



সাশ্রয় নিউজ ★সন্তকবীরনগর : সন্ত কবীর নগর (Sant Kabir Nagar) জেলার ছোট এক গ্রামে শুরু হয়েছিল এক বিয়ের আয়োজন। কিন্তু সেই বিয়ে টিকল মাত্র তিন দিন। তৃতীয় দিনেই স্বামীর ঘর ছেড়ে প্রেমিকের সঙ্গে পালাল নববিবাহিতা। তারপর শুরু হল নাটক। পথের মাঝখানে চিৎকার, পুলিশি হস্তক্ষেপ, আর শেষমেশ স্বামীরই ছাড়পত্র। ঘটনার সূত্রপাত গত ১০ জুন। ওই দিন ধনঘাটা (Dhanghata) থানা এলাকার এক তরুণীর বিয়ে হয় কাছাকাছি গ্রামে। বাড়ির চাপে পড়ে এই বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল মেয়েটি বলে খবর। কিন্তু তাঁর মন যে অন্যত্র ছিল, তা বোঝা গেল বিয়ের দুই দিন পরই। কারণ, বিয়ের তৃতীয় দিন সকালে তিনি সোজা শ্বশুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যান। তরুণীর পরিবার যখন মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার খবর জানতে পারে, তখন থেকেই শুরু হয় তল্লাশি। গোরখপুর (Gorakhpur) এলাকায় মেয়েটিকে তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে দেখে ফেলেন তাঁর ভাই। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের ধরে তিনি বাড়ি ফেরানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ফেরার পথে, সহজনওয়া (Sahjanwa) থানা মোড়ে তরুণী রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার শুরু করেন। নিজের সিদ্ধান্তের কথা স্পষ্ট করে জানান, ‘‘আমি আমার প্রেমিকের সঙ্গেই থাকব। যার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে, তাঁর সঙ্গে আমি এক মুহূর্তও থাকতে পারব না।’’ ওই ঘটনার আকস্মিকতায় জমে যায় ভিড়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ভাই পাশে থাকা থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে দু’জনকেই থানায় নিয়ে যায়। সেখানে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। তরুণী জানান, ছ’বছর ধরে তিনি প্রেম করছেন গ্রামেরই একজন যুবকের সঙ্গে। পরিবারের চাপে পড়ে তাঁকে অন্য ছেলেকে বিয়ে করতে হয়। তবে তাঁর মন আজও বাঁধা সেই ছেলেটিতেই। তাই তিনি বিয়ের তৃতীয় দিনেই সোজা প্রেমিকের সঙ্গে বেরিয়ে পড়েন নতুন জীবনের খোঁজে।
ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই থানায় বসে এক প্রকার ‘পঞ্চায়েত’-এর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। তরুণী, প্রেমিক, ভাই ও পুলিশ সকলেই আলোচনায় বসেন। শেষে পুলিশ দেখে নেয়, দু’জনই সাবালক। আর তরুণীর নিজের সিদ্ধান্ত পরিষ্কার। ফলে কোনও জোর জবরদস্তির চেষ্টা না করে, তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। সহজনওয়া থানার ওসি মহেশ চৌবে (Mahesh Chaubey) বলেন, “তরুণীর পরিবার তাঁকে খুঁজে পেয়ে থানায় এনেছিল। কিন্তু তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, স্বামীর সঙ্গে তিনি থাকতে চান না। যেহেতু সবাই সাবালক, তাই আমাদের পক্ষে আইনত বাধা দেওয়ার কিছু ছিল না। আমরা কেবল সন্ত কবীরনগর থানাকে তথ্য দিয়ে তাঁদের ছেড়ে দিই।”
উত্তরপ্রদেশের সন্ত কবীরনগর জেলার ওই ঘটনার সবচেয়ে বিস্ময়কর অংশ আসে তরুণীর স্বামীর প্রতিক্রিয়ায়। থানা চত্বরে তরুণীর ভাই ফোন করে জামাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। ছেলেটি ফোনে প্রথমেই শোনেন, তাঁর স্ত্রীকে প্রেমিকের সঙ্গে পাওয়া গিয়েছে। তারপর একটি বাক্যেই সব মিটিয়ে দেন, “ছেড়ে দাও, ওকে আর ফিরিয়ে আনার দরকার নেই।” অন্যদিকে, পুলিশের সামনেই তরুণী জানান স্পষ্ট করে বলেন, “এই সম্পর্ক আমি চাইনি। যাঁর সঙ্গে ছ’বছরের সম্পর্ক, আমি তাঁর সঙ্গেই জীবন কাটাতে চাই।”
তাঁর এই অবিচল সিদ্ধান্তের সামনে একদিকে পরিবার হার মানে, অন্যদিকে সমাজের তথাকথিত নিয়ম ভেঙে নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করে এই তরুণী। প্রেম, স্বাধীনতা আর নিজের পছন্দের জন্য দাঁড়িয়ে গিয়েছেন তিনি, কোনও রকম লজ্জা বা ভয়ের তোয়াক্কা না করেই। যদিও এমন ঘটনায় সমাজ বিভক্ত। কেউ বলছেন, “স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে সম্পর্কের মূল্য কমে যাচ্ছে”, আবার কেউ বলছেন, “নিজের পছন্দকে সম্মান জানিয়ে মেয়েটি সাহসিকতার নজির গড়েছে।” এই ঘটনা আরও একবার বুঝিয়ে দিল, সমাজের চাপ ও দায়বদ্ধতার বাইরে গিয়ে যখন নিজের ইচ্ছার কথা বলে কেউ, তখন হয় চাপে থেমে যেতে হয়, নয়ত তৈরি করতে হয় অন্য এক ইতিহাস। এই তরুণী দ্বিতীয় পথটাকেই বেছে নিয়েছেন।
ছবি : প্রতীকী
আরও পড়ুন : Siliguri red light area incident : শিলিগুড়ির নিষিদ্ধপল্লিতে রক্তাক্ত হামলা
