



সাশ্রয় নিউজ ★ নদীয়া: নদীয়া জেলার কালীগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে বিজয় হলেও মুখে হাসি নেই নবনির্বাচিত তৃণমূল প্রার্থী আলিফা আহমেদ (Alifa Ahmed)-এর। ভোটের ফলপ্রকাশের ঠিক পরেই ঘটে যায় এক মর্মান্তিক ঘটনা। বিজয় মিছিল চলাকালীন দুষ্কৃতি দুষ্কৃতীদের বোমাবাজিতে প্রাণ হারায় বছর এগারোর এক নাবালিকা, তামান্না খাতুন (Tamanna Khatun)। এই আকস্মিক মৃত্যুই যেন আলিফার বিজয়ের আনন্দকে সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দিয়েছে এক গভীর শোকে। তাঁর বাবা নাসিরুদ্দিন আহমেদ (Nasiruddin Ahmed)-এর মৃত্যুর পর এই আসনেই প্রার্থী হন আলিফা। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনে জয়ী হয়েছিলেন নাসিরুদ্দিন। তার মৃত্যুর পর অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে বড় ব্যবধানে জয় পেয়ে রাজনৈতিক ভাবে একটি দায়িত্বপূর্ণ পদে উঠে এলেও আলিফার কণ্ঠে শুধুই ক্ষোভ, শোক এবং প্রতিশ্রুতি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এক ভিডিও বার্তায় আলিফা বলেন, “একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এক ফুটফুটে নিষ্পাপ ১১ বছরের শিশুকে প্রাণ হারাতে হল। আমি এই ঘটনার পর থেকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। ভীষণ রকম মর্মাহত এবং একই সঙ্গে রাগান্বিতও। আমি প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি এবং কড়া বার্তা দিয়েছি। যেই এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তার দল, বর্ণ বা পরিচয় যাই হোক না কেন, তাদের যেন কঠোরতম শাস্তি হয়।” নিজেকে একজন মা হিসেবে উল্লেখ করে আলিফা বলেন, “আমি নিজেও একজন মা। জানি, সন্তান হারানোর যন্ত্রণা কতটা ভয়ঙ্কর। এক মায়ের কোল খালি হয়ে গেলে তার হৃদয়ের ভিতরে কী কষ্ট জমে, আমি সেটা গভীরভাবে অনুভব করতে পারছি। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। এই পরিবারকে কীভাবে সমবেদনা জানাব, ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।” তিনি আরও প্রতিশ্রুতি দেন, “এই পরিবারের পাশে আমি থাকব। ভবিষ্যতে যাতে আর কোনও শিশুকে এমন ঘটনায় প্রাণ দিতে না হয়, সেই চেষ্টাই করব। আমি প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখব এবং বারবার মনে করিয়ে দেব, যারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তাদের যেন কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হয়।”
তামান্না খাতুনের আকস্মিক মৃত্যু শুধু আলিফাকেই নয়, স্তব্ধ করে দিয়েছে গোটা এলাকা। একদিকে নির্বাচনী জয়ের আনন্দ, অন্যদিকে এক পরিবারের শোকের ছায়া। এই দ্বৈত অনুভব যেন ছায়া ফেলেছে কালীগঞ্জে। উল্লেখযোগ্য ভাবে, ঘটনার ঠিক পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) নিজেও এই মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোকপ্রকাশ করেন এবং পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। ঘটনার তদন্তে নেমে এখনও পর্যন্ত এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতের নাম আফতাব শেখ (Aftab Sheikh)। তবে, একমাত্র এই গ্রেফতারিকে ঘিরেই উঠেছে নানা প্রশ্ন। এলাকার বহু বাসিন্দা এবং বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, শুধু একজনের গ্রেফতারি যথেষ্ট নয়। মিছিল চলাকালীন বিস্ফোরণের মত ঘটনার পিছনে আরও অনেকের হাত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বলে পুলিশ সূত্র মনে করে।
তবে প্রশাসনের ভূমিকাও যে প্রশ্নের মুখে, তা স্পষ্ট জনমতেই। অনেকেই জানতে চাইছেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিজে কড়া বার্তা দেওয়ার পরও কেন এত দিনেও শুধু একজনকে গ্রেফতার করা হল?” স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত তদন্ত শেষ করে দোষীদের শনাক্ত করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করুক প্রশাসন। এই ঘটনার পর জয়ী প্রার্থী আলিফার আচরণ প্রশংসিত হয়েছে বিভিন্ন মহলে। তাঁর সংবেদনশীল বার্তা, শোকপ্রকাশ এবং ভবিষ্যতে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি অনেকের হৃদয়ে ছুঁয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক শোভাযাত্রার ভিড়ে এক শিশুপ্রাণ হারানো যে কতটা গভীর বেদনার, তা যেন বারবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন আলিফা। ঘটনাটি আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, রাজনৈতিক উল্লাসের নামে যদি সামান্যতম গাফিলতিও হয়, তা কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে, শিশুদের সুরক্ষার প্রশ্নে কোনও রকম অবহেলা যে পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে, কালীগঞ্জ তার জ্বলন্ত উদাহরণ।
নতুন প্রার্থী হিসেবে আলিফা আহমেদ যে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব বুঝে নিচ্ছেন, তা তাঁর বিবৃতিতেই স্পষ্ট। এখন দেখার, প্রশাসন কতটা দ্রুত এবং কঠোর পদক্ষেপ নেয় এবং তামান্নার পরিবার কতটা সুবিচার পায়। একে রাজনৈতিক জয় নয়, যেন এক নতুন দায়িত্বের সূচনা বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ, গণতন্ত্রের উৎসব যে নিরীহের কান্নায় ভেসে যেতে পারে, তা কালীগঞ্জ ফের মনে করিয়ে দিল। তামান্নার প্রাণহানির ঘটনায় মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়-এর নেতৃত্বে সিপিআই(এম) ও তাঁদের যুব সংগঠন DYFI প্রতিবাদ মিছিল করে ও থানায় বিক্ষোভ দেখায় বলে উল্লেখ।
ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Minakshi Mukherjee, DYFI | নতুন দায়িত্বে ধ্রুব, মুখপত্রে সরোজ: যুব সংগঠন থেকে বিদায় নিলেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়
