Sasraya News

Wednesday, June 18, 2025

Madhubala : আনারকলির অভিমান, প্রেমে ব্যথিত মধুবালার কিছু না বলা কথা

Listen

তনুজা বন্দ্যোপাধ্যায় ★ সাশ্রয় নিউজ : হাজারও চোখ যখন মুগ্ধ হয়ে তাকাত, হাজারও হৃদয় যখন ধুকধুক করত তাঁকে এক ঝলক দেখার আশায়, তখনই মধুবালা (Madhubala) ছিলেন বলিউডের রুপোলি পর্দার রাজকন্যা। তবু সেই চোখে ছিল এক চিরস্থায়ী হাহাকার। রঙিন পর্দার আড়ালে, আলোঝলমলে জীবনের গভীরে জমে ছিল গভীর অন্ধকার। তাঁর জীবনের প্রেম কাহিনি যেন এক অসমাপ্ত চিঠি। যেটি কখনও পাঠানো হয়নি, কখনও পৌঁছয়ওনি।

মধুবালা ও কিশোর কুমার। ছবি : সংগৃহীত

১৯৬০ সালে বলিউডের জনপ্রিয় গায়ক ও অভিনেতা কিশোর কুমারকে (Kishore Kumar) বিয়ে করেন মধুবালা (Madhubala and Kishore Kumar marriage)কিন্তু সে সম্পর্ক ছিল কি আদৌ হৃদয়ের? নাকি এক অপ্রাপ্তির প্রতিশোধ? অনেকের মতেই মধুবালার এই বিয়ে ছিল এক অভিমানী সিদ্ধান্ত। তাঁর ছোট বোন মধুর ভুসরি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “জেদ আর রাগ এই দুই মিলে দিদির বিয়ে হয়েছিল কিশোর কুমারের সঙ্গে। আসলে সে সময় দিলীপ কুমার (Dilip Kumar)-এর প্রতি দিদির অভিমান এতটাই গভীর ছিল যে, তার থেকেই এই সিদ্ধান্ত।” অন্যদিকে, দিলীপ কুমার ও মধুবালার প্রেম কাহিনি কোনও রুপকথার চেয়েও কম নয়।

দীলিপ কুমার ও মধুবালা। ছবি : সংগৃহীত

একদিকে পর্দায় তাঁদের রসায়ন যেমন মুগ্ধ করত দর্শকদের, তেমনই বাস্তবেও তাঁরা একে অপরের প্রতি গভীরভাবে অনুরক্ত ছিলেন। কিন্তু নিয়তির পরিহাসে সেই প্রেমকে বাস্তবের পরিণতি দেওয়া সম্ভব হয়নি। “মুগল-ই-আজম”-এ মধুবালা যখন আনারকলি হয়ে ‘কাঁটো কো মুরছানে কা কোয়াফ নেহি’ সংলাপ বলেছিলেন, তখন তাঁর চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়েছিল সত্যিকারের জল। কারণ বাস্তবেও তখন তাঁর জীবন ছিল নিদারুণ যন্ত্রণার।

মধুবালা। ছবি : সংগৃহীত

বিয়ের পরও সুখ অধরা ছিল মধুবালার জীবনে। কিশোর কুমারের সঙ্গে দাম্পত্য জীবনে ছিল না হৃদয়ের মেলবন্ধন বলেই শোনা যায়। কিশোর কুমার নাকি তাঁকে সেভাবে সময় দিতেন না। এমনকী তাঁর অসুস্থতার দিনগুলোতেও অনেকটা তাঁকে সময় একা কাটাতে হতো। এক ঘনিষ্ঠ সূত্রের কথায়, “কিশোর কুমার তাঁকে খুব একটা বোঝেননি। মধুবালাকে তিনি পাঠিয়েছিলেন একটি অ্যাপার্টমেন্টে, যেখানে কেয়ারটেকার ছাড়া আর কেউ থাকত না।” এই নিঃসঙ্গতা আরও গভীর করে তোলে তাঁর মানসিক যন্ত্রণা। মধুবালার জীবনের শেষ পর্ব কাটে হৃদরোগের সঙ্গে লড়াই করে। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে, ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি প্রয়াত হন। শেষ ন’বছর তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন। এই সময়েই তাঁর মন থেকে উঠে আসে জীবনের প্রতি গভীর অনুভূতির কথা। এক সাক্ষাৎকারে মধুবালা বলেছিলেন, “আমি আমার জীবনটা সব সময় মন দিয়েই চালিয়েছি, তাই হয়ত এত বেশি আঘাত পেয়েছি। আমি খুব আবেগপ্রবণ। কোরান ও বাইবেল শেখায়, তুমি যদি ভাল করো, তোমার সঙ্গেও ভাল হবে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে সেটা হয়নি।” তাঁর কথার এই ভার জীবন নিয়ে গভীর প্রশ্ন তোলে। তিনি কি সত্যিই চেয়েছিলেন কিশোর কুমারকে জীবনসঙ্গী হিসেবে? নাকি প্রেমে বারবার হেরে গিয়েই অবশেষে বেছে নিয়েছিলেন এক আত্মরক্ষার পথ? একাধিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মধুবালার শেষ ইচ্ছাগুলোর মধ্যে একটি ছিল আবারও দিলীপ কুমারের সঙ্গে কাজ করা। একটি সাক্ষাৎকারে দিলীপ কুমার বলেন, “শেষবার দেখা করতে গেলে মধুবালা আমায় বলেছিল, যদি আমি সুস্থ হই, তুমি আমার সঙ্গে একটা ছবি করবে তো?” এ এক অনন্ত অনুরোধ, যেখানে কণ্ঠে লুকিয়ে ছিল গভীর চাওয়া, হয়ত অপরিপূর্ণ প্রেমের এক শেষ আকুতি।

মধুবালা। ছবি : সংগৃহীত

মধুবালার জীবন তাই শুধু রূপের গল্প নয়, তা এক গভীর বেদনার আখ্যান। প্রেমের জন্য কাঙাল, অথচ সমাজের চোখে এক পরিপূর্ণা। তাঁর অসহায় কান্না। রাত জেগে ফেলে আসা ভালবাসার মানুষকে ভাব! সব মিলিয়ে যেন এক চিত্রনাট্য, যেটার শেষ ছিল না, পরিণতিও ছিল না। একটা সময় ছিল, যখন মধুবালা বলতেন, “আমি যদি আবার জন্মাই, আমি চাই না আমার মতো কেউ হোক।” আজ এত বছর পরেও তাঁর বলা এই কথাগুলো শুনলে শিরদাঁড়া দিয়ে কাঁপন ধরে। কারণ তিনি ছিলেন শুধু মধুবালা নন। তিনি ছিলেন এক এমন নারী, যাঁর রূপের বাইরেও ছিল এক অসাধারণ হৃদয়, যে হৃদয় আজও অনেক প্রেমিক মনকে কাঁদায়।
ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Astrology : আপনিই কোটিপতি হতে যাচ্ছেন না তো? মিলিয়ে নিন…

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment