Sasraya News

Male Escort : নীরব শারীরিক চাহিদার গোপন বাজার: বিশ্বজুড়ে বাড়ছে পুরুষ দেহব্যবসা

Listen

বিকল্প জীবনের দিকে হাঁটা। দেহব্যবসা শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে নারীদেহের বানিজ্যিক ব্যবহার। অথচ, এই পেশায় পুরুষের অংশগ্রহণও দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। আন্তর্জাতিকভাবে “মেল এসকর্ট” (Male Escort) বা “জিগোলো” (Gigolo) নামেই পরিচিত এই পেশার পুরুষ কর্মীরা। তাদের ব্যবসা বিশেষ করে একাকী নারীদের কিংবা অর্থবান ক্লায়েন্টদের সঙ্গে। পশ্চিমী দেশ থেকে শুরু করে ভারত, এমনকী পশ্চিমবঙ্গের শহরাঞ্চলেও এই ব্যবসা এক নিঃশব্দ গতিতে বিস্তার লাভ করছে। এই ফিচারে আমরা খতিয়ে দেখব, পুরুষ দেহব্যবসার পেছনে থাকা সমাজ-মানসিকতা, আন্তর্জাতিক ও ভারতীয় প্রেক্ষাপট এবং গোপননীয়ভাবে বৃদ্ধি পাওয়া এই পেশার বাস্তব। লিখেছেন : কৌশিক রায়
-প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

চাহিদা তৈরি করছে সমাজের বদলানো গঠন

বিগত দশকগুলিতে নারীদের আর্থিক স্বাধীনতা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। উচ্চশিক্ষিত, পেশাগতভাবে প্রতিষ্ঠিত, অবিবাহিত কিংবা বিবাহবিচ্ছিন্ন একক নারীরা পশ্চিমি দেশগুলিতে বহু আগেই এসকর্ট পরিষেবা গ্রহণকে স্বাভাবিক বিষয় বলে মেনে নিয়েছেন। এখন সেই সংস্কৃতি ছড়াচ্ছে এশিয়াতেও। ভারতের মুম্বাই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, কলকাতা কিংবা গোয়ার মতো শহরে অনেক নারীরই আর্থিক সক্ষমতা থাকলেও পারিবারিক, সামাজিক, মানসিক বা যৌন চাহিদার জটিল সমীকরণে একজন “সহজলভ্য, নিয়ন্ত্রিত, নির্ভরযোগ্য পুরুষসঙ্গী” খুঁজতে গিয়ে জিগোলোদের শরণাপন্ন হন। অন্যদিকে, বিশ্বজুড়ে বাড়ছে বৃদ্ধ নারীর সংখ্যাও। যাঁরা একাকীত্ব, হতাশা ও শারীরিক সংস্পর্শের চাহিদায় জিগোলোদের পছন্দ করেন, পারস্পরিক চুক্তিতে। একটি ব্রিটিশ গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পুরুষ দেহব্যবসার চাহিদার একটি বড় অংশ আসে ৩৫-৬০ বছর বয়সি নারীদের কাছ থেক। তাঁরা সামাজিক নিরাপত্তা খোঁজার পাশাপাশি শরীরের প্রয়োজনও মেটাতে চান। তবে কোনও দায়বদ্ধতা ছাড়াই।

 

-প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

পেশাদারিত্বে গড়ে উঠছে ছদ্ম জগৎ 

আধুনিক জিগোলোরা (Gigolo) শুধুমাত্র যৌনসঙ্গী নন। বরং ‘কম্প্যানিয়ন সার্ভিস’-এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিশেষ ইভেন্টে সঙ্গ দেওয়া, ভ্রমণের সময় ক্লায়েন্টের সঙ্গে থাকা, মানসিক কথোপকথনে পারদর্শিতা এসব এখন এক ধরনের প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে তৈরি হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে “জিগোলো সার্ভিস প্ল্যাটফর্ম” বা “মেল এসকর্ট ডিরেক্টরি” নামক ওয়েবসাইটগুলি ঘাঁটলেই দেখা যায়, কিছু নির্দিষ্ট চার্জের বিনিময়ে পুরুষরা নির্ধারিত সময়ের জন্য বুকিং নিতে পারেন। অনেক সময় পরিচয় গোপন রেখে এই পেশা চালানো হয়।ভারতে এই ব্যবসা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনলাইন অ্যাপ কিংবা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে চলে। “জিগোলো জয়েনিং সার্ভিস” নামে একাধিক ওয়েবসাইট রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন বহু যুবকরা নিজেদের নাম রেজিস্টার করেন কাজের খোঁজে। কলকাতা ও ব্যাঙ্গালোরে সক্রিয় কিছু এজেন্সি নিয়মিত মেল ক্লায়েন্ট ও ফিমেল ক্লায়েন্টদের সংযোগ ঘটায়।তবে এই পেশায় না আছে সরকারি স্বীকৃতি, না আছে সুরক্ষার নিশ্চয়তা। একরকম ‘ছায়া জগৎ’ তৈরি হয়ে চলেছে।

-প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

অর্থ ও প্রলোভনের ফাঁদে বহু তরুণ

অর্থ উপার্জনের সহজ রাস্তা, চাকরির অনিশ্চয়তা, বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিলাসবহুল জীবনযাপনের প্রলোভন বহু তরুণকে ঠেলে দেয় এই পেশায়। “আমার প্রথম ক্লায়েন্ট ছিলেন ৪৭ বছরের এক মহিলা, একা থাকতেন। আমি তখন কলেজে পড়ি। শুধু ডিনার আর কিছু সময় গল্প করার জন্য আমাকে ৬ হাজার টাকা দিয়েছিলেন,” বলছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক, যিনি কলকাতায় জিগোলো হিসেবে কাজ করেছেন। এই কাজ অনেক সময় শারীরিক পরিশ্রমের থেকে বেশি মানসিক ভার বহনের। নিরবিচারে শরীর দেওয়া, অসুখ বা যৌন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা, পুলিশের নজরদারি বা ব্ল্যাকমেলিং-এর ভয় এসব ওদের তাড়া করে থাকে। তাছাড়া, সমাজ এখনও ‘পুরুষ যৌনকর্মী’দের প্রতি কৌতূহল, ঘৃণা ও অবজ্ঞা তিনটি অনুভবেই পরিচালিত। অনেকেই পরিবাররের কাছে গোপন রাখেন তাঁদের পেশা।

-প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

আইন, নীতিগত দৃষ্টিকোণ ও ভবিষ্যতের প্রশ্ন

ভারতে দেহব্যবসা নিষিদ্ধ নয়, তবে এটিকে চালানোর পরিকাঠামোগুলি (যেমন দালালি, পণ্য হিসেবে সেবা বিক্রি, গণ্য ক্লায়েন্ট সংগ্রহ) আইনের পরিপন্থী। ফলে জিগোলোদের ক্ষেত্রে এই সীমারেখাগুলি আরও অস্পষ্ট। আইনি কাঠামো না থাকায় যৌন হয়রানি বা প্রতারণার শিকার হলে পুরুষ যৌনকর্মীদের পক্ষে ন্যায্য বিচার পাওয়া দুরূহ। এরফলে এই পেশার মানুষদের সামাজিক সুরক্ষা তো নেই-ই, বরং বিপদের সম্ভাবনাই অনেক অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পেশার অস্তিত্ব সমাজের যৌনতা সম্পর্কে দ্বিচারিতা ও নীরব চাহিদার ইঙ্গিত দেয়।

-প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

যতদিন না যৌনতা, সম্পর্ক ও দেহব্যবসা নিয়ে উন্মুক্ত ও বাস্তব সম্মত আলোচনা হয় এই ‘ছায়া বাজার’ বাড়তেই থাকবে। অনেকেই জানেন আবার জানেন না, অদৃশ্য জগতের অস্তিত্ব পুরুষ যৌনকর্মীদের ঘিরে এক অদ্ভুত নীরবতা রয়েছে। সমাজের চোখে তাঁরা অদৃশ্য। অথচ, তাঁরা বহু মানুষের একাকীত্বের সঙ্গী, অপ্রকাশিত চাহিদার শরিক। কখনও শোষিত, কখনও চালাক এই ব্যবসার পুরুষরা সমাজের সবচেয়ে অস্বস্তিকর অথচ বাস্তব প্রশ্নগুলির সামনে আমাদের দাঁড় করায়।এই পর্দার আড়াল তুলে দেখা আমাদের দায়, কারণ বাস্তবতা উপেক্ষা করে সমাজ কখনও টেকসই হতে পারে না।

ছবি : প্রতীকী
আরও পড়ুন : Sex : যৌন সম্পর্ক বিষয়ে আপনি সঠিক জানেন তো?

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment

Also Read