেবে ডাক পেলেন। অভিজ্ঞ, পেশাদার প্রত্নতত্ত্ববিদদের তত্ত্বাবধানে তিনি শিখলেন কীভাবে অতি যত্নের সঙ্গে পাতলা মাটির পরত চেঁছে ফেলে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কণিকা আবিষ্কার করতে হয় যা কিনা কোনও অতি প্রাচীন হাড়ের অংশ বা কোনও অস্ত্রশস্ত্রের অংশ। মেরি দেখেছিলেন কীভাবে দক্ষ প্রত্নতাত্ত্বিকরা যত্নের সঙ্গে ফ্লিন্ট টুল, হাড়, মাটির বস্তুর ভাঙা টুকরোর পু্ননির্মাণ করেন। উৎসাহী মেরি যেখানে যেখানে খননকার্য হয়েছে, নিজেকে যোগ্য সহকারী হিসেবে তুলে ধরেছেন সকলের কাছে। অবসর সময়ে বাবার মতোই মেরি ছবিও আঁকতেন, তাঁর সেই ছবি মানুষের কাছে, ডিরেক্টরদের কাছে তাঁর অনন্যতাকে আরও প্রতিভাত করে তুলেছিল। তাঁর সংগৃহীত জীবাশ্ম আর প্রাচীন হস্তশিল্পের নমুনার বিভিন্ন ছবি ছাপা হতে থাকল বিভিন্ন সায়েন্স ম্যাগাজিনে। পেশাদার প্রত্নতত্ত্ববিদরা তাঁকে গুরুত্ব দিতে শুরু করলেন। বিভিন্ন সেমিনারে, বক্তৃতায় যোগদান করার জন্যে তিনি নিমন্ত্রিত হতে লাগলেন।

 

 

 

 

এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল মেরির স্বপ্নের সাতকাহন। এরই মাঝে একদিন হঠাৎ একটি ‘ডিনার ইভেন্টে’ যোগ দিতে এসে পাশে বসে থাকা যে ব্যক্তিটির সঙ্গে মেরির আলাপ হল, তিনি হলেন গিয়ে পৃথিবীবিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ লুই লিকি! মেরি তখন তাঁর কেরিয়ারের একেবারেই শুরুর অধ্যায়ে—কিন্তু তা সত্ত্বেও ভদ্রলোক কিন্তু মেরির কাজে যথেষ্ঠ আগ্রহ দেখালেন। মেরির আঁকা তাঁর ভাল লেগেছিল, তিনি তাঁর লেখা একটি বইয়ের ছবি আঁকার ভার মেরিকে দিলেন। দু’জনেই আবিষ্কার করলেন প্রত্নতত্ত্বের যে কোনও বিষয় নিয়েই তাঁদের দু’জনের আলাপ-আলোচনা করতে ভাল লাগে। ১৯৩৬ সালে মেরির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলেন তিনি। বিয়ের পরে পরেই দু’জনে পাড়ি দিলেন আফ্রিকা। আফ্রিকার সুবিশাল বন্য সৌন্দর্য, বন্য প্রাণীর উপস্থিতি—সবে মিলে সেই অনন্যসুন্দর দেশ মেরিকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল।
যখন লুই লিকি তাঁর কাজ শুরু করেছিলেন, প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা ছিল, পৃথিবীতে প্রথম মানুষ দেখা গিয়েছিল এশিয়া বা ইউরোপে। কিন্তু লুই আর মেরির আবিষ্কার প্রমাণ করেছিল প্রথম মানুষ দেখা গিয়েছিল আফ্রিকাতে। ধীরে ধীরে মেরির অধ্যাবসায়ে এমন কিছু মানুষের হাড়গোড় পাওয়া গিয়েছিল যেগুলির আনুমানিক বয়স ছিল কল্পনার বাইরে।

 

 

 

 

১৯৪৮ সালে মেরি একটি খুলির কিছু অংশ আবিষ্কার করেন যেটি ছিল প্রায় দুই কোটি বছরেরও বেশি পুরনো। সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে মেরি অক্লান্ত পরিশ্রম করে ছড়ানো-ছিটানো টুকরো টুকরো অংশগুলিকে একত্রিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তখনই মেরি আবিষ্কার করলেন, খুলিটা কোনও বানর গোত্রীয় প্রাণীর যারা ছিল মানুষ আর বানর (এপ) উভয়েরই সাধারণ পুর্বপুরুষ। তিনিই প্রথম এই ধরনের প্রাণীর একটি খুলি আবিষ্কার করেছিলেন, যে প্রাণীটিকে বলা হয়, ‘প্রোকন্সাল’। আদিম মানুষের সন্ধানে এটি ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। আফ্রিকার তানজানিয়ার ‘ওলদুভায় গোর্জে’র কাছের অঞ্চলটা ছিল মেরি আর লুই-এর জীবাশ্ম শিকার করার প্রিয় জায়গা। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এই অঞ্চলের জমি ছিল ধুলো, পাথর আর আগ্নেয়গিরি নিঃসৃত ছাই দ্বারা আবৃত। একসময় ভূমিকম্প ভূমিখন্ডকে সরিয়ে দেয়, নদী কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলকে ধুয়ে দিয়ে যায়, পড়ে থাকে খালি আজকের তিরিশ মাইল দীর্ঘ গিরিখাত। এই অঞ্চলের পাথুরে দেওয়ালগুলির দিকে তাকালে বোঝা যায়, সময়ের পর সময় ধরে পৃথিবীতে কতগুলি স্তর তৈরি হয়েছিল!

বিজ্ঞানীরা কোনও জীবাশ্মের বয়স বলতে পারে তা ভূত্বকের কোনও স্তরে পাওয়া গেছে তা দেখে। ওপরের দিকের স্তরে প্রাপ্ত জীবাশ্ম হাজার বছরে পু্রনো হলেও নিচের স্তরগুলিতে প্রাপ্ত জীবাশ্মের বয়স প্রায় লক্ষ লক্ষ বছরেরও চেয়েও প্রাচীন হয়ে থাকে। ১৯৫৯ সালে মেরি আবিষ্কার করলেন এক খুলির জীবাশ্ম, ‘জিনজানথ্রোপস’। অবশ্য এই খুলিটা তাঁর প্রথম আবিষ্কারের মতো অত পুরনো নয়। এই সময়ের মধ্যেই মেরি আর লুই-এর তিন সন্তান- জোনাথন, রিচার্ড আর ফিলিপও বাবামায়ের সঙ্গে রোদ্দুরে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করতে শিখে গেছে–প্রত্নতত্ত্ব ও নৃতত্ত্ব দুই বিষয়েই শিখে গেছে অনেক কিছু। এমনকি নিজেরা বেশ কিছু আবিষ্কারও করে ফেলেছে। এদিকে মেরি আর লুই একের পর এক আবিষ্কার তাঁদের বেশ বিখ্যাত করে তুলেছিল। অবশ্য লুই যখন পৃথিবীর নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়াতেন নানা জায়গায় বক্তৃতা দেওয়ার জন্যে, সেখানে মেরি ব্যস্ত থাকতেন ‘ওলদুভায় গোর্জে’র কাছেই। জীবাশ্ম নিয়ে ক্রমাগত অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে লাগলেন তিনি। এতটাই কাজ পাগল ছিলেন মেরি যে আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও চলে যেতে দ্বিধা করতেন না, তবে সেই সময় তিনি তাঁর পোষা ডালমেশিয়ান কুকুরদের সঙ্গে নিয়ে আসতেন তাঁর নিরাপত্তার জন্যে।

১৯৭২ সালে একটি বক্তৃতা দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে হার্ট অ্যাটাকে লুই মারা গেলেন। মেরি একা হয়ে গেলেন ঠিকই, কিন্তু কাজের নেশা তাঁকে তাড়িয়ে নিয়ে চলল আরও নতুন কিছু আবিষ্কারের দিকে। লুইকে ছাড়াই তিনি পূর্ব আফ্রিকায় তাঁর কাজ চালিয়ে যেতে লাগলেন। কিছু দিন বাদেই ১৯৭৮ সালে মেরি তার সবচেয়ে বিখ্যাত এবং গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটা করলেন। ‘ওলদুভায় গোর্জে’র দক্ষিণের একটি অংশে মেরি কিছু পায়ের ছাপের জীবাশ্ম আবিষ্কার করলেন-‘লাইটোলি ফুটপ্রিন্টস’। পায়ের ছাপগুলি ছিল মানুষের মতোই কোনও প্রাণীর, যারা দুপায়ে হাঁটত ঋজু হয়ে। দুপায়ে হাঁটাটা এক বিশাল ব্যাপার, যা মানুষকে পৃথক করে অন্য যে কোনও প্রাইমেটদের থেকে। মেরি এও বলতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, পায়ের ছাপগুলি ছিল একটি পুরুষ, নারী আর শিশুর। পায়ের ছাপগুলি ছিল প্রায় পঁয়ত্রিশ লক্ষ বছরের বেশি পুরনো। ১৯৮৩ সালে, সত্তর বছরের মেরি ঘোরাঘুরির কাজ থেকে অবসর নিলেন। কেনিয়ার নাইরোবিতে তাঁর বাড়িতে বসেই তিনি একের পর এক বই আর আর্টিকল লিখে গেছেন। ১৯৯৬ সালে, তিরাশি বছর বয়সে পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার আগেই তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানীয় বিজ্ঞানীদের মধ্যে একজন হয়ে গিয়েছিলেন। ২০১৩ সালে ইংল্যান্ডের ‘রয়্যাল মেল’ তাঁকে সম্মানিত করেছিল-“গ্রেট ব্রিটেনস” স্মারক ডাকটিকিট ইস্যুর বিষয় হিসাবে ছয়জন বিখ্যাত ব্যক্তির মধ্যে একজন ছিলেন মেরি লিকি।

ছবি : আন্তর্জালিক

 

আরও পড়ুন : Buddhadeb Bhatacharjee : আবেগঘন বিধানসভা চত্বর, আলিমুদ্দীনে বাঁধভাঙা ভিড় কর্মীসমর্থকদের

 

 

 

এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment