



সাশ্রয় নিউজ ★ রুদ্রপ্রয়াগ: পুণ্য অর্জনের পথে মৃত্যু! কেদারনাথ যাত্রার পাহাড়ি পথে আবারও বিপর্যয়। বুধবার রুদ্রপ্রয়াগ (Rudraprayag) জেলার জঙ্গল চট্টি (Jungle Chatti) এলাকায় ভূমিধসের ফলে প্রাণ হারালেন দুই তীর্থযাত্রী। গুরুতর জখম হয়েছেন আরও তিন জন। ধসে গড়িয়ে আসা একাধিক পাথরের আঘাতে মৃত্যু হয় যাত্রীদের। ঘটনাস্থলে নেমেছে পুলিশ ও জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (DDRF)। আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে গৌরীকুণ্ড (Gaurikund)-এর কাছের হাসপাতালে।

এক প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায়, সকাল ১১টা ২০ মিনিট নাগাদ আচমকা পাহাড় থেকে নেমে আসে একাধিক বিশালাকৃতির পাথর। পাথরের আঘাতেই ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান দুই পুণ্যার্থী। আহতদের মধ্যে একজন মহিলা রয়েছেন, যাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। পুলিশ সুপার অক্ষয়প্রহ্লাদ কোন্ডে (Akshay Prahlad Konde) বলেন, “ঘটনার খবর পেয়েই আমরা দ্রুত উদ্ধারকাজ শুরু করি। আমাদের ফোর্স এবং জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী মিলিত ভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। আহতদের মধ্যে দু’জনকে গৌরীকুণ্ড হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।” এই ঘটনায় আবারও কেদারনাথ যাত্রাপথে যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিশেষত জঙ্গল চট্টি এলাকায় প্রায়ই ভূমিধসের ঘটনা ঘটছে। উল্লেখযোগ্য, মাত্র তিন দিন আগেই, গত রবিবার একই এলাকায় ধস নেমে এক পুণ্যার্থীর মৃত্যু হয়। তখনও সোনপ্রয়াগ (Sonprayag) থেকে কেদারনাথের পথে কিছু সময়ের জন্য যাত্রা বন্ধ রাখা হয়েছিল।ধসপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত এই পথটি বর্ষার মরসুমে আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। পরিবেশবিদদের মতে, অতিরিক্ত সংখ্যায় তীর্থযাত্রী, অপ্রতুল অবকাঠামো ও লাগাতার গা-ছাড়া নির্মাণের ফলে পাহাড়ি ভূখণ্ডে ভারসাম্য হারাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে বারবার সাবধান করা হলেও, বিপদের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। জঙ্গল চট্টির এই ভূমিধস যেন রেশ টানল রবিবারের সেই ভয়াবহ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার। ওই দিন কেদারনাথধাম (Kedarnath Dham) থেকে গুপ্তকাশী (Guptkashi) যাওয়ার পথে গৌরীকুণ্ড সংলগ্ন একটি জঙ্গলে ভেঙে পড়ে একটি যাত্রীবাহী হেলিকপ্টার। মৃত্যু হয় সাত জনের, তাঁদের মধ্যে এক শিশু-সহ একাধিক তীর্থযাত্রী ছিলেন।
এদিনের ভূমিধসের পরে জেলা প্রশাসন আরও কড়া নজরদারি শুরু করেছে। বিপর্যয়প্রবণ এলাকাগুলিতে অতিরিক্ত নজরদারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। আবহাওয়া দফতর থেকেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে আগামী কিছু দিনের জন্য।তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা বিকাশ রাওয়াত (Bikash Rawat) বলেন, “প্রতিবারই ধসের পরে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়, কিন্তু বাস্তবে খুব বেশি কিছু হয় না। আমাদের অনুরোধ, দয়া করে পাহাড়কে অবহেলা করবেন না। নিরাপত্তার প্রশ্নে আর কোনও ছাড় নয়।” ইতিমধ্যে অনেক, পুণ্যার্থী যাত্রা মাঝপথে থামিয়ে নিচ্ছেন। সোনপ্রয়াগ ও গৌরীকুণ্ড এলাকায় বাড়ছে উদ্বেগ। যাত্রীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। গুজরাট (Gujarat)-এর এক পুণ্যার্থী রাজেশ পটেল (Rajesh Patel) জানান, “পরিবার নিয়ে আমরা এসেছি। ধসের খবর শুনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আর উপরে যাব না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তীর্থ নয়।” উদ্ধারকার্যে সহযোগিতা করছে স্থানীয় গ্রামবাসীরাও। আবারও প্রমাণিত হলো, কেদারনাথ যাত্রাপথে ভরসা একমাত্র প্রকৃতির মর্জি। যতই আধুনিক প্রযুক্তি থাকুক, পাহাড়ের মুখোমুখি হলে তা যেন অসহায়।প্রশাসনের তরফে আপাতত কেদারনাথ যাত্রাপথ খোলা থাকলেও, নতুন করে যাত্রা শুরু করার আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও স্থানীয় নির্দেশিকা মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে। তীর্থ যেন না হয়ে ওঠে বিপদের সমুদ্র সেই বার্তাই যেন এদিনের ধস দিয়ে আবারও উঠে এল।
ছবি : সংগৃহীত
