সাশ্রয় নিউজ ডেস্ক ★ কলকাতা: দীপাবলি (Diwali) ও ভাইফোঁটার (Bhai Phonta) রেশ কাটতে না কাটতেই উৎসবের শহর কলকাতা (Kolkata) এখন ছটপুজোর (Chhath Puja) আমেজে ভরপুর। আগামী ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় ‘সন্ধ্যা অর্ঘ্য’ এবং ২৮ অক্টোবর ভোরে ‘উষা অর্ঘ্য’কে কেন্দ্র করে শহরের বিভিন্ন ঘাট ও পুকুরে ভক্তদের ঢল নামার আশঙ্কা রয়েছে। সেই উৎসবকে ঘিরেই কলকাতা পুরসভা (Kolkata Municipal Corporation – KMC) শুরু করেছে জোরকদমে প্রস্তুতি। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এবছর মোট ১১১টি ঘাট ও পুকুরে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে হুগলি নদীর (Hooghly River) ৩৫টি ঘাট এবং শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ছড়িয়ে থাকা ৭৬টি পুকুরে হবে অর্ঘ্য নিবেদন। পুরসভার তরফে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে ঘাট সংস্কার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, আলোকসজ্জা ও নিরাপত্তা জোরদারের কাজ।
বাগবাজার (Bagbazar), আহিরিটোলা (Ahiritola), শোভাবাজার (Shobhabazar), বাবুঘাট (Babu Ghat), প্রিন্সেপ ঘাট (Prinsep Ghat), কুমোরটুলি (Kumartuli), মায়ের ঘাট (Mayer Ghat) এবং বাজে কদমতলা (Baje Kadamtala) সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ ঘাটগুলিতে পুরসভার কর্মীরা দিনরাত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ঘাটের সিঁড়ি মেরামত, ভাঙাচোরা অংশ সংস্কার, এবং পর্যাপ্ত আলো বসানোর কাজ শেষ পর্যায়ে।
এছাড়াও শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে থাকা নির্বাচিত জলাশয়গুলিতে জল পরীক্ষা, পাড় সংস্কার এবং রংয়ের কাজ চলছে পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে। পুর কমিশনার ধবল জৈন (Dhaval Jain) বলেছেন, “ছটপুজোতে বিপুল ভিড়ের সম্ভাবনা রয়েছে, তাই প্রতিটি ঘাট ও পুকুরে পুরসভার আধিকারিকদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ২৭ অক্টোবর দুপুর ১টা থেকে ২৮ অক্টোবর সকাল পর্যন্ত তাঁরা টহল দেবেন।” উল্লেখ্য যে, পুরসভার সঙ্গে সমন্বয় রেখে কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police), দমকল (Fire Department), ও স্বাস্থ্য দফতর (Health Department) প্রস্তুত করেছে একটি যৌথ পরিকল্পনা। প্রতিটি বড় ঘাটে থাকবে অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প, অ্যাম্বুল্যান্স এবং উদ্ধার দল। জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সহায়তার জন্য তৈরি রাখা হয়েছে বিশেষ সমন্বয় টিম।
ভক্তদের সুবিধার জন্য জনপ্রিয় ঘাটগুলিতে আলাদা প্রবেশ ও নির্গমন পথ তৈরি করা হচ্ছে। এতে ভিড় নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন কর্মকর্তারা। ট্রাফিক বিভাগের তরফে ইতিমধ্যেই হুগলি নদীর ঘাটসংলগ্ন এলাকায় বিশেষ ট্রাফিক নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার দিকেও গুরুত্ব দিচ্ছে পুরসভা। ছটপুজোর সময় শহরজুড়ে ঘোষণা করা হবে ‘নো প্লাস্টিক জোন’ (No Plastic Zone)। প্লাস্টিক ও থার্মোকল নিষিদ্ধ করে পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে ভক্তদের। উৎসব শেষে ঘাটগুলির পরিস্কার অভিযান রাতেই শুরু হবে যাতে পরদিন সকালেই শহর স্বাভাবিক হয়ে যায়।
পুরসভার এক কর্তা জানিয়েছেন, “আমরা চাই ভক্তরা যেন নির্বিঘ্নে পূজা করতে পারেন, সেই সঙ্গে শহরের সৌন্দর্যও বজায় থাকে। তাই পুরসভার কর্মীরা রাতদিন কাজ করছেন।” এবারের ছটপুজোতে ভক্তদের উপস্থিতি গত বছরের তুলনায় আরও বেশি হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তাই কলকাতা পুরসভা, পুলিশ ও প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায়। উল্লেখ্য, ছটপুজোর সময় ঘাটে নিরাপত্তার পাশাপাশি হেল্পলাইন নম্বর ও দিকনির্দেশনা বোর্ড বসানো হবে। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তার জন্য আলাদা সেল তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুরসভার এক আধিকারিক।
এই উৎসব ঘিরে ইতিমধ্যেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় আলো ঝলমল করছে। পুরসভার উদ্যোগে হুগলি তীরজুড়ে তৈরি হচ্ছে আলোকসজ্জা, যা দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করবে। উৎসবের আবহে ছটপুজোকে ঘিরে কলকাতা এখন আরও প্রাণবন্ত, তবে পুরসভার এই সুব্যবস্থা ভক্তদের নিরাপত্তা ও শহরের সৌন্দর্য—দুইই বজায় রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ছবি : প্রতীকী ও সংগৃহীত




