Sasraya News

Saturday, February 15, 2025

Loksabha Election 2024 : পশ্চিমবঙ্গের ভোট রাজনীতির কড়চা ৮ 

Listen

‘পশ্চিমবঙ্গের ভোট রাজনীতির কড়চা’ -এর অষ্টম পর্ব। কলম ধরলেন বাংলার রাজ্য রাজনীতি নিয়ে সাশ্রয় নিউজ এর পক্ষে প্রতিবেদক অগ্নি প্রতাপ

 

“হুগলি” নামটা সম্ভবত “হোগলা” থেকে উদ্ভূত হয়েছে।

১৭৯৫ সালে ইংরেজরা প্রশাসনিক কারণে হুগলী জেলা তৈরি করেছিল। আদি সপ্তগ্রাম, ব্যান্ডেল ও হুগলি ছিল পর্তুগিজদের উপনিবেশ।অর্থনীতি ও শিল্পে উন্নত হলেও জেলার পঞ্চাশ শতাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। পাট চাষ ও পাট শিল্পে একটি প্রধান কেন্দ্র।

 

 

তিনটি লোকসভা কেন্দ্র নিয়ে এই জেলা। 

১) হুগলি ২) আরামবাগ ৩) শ্রীরামপুর। 

 

২০১৯ সালে হুগলি লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় ৪৬.০৬ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ডাক্তার রত্না দে নাগ ৪১.০৩ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন।

 

 

হুগলি কেন্দ্রে তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি ৩৪ শতাংশের বেশি। সংখ্যালঘু প্রায় ১৬ শতাংশ।

 

 

২০১৯ সালে আরামবাগ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী অপরূপা পোদ্দার ৪৪.১৫ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। বিজেপি প্রার্থী তপন কুমার রায় ৪৪.০৮ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন।

 

 

আরামবাগ কেন্দ্রে তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি প্রায় ৩৪ শতাংশ। সংখ্যালঘু ১৬.৬ শতাংশ।

 

 

২০১৯ সালে শ্রীরামপুর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী বিশিষ্ট আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৪৫.৫ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয়বার নির্বাচিত হন। বিজেপি প্রার্থী দেবজিৎ সরকার ৩৮.৪৭ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন।

 

 

শ্রীরামপুর কেন্দ্রে তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি প্রায় ২৫ শতাংশ। মুসলিম সংখ্যালঘু প্রায় ১৮.৭৬ শতাংশ।

 

 

২০০৬ সালে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্ব বামফ্রন্ট সরকার শেষবারের মতো ক্ষমতায় আসীন হন। ১০০০ একর জমি টাটা ন্যানো কারখানার জন্য হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু ২০০৭ সালে প্রায় ৩০ শতাংশ জমির মালিক বা অনিচ্ছুক জমিদাতা সরকারের দেওয়া চেক নিতে রাজি না হওয়ায় শুরু হয় মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব তৃণমূল কংগ্রেসের ধর্না ও গণ আন্দোলন। তবে এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শ্রেণী বিন্যাস ও শ্রেণী বিভাজন বিতর্ক দানা বাঁধে।

 

 

সাল ২০০৮ আগস্ট মাসে গণ আন্দোলনের জেরে টাটা ন্যানো কোম্পানির নিযুক্ত কর্মীরা হামলার সম্মুখীন হন। ফলস্বরূপ টাটা কোম্পানির কর্ণধার রতন টাটা সিঙ্গুরে কাজ বন্ধ রাখেন এবং পরবর্তীকালে গুজরাটে ন্যানো কোম্পানি স্থানান্তরিত করেন। সমগ্র শিল্প মহলে কারখানা না হবার কারণে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। 

টাটা কোম্পানি মামলা করলে ৩০ শে অক্টোবর ২০২৩ আর্বিটেশন ট্রাইবুনাল পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ  টাটা কোম্পানিকে ৭৬৬ কোটি টাকা দেওয়ার রায় দেন। 

এই প্রসঙ্গে বিরোধীরা সরকারকে তীব্র ভাষায় ধিক্কার জানিয়ে প্রতিবাদ করে।

 

 

বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতাচ্যুত হবার এই সিঙ্গুর আন্দোলন একটি বড় কারণ। প্রতিটি কৃষকের মনে জন্মাতে থাকে একরাশ চিন্তা, জমিহারা হতে হবে এই ধারণায় বামফ্রন্ট ২০১১ সালে নির্বাচন সম্পূর্ণরূপে ধরাশায়ী হয়।

গত ২০ মে ২০২৪ সাল পঞ্চম দফা লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী রচনা ব্যানার্জি মধ্যে। রাজনৈতিক বিশ্লেষণ হচ্ছে শেষ পর্যন্ত বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় জয়ী হবার সম্ভাবনা বেশী।

 

 

২০১৯ সাল আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্র তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ের ব্যবধান খুবই সামান্য থাকার জন্য বিজেপি এখনকার নির্বাচনে অনেকটাই এগিয়ে থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছে। এই আসনটি তপশিলি সংরক্ষিত আসন। একদা সাতবারের বিজয়ী সিপিআই (এম) সাংসদ অনিল বসু তার কুরুচিপূর্ণ কথার জন্য আজও চর্চিত। সিঙ্গুর আন্দোলনের পর থেকে বামফ্রন্টের রাস হালকা হতে থাকে। সরকার পরিবর্তনের পর থেকে তৃণমূল কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত ঝাঁপিয়ে পড়ে এই আসনটি জয়লাভ করার জন্য। এই লোকসভাকে কেন্দ্র করে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, ভোট লুট, স্বজন পোষণ বিভিন্ন ইস্যুতে বিরোধীরা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন। 

 

 

বর্তমানে আরামবাগ কেন্দ্রটি তৃণমূল কংগ্রেসের তুমুল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার। গত বারের সাংসদ অপরূপা পোদ্দার কে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী না করায় তা ভীষণভাবে প্রকট হয়ে পড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বিরোধী শক্তি হিসেবে ভারতীয় জনতা পার্টির সমর্থন বৃদ্ধি পাওয়ায় তৃণমূল কংগ্রেস এই আসনে ভীষণ চাপে পড়ে যাবার কারণ।

 

 

২০১৯ আরামবাগ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস তার নিকটবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী তপন কুমার রায়ের থেকে মাত্র ০.৮ শতাংশ বেশি ভোট পেয়েছিলেন।

গত ২০শে মে ২০২৪ পঞ্চম দফা লোকসভা নির্বাচনে এই আসনটি থেকে বিজেপি প্রার্থী অরূপকান্তি দিগার ও তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মিতালি বাগের লড়াইয়ে বিজেপি প্রার্থীর জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

 

 

শ্রীরামপুর লোকসভা বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি। যেখানে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সাতটি বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীরা বিজয়ী হন। শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রে মাননীয় সাংসদ কাজের নিরিখে ভালোই করেছেন। মাঝে মধ্যে সাংসদের বিতর্কমূলক অঙ্গভঙ্গি এবং কথাবার্তা নিয়ে বিরোধী থেকে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদে গর্জে উঠেছেন।

 

 

বর্তমান পরিস্থিতিতে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতি, রেশন দুর্নীতি,কয়লা,গরু পাচার, বালি, পৌরসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে লাগামহীন সন্ত্রাস, ভোট লুট কাণ্ডে বহু নেতা মন্ত্রী অভিযুক্ত এবং বিচারাধীন জেলে থাকার জন্য বিরোধীদের লাগাতার আক্রমণের পর আক্রমণ তৃণমূল কংগ্রেসকে যথেষ্ট বিব্রত করছে।

 

 

শ্রীরামপুর লোকসভা আসনে অন্তর্গত হাওড়া জেলার দু’টি বিধানসভা কেন্দ্র এবং বাকি ৫ টি কেন্দ্র মিলিয়ে অবাঙালি ভোটের বিশাল ৪০ শতাংশে বেশি এই কেন্দ্রে প্রভাব রয়েছে আর এখানেই এই লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশেষ করে মাননীয় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী বিশিষ্ট আইনজীবী কবির শংকর বসু ও সিপিআইএম প্রার্থী ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের নেত্রী দিপ্সিতা ধর বিভিন্ন ইস্যুতে যথেষ্ট চাপে ফেলে দিয়েছেন।

গত ২০ মে ২০২৪ পঞ্চম দফা লোকসভা নির্বাচনে  শ্রীরামপুর লোকসভা নির্বাচন ক্ষেত্রটি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। রাজনৈতিক বিশ্লেষণে মাননীয় তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী এগিয়ে থাকলেও ভোট কাটাকাটি এবং অবাঙালি ভোট যেকোনো প্রার্থীর জয়ী হওয়ার জন্য নির্ণায়ক ভূমিকা নেবে।

 

ছবি : আন্তর্জালিক 

আরও পড়ুন : Loksabha Election 2024 : পশ্চিমবঙ্গের ভোট রাজনীতির কড়চা ৭

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment