সংবেদন শীল, সাশ্রয় নিউজ ডেস্ক ★ মুম্বাই : ভারতীয় বিনোদন জগতের সাহসী ও খোলামেলা মুখগুলির মধ্যে অন্যতম কুবরা সৈত (Kubbra Sait)। পর্দায় যতটা বোল্ড চরিত্রে দেখা যায় তাঁকে, বাস্তব জীবনেও তিনি ততটাই সাহসী। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের জীবনের এক গভীর অধ্যায়ের কথা অকপটে তুলে ধরেছেন। জানিয়েছেন, ৩০ বছর বয়সে এক রাতের সম্পর্কের পর গর্ভবতী হয়েছিলেন, এবং পরে তনি গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নেন। সেই সিদ্ধান্তের পরে মানসিক দ্বন্দ্ব, আত্মসমালোচনা, সমাজের দৃষ্টি, সবকিছুর মধ্য দিয়েই যেতে হয়েছে তাঁকে। তবুও আজ কুবরা মনে করেন, সেই সময় তিনি সঠিক পথই বেছে নিয়েছিলেন।
অভিনেত্রী বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর হয়ে গিয়েছে এই ঘটনার। এই নিয়ে ভাবার এবং এই ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসার বহু সময় পেয়েছি। কিন্তু এই ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হলে, নানা রকমের দ্বন্দ্ব ঘিরে ধরে। চারপাশ নিয়ে নানা রকমের ভাবনা আসে। নিজের দায়িত্ব, সমাজ কী ভাবে দেখছে, এই সব নিয়ে ঠিক ও ভুলের মধ্যে নানা যুদ্ধ লেগেই থাকে।’

এই কথাগুলির মধ্যেই ফুটে ওঠে এক নারীর বাস্তব সংগ্রাম, নিজের শরীর, নিজের সিদ্ধান্ত, আর সমাজের অদৃশ্য চোখের চাপ। কুবরা জানান, তখন তিনি জানতেন না গর্ভপাত করানো সঠিক না ভুল। সিদ্ধান্তের মুহূর্তে মনের ভিতরে ছিল ভয়, সংশয় আর অপরাধবোধ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই মানসিক চাপ থেকে তিনি বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। এখন তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন : Aliaa Bhatt Ranbir Kapoor Anniversary : দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকীতে চমকে দিলেন আলিয়া
নিজের আত্মজীবনী ‘Open Book: Not Quite a Memoir’ -এ কুবরা বিস্তারিতভাবে লিখেছেন সেই সময়কার অভিজ্ঞতা। এক রাতের সম্পর্ক থেকে শুরু করে গর্ভপাতের দিন পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্ত তিনি তুলে ধরেছেন অকপটে। তাঁর মতে, ‘আমি তখন ৩০ বছর বয়সী। জানতাম, এই শিশুকে আমি বড় করতে পারব না। আমি তখন মানসিকভাবে, আর্থিকভাবে বা পারিবারিকভাবে সেই জায়গায় ছিলাম না। তাই কঠিন হলেও সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। এখন মনে হয়, আমি নিজের জন্য সঠিক কাজটাই করেছি।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘লেখার পরে বুঝলাম, আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা নিয়ে নিজের প্রতি একটু বিনয়ী হওয়া দরকার আমার। কারণ আমরা মেয়েরা নিজেদের বিচার করতে ভালোবাসি, কিন্তু নিজেদের ক্ষমা করতে শিখি না।’

কুবরার এই সাহসিকতা একটি প্রজন্মের কণ্ঠস্বর। যেখানে গর্ভপাত এখনও সমাজের চোখে ট্যাবু, সেখানে একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রীর মুখ থেকে এমন খোলামেলা স্বীকারোক্তি সমাজে নতুন আলো ফেলেছে। ‘সেক্রেড গেমস’ (Sacred Games) সিরিজে কুকু চরিত্রে অভিনয় করে কুবরা দেশজুড়ে প্রশংসা পেয়েছিলেন। সেই রূপান্তরকামী চরিত্র তাঁর অভিনয়জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তার পর থেকে ‘ফর্জ়ি’ (Farzi), ‘দ্য ট্রায়াল’ (The Trial), ‘দেবা’ (Deva) সহ একাধিক ওয়েব সিরিজ ও চলচ্চিত্রে শক্তিশালী চরিত্রে দেখা গিয়েছে তাঁকে। বাস্তব জীবনের মতোই পর্দাতেও তিনি নিজের জায়গা তৈরি করেছেন নিজের মেধা, সাহস আর সততার মাধ্যমে।

কিন্তু, গর্ভপাতের অভিজ্ঞতা তাঁকে জীবনের প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অভিনেত্রী। তাঁর কথায়, ‘আমি বুঝেছি, জীবন মানেই নিখুঁত হওয়া নয়। আমরা সবাই ভুল করি, কিন্তু ভুল থেকে শিখে নেওয়াটাই আসল। আমি এখন আরও শক্তিশালী, আরও শান্ত। কারণ আমি নিজের সিদ্ধান্তের পাশে দাঁড়াতে পারি।’ বর্তমান সময়ে যখন নারী স্বাধীনতা নিয়ে নানা কথা হয়, তখন কুবরা সৈতের মতো ব্যক্তিত্বরা সেই স্বাধীনতার বাস্তব রূপ। নিজের শরীর, নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে সাহসের সঙ্গে নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়া, এটাই তাঁর বার্তা। কুবরা বলেন, ‘আমি চাই, মেয়েরা যেন নিজের শরীর নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ভয় না পায়। সমাজ কী বলবে সেটা ভেবে আমরা অনেক সময় নিজেদের কণ্ঠস্বর হারিয়ে ফেলি। আমি চাই, কেউ যেন তা না করে।’ তাঁর এই বক্তব্য আজকের তরুণ প্রজন্মের কাছে গভীর অনুপ্রেরণা। সামাজিক চাপের ভেতরেও কুবরা নিজের বাস্তবতা মেনে নিয়েছেন, সেটাই তাঁকে আলাদা করে। এখন তিনি চান, তাঁর অভিজ্ঞতা অন্যদের মানসিক সাহস যোগাক।
নিজের আত্মবিশ্বাস, মানসিক পরিপক্বতা আর বাস্তবতার সঙ্গে লড়াই করার শক্তি তাঁকে কেবল একজন অভিনেত্রী নয়, এক অনুপ্রেরণার প্রতীক করে তুলেছে। কুবরা সৈত হয়ত নিজের জীবনের সেই অধ্যায় ভুলতে চান না, বরং চান সেটি অন্য নারীদের কাছে এক শিক্ষা হয়ে উঠুক, যাতে তারা জানে: ভুল নয়, নিজের প্রতি সততা আর সাহসই জীবনের আসল সৌন্দর্য।
ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Deepika Padukone Mental Health Ambassador | দীপিকা পাড়ুকোন মানসিক স্বাস্থ্যের দূত, ভারত সরকারের নতুন দায়িত্বে অভিনেত্রী




