Sasraya News

Saturday, February 8, 2025

Loksabha Election 2024 : পশ্চিমবঙ্গের ভোট রাজনীতির কড়চা ৫

Listen

পশ্চিমবঙ্গের ভোট রাজনীতির কড়চা’ -এর আজকে পঞ্চম পর্ব। কলম ধরলেন বাংলার রাজ্য রাজনীতি নিয়ে সাশ্রয় নিউজ এর পক্ষে প্রতিবেদক : অগ্নি প্রতাপ 

 

শ্চিমবঙ্গের এই বর্ধমান জেলাকে এক সময় শস্য ভাণ্ডার বলা হত। ২০১৭ সালে ৭ এপ্রিল এই বর্ধমান জেলাকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়, পূর্ব বর্ধমান এবং পশ্চিম বর্ধমান।

পূর্ব বর্ধমান জেলা ধান চাষের জন্য বিখ্যাত। অপরদিকে পশ্চিম বর্ধমান জেলা কয়লা খনি ও লৌহ ইস্পাতের জন্য বিখ্যাত। পূর্ব বর্ধমান জেলার লোকসভার আসন সংখ্যা একটি যা বর্ধমান পূর্ব লোকসভা নামে পরিচিত। পশ্চিম বর্ধমান জেলার লোকসভার আসন সংখ্যা দু’টি। একটি বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা আসন নামে পরিচিত। দ্বিতীয়টি হল আসানসোল লোকসভা আসন।

 

 

পূর্ব বর্ধমান জেলার মোট জনসংখ্যার মধ্যে তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি ৩৭ শতাংশের অধিক। সংখ্যালঘু ভোট ২২.১ শতাংশ।

 

 

২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সুনীল কুমার মণ্ডল ৪৪.৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। অপরদিকে বিজেপি প্রার্থী পরেশ চন্দ্র দাস ৩৮.৩২ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন।

 

 

______________________________________________

২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেক ক্ষেত্রে লাগাম ছাড়া দুর্নীতি এবং বহু নেতা, মন্ত্রীদের দুর্নীতির সঙ্গে নাম জড়িয়ে পড়া ও গোষ্ঠী কোন্দল। বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেস নিজেদের গড় ধরে রাখতে এবং হারানো জমি ফিরে পেতে তিন কেন্দ্রেই বহিরাগত প্রার্থী নির্বাচন করেছেন।

______________________________________________

 

বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা আসনে তপশিলি জাতি এবং তপশিলি উপজাতি ৩০ শতাংশের অধিক। সংখ্যালঘু ভোট প্রায় ২০ শতাংশ। ২০১৯ সালের বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী এসএস আহলুওয়ালিয়া ৪১.৭৬ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। অপরদিকে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মমতাজ সংঘমিত্রা ৪১.৫৯ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন।

 

 

আসানসোল লোকসভা আসনে তপশিলি জাতি এবং তপশিলি উপজাতি ৩৩.৭ শতাংশ। সংখ্যালঘু মুসলিম ২৯.৭৩ শতাংশ।

 

 

২০১৯ সালে আসানসোল লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় ৫১.১৬ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। অপরদিকে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী শ্রীমতী মুনমুন সেন ৩৫.১৯ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন।

 

 

অবিভক্ত বর্ধমানকে বামফ্রন্টের লাল দুর্গ বলা হত।
ষাটের দশকের মাঝামাঝির পর থেকেই রাজনৈতিক সংঘর্ষ বাড়তে থাকে। বামপন্থী মূলত সিপিআই (এম) এবং জাতীয় কংগ্রেস রাজনৈতিক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

 

 

১৯৭০ সালে ১৭ মার্চ বর্ধমান শহরে ঘটে যায় নারকীয় রাজনৈতিক সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ড। রাজনৈতিক ইতিহাসে এতটাই বর্বরাচিত হত্যাকাণ্ড যা আগে কেউ শোনেননি। সাঁইবাড়ির তিন পুত্র এবং এক গৃহ-শিক্ষকের হত্যা লীলা চলে তাদের মা ও স্ত্রীদের সামনে। এই হত্যাকাণ্ড এতটাই নক্কারজনক এবং ভয়াবহ ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী বর্ধমান ছুটে আসেন। এই হত্যাকাণ্ডের যেসব ক্যাডার সরাসরি যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়, পরবর্তী বামফ্রন্ট সরকারের আমলে কেউ কেউ পার্টির উচ্চ পদে বসেছিলেন আবার মন্ত্রী হয়েছিলেন।

 

 

১৯৭৭ সালে জাতীয় কংগ্রেসের সরকারকে পরাস্ত করে বিধানসভা দখল করে বামফ্রন্ট। দীর্ঘ ৩৪ বছর শাসনকালে জন্মাতে থাকে দম্ভ এবং অহঙ্কার।

 

 

শীর্ষ নেতাদের থেকে প্রভাবিত হয়ে নিচুতলা ক্যাডাররা সাধারণ মানুষের কাছে ভয়-ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এরপর সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের আন্দোলন বামফ্রন্ট সরকারের কফিনে মেরে দেয় সেই শেষ পেরেক। পরিনাম, যে বর্ধমান জেলা বামফ্রন্টের আঁতুড়ঘর বা লাল দূর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল ২০১১ সালে ক্ষমতা বদলের মাধ্যমে তা বিলীন হয়ে যায়।

 

 

২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস এবং জাতীয় কংগ্রেস জোট বামফ্রন্ট সরকারকে পরাজিত করে। সরকার বদল হবার পর ২০১৪ সালে বর্ধমান পূর্ব এবং বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা আসন থেকে প্রথমবার তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সুনীল মণ্ডল এবং মমতাজ সংঘমিত্রা নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সুনীল মণ্ডল দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হবার পর ২০২১ সালে বর্তমান বিরোধী দলনেতা মাননীয় শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে বিজেপিতে যান এবং ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি আসা-অনুরূপ ফল না করার ফলে তিনি পুনরায় তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরে যান।

 

 

দু’বারের (২০১১ ও ২০১৬) বিজয়ী কালনা বিধানসভার বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক শ্রী বিশ্বজিৎ কুণ্ডু, তিনিও বর্তমান বিরোধী দলনেতার হাত ধরে দলত্যাগ করে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করেন ২০২১ সালের বিধানসভার আগে। এবং এখনও পর্যন্ত তিনি ভারতীয় জনতা দলেই রয়েছেন। ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচন জোট সরকার গঠনের পর ২০১২ সালের প্রথম TET(Teacher Eligibility Test) পরীক্ষা নেওয়া হয় ও ২০১৪ সালে নিয়োগের সময় ৬২ জনের (স্ত্রী, বৌদি এবং আত্মীয়-স্বজন সমেত মোট ১১ জন) চাকরির সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে যায়। ২০১২ সালে বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসুই ছিলেন তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের সময় তিনি ভারতীয় জনতা পার্টি প্রার্থীর হয়ে এই নিয়োগ দুর্নীতি থেকে শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেন। তিনি অভিযোগ করেন বহুবার দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ নেতাদের মৌখিক ও লিখিত জমা দেওয়ার পরও কোনও ব্যবস্থা দলের তরফ থেকে নেওয়া হয়নি।

 

 

২০১৪ সালে আসানসোল লোকসভা থেকে বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় প্রথমবার নির্বাচিত হন এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীত্ব লাভ করেন। দ্বিতীয়বার ২০১৯ সালে নির্বাচিত হবার পর ভারতীয় জনতা পার্টির সঙ্গে মনোমালিন্যর কারণ নিয়ে দলত্যাগ করে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন। এবং ২০২২ সালে আসানসোল লোকসভা উপনির্বাচনে প্রথমবার তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা নির্বাচিত হন।

২০২২ সালে পৌরসভা নির্বাচন এবং ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধীরা ছাপ্পা ভোট ও সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বারংবার তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ শানাতে থাকেন।

 

 

২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেক ক্ষেত্রে লাগাম ছাড়া দুর্নীতি এবং বহু নেতা, মন্ত্রীদের দুর্নীতির সঙ্গে নাম জড়িয়ে পড়া ও গোষ্ঠী কোন্দল। বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেস নিজেদের গড় ধরে রাখতে এবং হারানো জমি ফিরে পেতে তিন কেন্দ্রেই বহিরাগত প্রার্থী নির্বাচন করেছেন।

 

 

গত ১৩ ই মে ২০২৪ চতুর্থ দফা লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী কবিয়াল অসীম সরকার তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ডাঃ শর্মিলা সরকার নির্বাচনী লড়াইয়ে বিরুদ্ধে জয়ী হওয়া সম্ভাবনা ৫০-৫০। এই কেন্দ্রে মতুয়া ভোট, তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি এবং সংখ্যালঘু ভোট যে-কোনও সময় পাসা উল্টে দিতে পারে।

 

 

বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।

তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী কীর্তি আজাদ।  এই নির্বাচনী লড়াইয়ে দিলীপ ঘোষ-এর জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

 

এই কেন্দ্রে তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি, অবাঙালি এবং সংখ্যালঘু ভোট শতাংশ বিশেষ নির্ণায়ক হতে যাচ্ছে।

 

 

আসানসোল লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী এস এস আহলুওয়ালিয়া বিজয়ী হবার সম্ভাবনা প্রবল। বিশেষ করে তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি এবং অবাঙালি ভোট শতাংশ নির্ণায়কের অগ্রণী ভূমিকা নেবে তার ইঙ্গিত স্পষ্ট।

ছবি : আন্তর্জালিক

আরও খবর : Loksabha Election 2024 : পশ্চিমবঙ্গের ভোট রাজনীতির কড়চা-৪

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment