



আমাদের থাকার জায়গা ছিল কান্ডির লেক অ্যাভেনিউ হোটেল-এ (Lake Avenue Hotel, Kandy)। এই হোটেলটা আমরা বেছে নিয়েছিলাম মূলত জায়গাটির জন্য। ক্যান্ডির বিখ্যাত দলাদা মালিগাওয়া (Tooth Relic Temple)-র কাছাকাছি। মাত্র ৪০০ মিটার দূরত্ব। ভোরের আলোয় মন্দিরে যাওয়া আর পূজার ধ্বনি শোনা এই অভিজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। প্রথম দিন ভোরবেলা হাঁটতে হাঁটতে মন্দিরে যাওয়া। চারপাশে সাদা পোশাক পরা ভক্তরা। সুগন্ধি ধূপের গন্ধ আর পাহাড় থেকে ভেসে আসা হাওয়া সব মিলিয়ে যেন অলৌকিক অনুভূতি।

মিলি ঘোষ : যখন মন নতুন করে প্রেমে পড়ে। তখনই হয় দ্বিতীয় মধুচন্দ্রিমা। কলকাতা থেকে শ্রীলঙ্কার (Sri Lanka) পাহাড়ি শহর ক্যান্ডি (Kandy)। আমাদের এই সফর ঠিক তেমনই এক ভালবাসার পুনর্জন্ম। আমার স্বামী তথাগত আর আমি।

দু’জনেই কাজের চাপে ব্যস্ত ছিলাম গত ক’য়েক মাস। অবশেষে পাড়ি দিলাম ক্যান্ডির পথে। আর এই যাত্রাপথের প্রতিটি মুহূর্ত যেন মুঠোবন্দি ভালবাসা। স্মৃতি আর সৌন্দর্যের ডায়েরি হয়ে উঠল। যাত্রার শুরুটা হয়েছিল হালকা উত্তেজনা আর উচ্ছ্বাস নিয়ে। এতদিন পর একসঙ্গে বিদেশে যাওয়া। তাও পাহাড়ি শহরে। এমন সুযোগ তো বারবার আসে না! বিমান থেকে নামার পরে যখন ক্যান্ডির দিকে গাড়ি ছুটে চলেছে। রাস্তার পাশে সবুজে ঢাকা পাহাড় আর কুয়াশার আস্তরণে ঢাকা পথ যেন আমাদের স্বাগত জানাচ্ছিল। গাড়ির জানালায় মাথা হেলিয়ে আমি কেবল ভাবছিলাম, ‘এই শহর তো স্বপ্ন দেখায়।’ আমাদের থাকার জায়গা ছিল কান্ডির লেক অ্যাভেনিউ হোটেল-এ (Lake Avenue Hotel, Kandy)।
সবচেয়ে বেশি ভাল লাগার জায়গা ছিল আমাদের ঘরের ভিউ। চারপাশে সবুজে ঢাকা পাহাড়। লেকের শান্ত জলরাশি আর তার মাঝে মাঝে ছড়িয়ে থাকা বৌদ্ধ মন্দির আর ঔপনিবেশিক স্থাপত্য। চোখের সামনে যেন এক জলরঙের চিত্রকর্ম।

এই হোটেলটা আমরা বেছে নিয়েছিলাম মূলত জায়গাটির জন্য। ক্যান্ডির বিখ্যাত দলাদা মালিগাওয়া (Tooth Relic Temple)-র কাছাকাছি। মাত্র ৪০০ মিটার দূরত্ব। ভোরের আলোয় মন্দিরে যাওয়া আর পূজার ধ্বনি শোনা এই অভিজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। প্রথম দিন ভোরবেলা হাঁটতে হাঁটতে মন্দিরে যাওয়া। চারপাশে সাদা পোশাক পরা ভক্তরা। সুগন্ধি ধূপের গন্ধ আর পাহাড় থেকে ভেসে আসা হাওয়া সব মিলিয়ে যেন অলৌকিক অনুভূতি।

আমরা বুক করেছিলাম একটি Two-Bedroom Apartment Suite with Lake View। আমাদের এই সুইটে ছিল দু’টো বেডরুম। একটা ছোট কিচেন। বসার জায়গা আর অবশ্যই ক্যান্ডি লেকের (Kandy Lake) অপূর্ব দৃশ্য। যদি দুইজন পরিবার একসঙ্গে আসেন, এই ধরনের অ্যাপার্টমেন্ট অসাধারণভাবেই উপযুক্ত। কিচেনে হালকা স্ন্যাকস বানানো, বারান্দায় বসে কফি খাওয়া আর পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে থেকে সময় কাটানো।
Read : Savehaklu Reservoir : সবুজ নীল জলরেখার টানে: সাভেহাকলু রিজার্ভয়ারে এক মনভোলানো টান
ছবি : সংগৃহীত
এসবই হয়ে উঠল আমাদের রোজকার অভ্যাস। সবচেয়ে বেশি ভাল লাগার জায়গা ছিল আমাদের ঘরের ভিউ। চারপাশে সবুজে ঢাকা পাহাড়। লেকের শান্ত জলরাশি আর তার মাঝে মাঝে ছড়িয়ে থাকা বৌদ্ধ মন্দির আর ঔপনিবেশিক স্থাপত্য। চোখের সামনে যেন এক জলরঙের চিত্রকর্ম।

একটি দারুণ ঘরে আমরা ছিলাম। মানে থাকা, খাওয়া সবকিছু হোটেলের মধ্যে। খাওয়ার দিক থেকে একটা আলাদা মুগ্ধতা কাজ করেছে। হোটেলের ক্যাফেটেরিয়ায় পাওয়া যায় স্থানীয় থেকে শুরু করে কন্টিনেন্টাল খাবার।

আমাদের সবচেয়ে প্রিয় ছিল তাদের ফ্রেশ ফলের জুস আর তাজা নারকেল দিয়ে বানানো ডেজার্ট। আবার প্রশংসার দাবি রাখে, হোটেলের কর্মীবৃন্দ। আমাদের পৌঁছনোর মুহূর্ত থেকেই তারা যে আতিথেয়তা দেখিয়েছেন, তা সত্যিই মনে রাখার মতো। প্রতিটি অনুরোধে তাদের হাসিমুখ, আন্তরিকতা আমাদের মুগ্ধ করেছে।

ক্যান্ডি শহর ঘোরা শুরু করেছিলাম দলাদা মালিগাওয়ার আশেপাশে ঘুরে। মন্দিরের মূল প্রাঙ্গণে ঢোকার সময় যেভাবে জুতো খুলে ঢুকতে হয়, আর ভেতরে গিয়ে বুদ্ধের দাঁতের রক্ষিত কৌটোকে ঘিরে যে ভক্তির আবহ, তা একবার দেখলে মনে হয় আত্মা যেন কিছুটা পরিশুদ্ধ হয়ে গেল। এরপর গেলাম উডওয়ার্ড গার্ডেন (Udawattekele Sanctuary)-এ, শহরের ঠিক পেছনে। বনভূমির মধ্যে হাঁটা। পাখিদের কলতান।

আর মাঝে মাঝে দেখা যায় হরিণদের। এক অন্যরকম অনুভব। তথাগত বলেছিল, এই জঙ্গলের নির্জনতায় যেন আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর হয়ে উঠছে।
আরও পড়ুন : Savehaklu Reservoir : সবুজ নীল জলরেখার টানে: সাভেহাকলু রিজার্ভয়ারে এক মনভোলানো টান

ঘুরতে গিয়ে শপিং থাকবে না এটা হয় নাকি!এই শহরের ভেতরে রয়েছে শপিং করার মতন কিছু জায়গাও। বিশেষ করে, ক্যান্ডির বিখ্যাত বাটিক শিল্প আর জেম স্টোন-এর দোকানগুলো আমাদের প্রাণ ছুঁয়ে গিয়েছে।

স্থানীয় দোকান থেকে কিনেছিলাম একটি শ্রীলঙ্কান হ্যান্ডলুম শাড়ি। রঙ আর ডিজাইনের এমন মেলবন্ধন আগে দেখিনি। এক দোকানের মালিক বলছিলেন, “Madam, every thread of this cloth tells a story. That is the soul of Kandy.” কথাটা শুনে এক মুহূর্তের জন্য থেমে গিয়েছিলাম। সত্যিই তো। প্রতিটি জিনিসের এক নিজস্ব কাহিনি আছে। এরপর আমরা একদিন গিয়েছিলাম বোগাম্বারা লেক-এর ধারে হাঁটতে। সূর্যাস্তের সময় লেকের ধারে বসে চুপচাপ থাকা, হাতে হাত রেখে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা। এর চেয়ে ভাল রোমান্স আর কী হতে পারে? তথাগত একটা কথা বলেছিল, “এত বছর পরেও আমরা যেন আবার প্রেমে পড়েছি”— আমি শুধু হেসেছিলাম।

যে ক্যান্ডিকে আমরা শুধু মানচিত্রে চিনতাম, সেই ক্যান্ডি এখন আমাদের হৃদয়ের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। লেক অ্যাভিনিউ হোটেলের স্বাচ্ছন্দ্য, শহরের ধর্মীয় ঐতিহ্য, পাহাড়ি প্রকৃতির আলিঙ্গন, আর ভালবাসার মানুষের সান্নিধ্য সব মিলিয়ে এই ভ্রমণটি হয়ে উঠল এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।

ভবিষ্যতে যাঁরা ক্যান্ডি যাবেন, তাঁদের আমি একটাই কথা বলব, সময় নিয়ে যান। কেবল দলাদা মালিগাওয়ায় গিয়ে ছবি তুলে ফিরে আসবেন না। এখানকার প্রতিটি সকালে হাঁটুন।
Read : Manali | মানালি: পাহাড়ি রূপকথার পাতায় ছুটি কাটানোর ঠিকানা

প্রতিটি বিকেলে লেকে বসে থাকুন। রাতের আলোয় পাহাড়ের গায়ে ছায়ার খেলা দেখুন। হয়ত তখন আপনিও বলবেন, “This isn’t just a place, it’s an emotion.”
সব ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Travelog : কালিম্পংঙে তিনটে দিন
