



🍂ফিচার
ব্রহ্মাবর্ত ঘাটের সিঁড়িতে এক জায়গায় একটি পেরেক লাগানো আছে। পেরেকটি তামা দিয়ে বেষ্টিত এবং একটি খোলা মন্দিরের আকারে আচ্ছাদিত। কথিত আছে অশ্বমেধ যজ্ঞে যাওয়ার সময় ভগবান ব্রহ্মার ঘোড়ার জুতো থেকে একটি পেরেক খসে পড়ে এই ঘাটেই। এটি ভক্তদের বিশেষ শ্রদ্ধার বস্তু। লিখেছেন : সাবানা পারভিন

উত্তরপ্রদেশের এক জনবহুল নগরী কানপুর। ১২০৭ খ্রীস্টাব্দে কানহপুরিয়া বংশের রাজা কন দেও কানহপুর গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন। পরে বেশ ক’য়েকবার নাম বদলে কানহপুর থেকে কানপুর নগরী তৈরী হয়। কানপুর ব্রিটিশ ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বানিজ্যিক ও সামরিক স্টেশন ছিল। গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত এই নগরী এক অন্যতম অর্থনৈতিক শিল্প কেন্দ্র। ১৮৭৬ সালে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া কর্পোরেশন থেকে আলেকজান্ডার ম্যাক রোবার্ট কর্তৃক ভারতের প্রথম উলেন মিল ‘লাল ইমলি’ প্রতিষ্ঠা পায় এখানেই। এখানকার টেক্সটাইল মিলের প্রাসাদগুলির কিছু বিশেষত্বও আছে। মিলের সম্মুখভাগের স্থাপত্যগুলি অনেকটাই ইংল্যান্ডের ওয়েষ্টমিনষ্টার প্রাসাদের আদলে তৈরী। এমন কি মিলের উত্তর-পূর্ব কোনে স্থাপত্যের শীর্ষে লন্ডনের ‘বিগ বেনের’ সাদৃশ্যে একটি বৃহৎ ঘড়িও আছে। এলাকাটি ‘ঘন্টা ঘর’ নামে পরিচিত এখন। টেক্সটাইল শিল্পের জন্য কানপুর আগে ‘Manchester of the East’ নামেও পরিচিত ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই সমস্ত টেক্সটাইল মিলগুলি এখন অচল অবস্থায় বিরাজমান। কানপুর লেদার শিল্পের জন্যও বিখ্যাত। এই কারণে কানপুর শহরকে ‘’leather city of the world’’ বলা হয়। এখান থেকে উন্নত মানের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানিও হয়। এখানকার আরও একটি আকর্ষণীয় স্থান বিঠুর। বিঠুর একটি পৌরাণিক এবং ঐতিহাসিক কাহিনী সম্বলিত শহর। কানপুরের উন্মত্ত ভিড় থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরত্বে গঙ্গা নদীর তীরে কনৌজ রোডে অবস্থিত মনোরম শহর বিঠুর। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এটি একটি প্রধান তীর্থস্থলও। শহরটি বেশ কিছু পৌরাণিক এবং ধর্মীয় কাহিনীর উপকেন্দ্র। পুরাণ অনুসারে, ভগবান বিষ্ণু কর্তৃক মহাবিশ্বের পুনর্নিমানের (পুরাণ মতে মহাবিশ্ব অনেকবার সৃষ্টি হয়েছে এবং ধ্বংস হয়েছে) পর ভগবান ব্রহ্মার বাসস্থান ছিল উৎপলারণ্য। এখানকার মানুষজন দাবী করেন, বেশ ক’য়েকবার নাম পরিবর্তনের পর স্থানটির নামকরন করা হয় বিঠুর অর্থাৎ তাঁদের মতে, বিঠুরই আগের উৎপলারণ্য। শাস্ত্র অনুসারে মনে করা হয়, ভগবান ব্রহ্মা, মহাদেবের আদেশে মানবজাতির সৃষ্টির উদ্দেশ্যে উৎপলারণ্যে এসেছিলেন। এখানে আসার পর তিনি অশ্বমেধ যজ্ঞ করেছিলেন (পুরাণ মতে এই অরণ্যে বহুবার অশ্বমেধ যজ্ঞ হয়েছিল) এবং ভগবান ব্রহ্মার যজ্ঞ সমাপ্ত হওয়ার পর উৎপলারণ্যের নাম ব্রহ্মাবর্ত হয়। পুরাণ অনুযায়ী, মানবজাতি সৃষ্টির প্রথম সাক্ষী যে স্থানটি সেটি এই ব্রহ্মাবর্ত বা ব্রহ্মার আসন। এখানে ভগবান ব্রহ্মা পরে একটি শিবলিঙ্গ স্থাপন করেছিলেন যা এখনও ‘ব্রম্ভেশ্বর মহাদেব’ হিসাবে ব্রহ্মাবর্ত ঘাটে পূজিত হয়। এটি বিঠুরের গঙ্গার একটি অন্যতম প্রধান ঘাট। ঘাটটার নাম ‘ব্রম্ভাবর্ত ঘাট’। ভক্তগন বিশ্বাস করেন এই ঘাটে বা নদীর তীরে রহস্যময় শক্তি ধারণ করা হয়, কারন তাঁরা দাবী করেন, এখানেই ভগবান ব্রহ্মা মাটি থেকে আদি মানব মনু এবং মানবী শতরূপাকে সৃষ্টি করেছিলেন। ব্রহ্মাবর্ত ঘাটের সিঁড়িতে এক জায়গায় একটি পেরেক লাগানো আছে। পেরেকটি তামা দিয়ে বেষ্টিত এবং একটি খোলা মন্দিরের আকারে আচ্ছাদিত। কথিত আছে অশ্বমেধ যজ্ঞে যাওয়ার সময় ভগবান ব্রহ্মার ঘোড়ার জুতো থেকে একটি পেরেক খসে পড়ে এই ঘাটেই। এটি ভক্তদের বিশেষ শ্রদ্ধার বস্তু। এটিকে তাঁরা ব্রহ্মার ঘোড়া বলে মনে করেন।

বিঠুরের পৌরাণিক তাৎপর্যের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাহিনী ‘বাল্মীকি আশ্রম’। মানুষজন দাবী করেন, এই অরণ্যেই দস্যু রত্নাকর, বাল্মীকি হয়েছিলেন এবং এখানেই তিনি ‘’রামায়ন‘’ রচনা করেছিলেন। মানুষজন বিশ্বাস করেন, শ্রী রামচন্দ্র কর্তৃক সন্তান সম্ভাবা সীতা পরিত্যজ্য হওয়ার পর লক্ষ্মণ সীতাকে এই অরণ্যেই ছেড়ে দিয়ে যান এবং এখানেই রাম-সীতার যমজ সন্তান ‘লব’ এবং ‘কুশ’ এর জন্ম হয়। কথিত আছে, লব-কুশ এই স্থানেই ঋষি বাল্মীকির কাছে শিক্ষা নিয়েছিলেন এবং মাতা সীতা এই ‘বাল্মীকি আশ্রমেই’ ‘লব-কুশকে’ বড় করেছিলেন। আশ্রমে দীর্ঘ আশ্রমটিতে সীতার নির্বাসন্নের সময়কার বিবিধ স্মৃতি ছড়িয়ে আছে। যেমন ‘‘সীতা রসোই” অর্থাৎ সীতার রান্নাঘর, পাতাল প্রবেশের স্থান, ঋষি বাল্মীকির বেদী, মন্দির, লব, কুশের জন্ম স্থান ইত্যাদি সুন্দর ভাবে সংরক্ষণ করা আছে। মানুষজনের বিশ্বাস, এখান থেকেই দেবী সীতা ধরিত্রী মাতার কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, লব ও কুশ শ্রী রামচন্দ্রের অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়া থামিয়ে রেখেছিলেন, হনুমানকে বন্দী করেছিলেন ইত্যাদি।

বিষ্ণু পুরাণের কাহিনী অনুযায়ী ঋষি ধ্রুব ছিলেন রাজা উত্তানপাদ ও তাঁর প্রথম স্ত্রী সুনীতির পুত্র। রাজা উত্তানপাদ ছিলেন প্রথম মানব মনু এবং তাঁর স্ত্রী শতরূপার পুত্র। শিশু ধ্রুব মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই জীবনে তিক্ততা অনুভব করেছিলেন এবং তিনি এক পায়ে ভর করে দাঁড়িয়ে ভগবান বিষ্ণুর কঠোর তপস্যা করতেন এবং তপস্যায় সফল হয়ে ভগবান বিষ্ণু কর্তৃক ঐশ্বরিক বর পেয়ে মৃত্যুর পর ছায়াপথে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক ‘ধ্রুব তারা’ হয়ে আজও জ্বল জ্বল করছেন।
বিঠুর আশ্রমের এক জায়গায় একটি উঁচু টিলার উপর ‘ধ্রুব টিলা’ নামে একটি মন্দির আছে যেটা শহরের অনেক দূর থেকে দেখা যায়। অনেকের বিশ্বাস যে, এটাই সেই জায়গা যেখানে দাঁড়িয়ে শিশু ধ্রুব ভগবান বিষ্ণুর ধ্যান করতেন।

এখানকার ঐতিহাসিক গুরুত্বও বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। বিঠুর, ব্রিটিশ রাজের সময় কাউনপুর জেলার (Cawnpur) (এখন কানপুর নগর ) একটি অংশ ছিল। ১৮৫৭ খ্রীস্টাব্দে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থান থেকে স্বাধীনতার জন্য প্রথম যে বিদ্রোহ হয়েছিল (সিপাহি বিদ্রোহ) এখানে প্রথম বিঠুর থেকে শুরু হয়েছিল। এই বিদ্রোহে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন ঝাঁসির রাণী লক্ষ্মীবাঈ। রাণী লক্ষ্মীবাঈ-এর শৈশবও কেটেছে বিঠুরে। শোনা যায়, তিনি চার বছর বয়স থেকে ষোল বয়স পর্যন্ত এখানে কাটিয়েছেন এবং এখানে তিনি যুদ্ধবিদ্যার প্রশিক্ষণ নিতেন। সিপাহি বিদ্রোহের নেতা নানা সাহেবও এখানে নির্বাসিত ছিলেন। তিনি বিঠুর ফোর্টকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নানা পরিকল্পনা করার জন্য সদর দফতর বানিয়েছিলেন। রাণী লক্ষ্মীবাঈ, নানা সাহেব, তাঁতিয়া টোপি, রাম চন্দ্র পান্ডুরংদের মতো বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামীরা বিঠুর থেকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেছিলেন। এই বিদ্রোহে যেমন বহু ব্রিটিশ নাগরিক প্রাণ হারিয়েছিল এবং তার জবাবে ব্রিটিশরাও হিংসাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল ভারতীয়দের উপর। তারা স্থানটিতে বিস্ফোরণেরও চেষ্টা করেছিল বলে উল্লেখ। ১৮৫৭ খ্রীস্টাব্দের ১৯ জুলাই জেনারেল হ্যাভলক বিঠুর দুর্গ দখল করে এবং বিঠুর কেল্লা, ঘাট, বিবিধ মন্দির তারা আগুনে পুড়িয়ে ফেলে। এই সময় বিঠুর দুর্গের অনেকাংশই ধ্বংস হয়ে যায়। বর্তমানে বিঠুর দুর্গের শুধু ধ্বংসাবশেষ অবশিষ্ট আছে। সেই সময়কার বিধ্বংসী আগুনে বহু মানুষের সঙ্গে নানা সাহেবের ১৪ বছর বয়সি কন্যা ময়নাবতীও প্রাণ হারিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পরে রাজ্য সরকার ময়নাবতীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে এখানকার একটি রাস্তার নামকরণ ময়নাবতী মার্গ করেছেন।

নানা সাহেবের নেতৃত্বে কানপুর অবরোধের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। তৎকালীন কমান্ডার হগ হুইলার তখন যুদ্ধে পুত্র হারিয়ে বিমর্ষ। নানা সাহেব তাদের প্রস্তাব দিলেন নিরাপদে দেশ ছেড়ে যেতে এবং ব্রিটিশ বাহিনী মনস্থিরও করে নেন তাঁরা চলে যাবেন।

১৮৫৭ খ্রীস্টাব্দের ২৭ জুন ইংরেজ পরিবারগুলি এলাহাবাদে রওনা হওয়ার উদ্দেশ্যে গঙ্গার সতীচৌড়া ঘাটে নৌকায় চড়ে বসে। নানা সাহেব তাঁর বাহিনীদের নির্দেশ দিলেন ইংরেজ পরিবারগুলির কোনও ক্ষতি করা যাবে না। কিন্তু অলক্ষ্যে বসে তখন বিপদ প্রমোদ গুনেছিল। সেই অবরোধের সময় গঙ্গার তীরে কানপুরের জাজমউ এলাকার ‘সতী চৌড়া ঘাটে’ (এখন নাম ম্যাসাকার ঘাট) স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কাছে খবর আসে ব্রিটিশ সেনাবহিনীর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল জেমস নিল বেনারসে নিরীহ ভারতীয়দের গণহত্যা করছে। তখন ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত হয়ে ভারতীয় বিদ্রোহীরা নৌকায় থাকা ইংরেজদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করেন এবং যারা গুলি থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন পরে তাদের তরবারি দিয়ে হত্যা করা হয়। কমান্ডার হগ হুইলারও এই হত্যাকাণ্ডে প্রাণ ত্যাগ করেন। নানা সাহেবের কাছে এই হত্যাকান্ডের খবর পৌঁছালে, তিনি সেখানে ছুটে যান এবং কিছু মহিলা ও শিশুকে উদ্ধার করে তাঁর নিজস্ব সদর দফতর ‘সাভাদা কোঠি’ নামের প্রাসাদে নিয়ে আসেন এবং পরে বিবিঘর সেনানিবাসে তাদের স্থানান্তরিত করেন। এরপর নানা সাহেব ব্রিটিশদের কাছে কিছু চুক্তির প্রস্তাব রাখেন, কিন্তু ব্রিটিশ পক্ষ তাতে রাজি না হওয়ায় ভারতীয় সংগ্রামীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বিবিঘর সেনানিবাসে থাকা মহিলা ও শিশুদের হত্যা করে এবং মৃতদেহগুলোকে সেনানিবাসের সামনের একটি কূপে ফেলে দেয়।

কানপুরের ফুলবাগ এলাকায় ‘নানা রাও পার্ক’ অবস্থিত। এটি একটি পাবলিক পার্ক। স্বাধীনতার পর নানা সাহেবের নামানুসারে ‘নানা রাও পার্ক’ নামকরন করা হয়েছে। স্বাধীনতার আগে এটি ক্যান্টনমেন্টের আওতায় একটি সেনানিবাস (ভিলা সদৃশ বাড়ি) ছিল। নাম ছিল ‘বিবিঘর সেনানিবাস’। এই সেনানিবাসেই উদ্ধারকৃত মহিলা ও শিশুদের স্থানান্তরিত করা হয়েছিল এবং এখানেই একটি কূপে সেনানিবাসের মৃতদেহগুলিকে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। ব্রিটিশরা পরে এই ‘বিবিঘর সেনানিবাস’ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং মৃতদেহগুলিকে অপসারণ করে কূপটিকে সিল করে ‘মেমোরিয়াল ওয়েল’ বা স্মৃতি সৌধ বানিয়েছিলেন। বাইরে থেকে আর্কিটেকচার এনে স্মৃতিসৌধটির উপর মার্বেল মূর্তি, ক্রস চিহ্ন ও স্মারক রেলিং বানিয়ে ঘিরে দিয়েছিল। স্মৃতিসৌধটি বানানোর খরচ জরিমানা স্বরূপ শহরের জনসাধারণকে দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। কিন্তু বিবিঘর সেনানিবাসের হত্যার আদেশ কে দিয়েছিলেন তা আজও অজানা।
এরপর মেজর জেনারেল হেনরি হ্যাভলক কানপুর (Cawnpur) পুনরুদ্ধার করেন এবং ব্রিটিশ বাহিনীকে আরো শক্তিশালী করেন। বিবিঘর সেনানিবাসের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ব্রিটিশ দল আতঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে সহিংসতার ঢেউয়ে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। বিবিঘর হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার কোন চেষ্টা না করার অপরাধে সাধারণ জনসাধারণদের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে ফেলে, লুটপাট করা হয়েছিল। এছাড়াও সন্ত্রাস ছড়ানোর অপরাধে ব্রিটিশরা ব্যাপক ভাবে ফাঁসির অর্ডার দিয়েছিল এবং এখানকার শিশুসহ বহু পুরুষ ও মহিলাদের হত্যা করে ফুলবাগের ঐ উদ্যানেই নির্দয়ভাবে কিছু বটবৃক্ষের শাখায় মৃতদেহগুলোকে ঝুলিয়ে রাখত। গাছের উপর ফাঁসিও দেওয়া হত। সেই সব বটবৃক্ষ স্বাধীনতার পরও সংগ্রামের সাক্ষ্য হিসাবে বহুদিন যাবত ব্যারিকেড দিয়ে সংরক্ষণ করে রাখা ছিল। সেইসব পুরনো বটবৃক্ষগুলো আজ আর নেই, বহুদিন আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। ব্যারিকেডের দেওয়ালে লেখা আছে ‘Budhdha Bargad‘ অর্থাৎ বৃদ্ধ বটগাছ। কর্মকর্তাদের আদেশে ব্যারিকেডের ভিতরে স্মৃতির উদ্দেশ্যে নতুন বটগাছ রোপন করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর রাজ্য সরকার শহরের এই স্থানটিতে (ফুলবাগ, কানপুর) একটি মেমোরিয়াল পার্ক প্রতিষ্ঠা করেছেন। যার নাম ‘নানা রাও স্মারক পার্ক’। স্মৃতিসৌধটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে। এটি একটি পাবলিক সিটি পার্ক এবং একটি মিউজিয়াম। এটি ঔপনিবেশিক আমলের বিবিধ ঐতিহাসিক নিদর্শন যেমন রয়্যাল অর্ডার, মুদ্রা, ডাক টিকিট এবং আরও অন্যান্য প্রাচীন বস্তু সম্বলিত একটি গ্যালারি। এছাড়াও নানা সাহেব, তাঁতিয়া টোপি এবং আরও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মূর্তি রয়েছে, যাঁরা সেই সময় এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।🍁
ছবি : সংগৃহীত
