



অতীতের একসময় মেইন স্ট্রিম সংবাদ মাধ্যমে সাংবাদিকতা করেছেন। তারপর অনেক উত্থান পতন ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে আজও সাংবাদিকতার মাধ্যমে আকাশকে ছুঁতে চাওয়ার স্বপ্ন পিয়ালী দাশ-এর। তাঁর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় পিনাকী চৌধুরী।
প্রশ্ন : আপনি তো একসময় বহুল প্রচারিত সংবাদ পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন। কেমন ছিল সেইসব ব্যস্ততার দিনগুলো?
পিয়ালী : খুবই ভাল ছিল সেইসব দিনগুলো। কাজ করা, হাতে কলমে কাজ শেখা, কাজের মাধ্যমে বহু মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া।
প্রশ্ন : আপনার কি মনে হয় না যে সাংবাদিকতার মান আগের থেকে অনেক নেমে গিয়েছে?
পিয়ালী : হ্যাঁ, কিছুটা হলেও…!
প্রশ্ন : বর্তমানে আপনার ইউ টিউব চ্যানেলে প্রচুর সাবস্ক্রাইবার রয়েছেন। অনেকেই সেখানে খবর দেখেন…
পিয়ালী : হ্যাঁ, ঠিকই।
প্রশ্ন : সাংবাদিকতা একটা মহান পেশা। কিন্তু ইদানিং আবার পেড নিউজের রমরমা! কী বলবেন?
পিয়ালী : সত্যিই তাই! এটা ভাবতেই খুব খারাপ লাগে। সংবাদমাধ্যমকে বলা হয় গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ। আজ সে তার গ্রহণযোগ্যতাকে ক্রমশ হারিয়ে ফেলছে নৈতিকতা থেকে দূরে চলে এসে!
প্রশ্ন : খুব সাধারণ একটা খবরকে যদি সাহিত্যসমৃদ্ধ ভাষায় পরিবেশন করা যায় তাহলে তা পাঠকমহলে সমাদৃত হয়। মানবেন?
পিয়ালী : সহমত নই। আমি যা শিখেছি বা জেনেছি, তা হল সংবাদের ভাষা হতে হবে সহজ, সরল। যাতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে খুব সহজেই মূল খবরটি পৌঁছে যায়। সাহিত্য সমৃদ্ধ ভাষায় পরিবেশন করা খবর ফিচার নিউজের জন্য আদর্শ।
প্রশ্ন : আর জি কর কান্ড নিয়ে সারা দেশ তোলপাড় হচ্ছে। এদিকে আবার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন! কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
পিয়ালী : নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের কাছে সারা দেশে একটি আদর্শ হয়ে থাকবে এই প্রতিবাদ আন্দোলন। প্রশাসন এবং আইন ব্যবস্থায় একটা স্বচ্ছতা থাকা প্রয়োজন। আর দোষীদের কঠোরতম শাস্তি হলে তবেই আমরা সাধারণ মানুষ কিছুটা আস্বস্ত হব।
প্রশ্ন : আপনি রাত দখল কর্মসূচিতে পথে নেমে প্রতিবাদ করেছেন…
পিয়ালী : হ্যাঁ, করেছি। প্রয়োজনে আবারও পথে নামব।
প্রশ্ন : ইদানিং নেগেটিভ পাবলিসিটির বিশাল চাহিদা রয়েছে। মানবেন তো?
পিয়ালী : হ্যাঁ, ঠিকই। তবে তার প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
প্রশ্ন : হালফিলে খবরের কাগজ হাতে নিয়ে পড়বার অভ্যাস কিছুটা হলেও কমে গেছে। সেতুলনায় অনেকেই নিউজ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত টাটকা খবর পড়তে আগ্রহী। কি বলবেন?
পিয়ালী : হ্যাঁ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী।
প্রশ্ন : সামাজিক মেলামেশা কমেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে আসক্ত হয়ে পড়েছি। এবিষয়ে আপনার ব্যাখ্যা…
পিয়ালী : সবকিছুরই ভাল ও মন্দ দিক রয়েছে। আমরা সেগুলো কিভাবে ব্যবহার করছি, সেটাই বিচার্য বিষয়। সামাজিক মাধ্যমে নিজের মতামত খুব সহজেই বহুজনের সামনে উপস্থাপিত করা যায়। তবে সামাজিক মেলামেশার যে অনুভব, প্রয়োজনীয়তা, তার চাহিদা সামাজিক মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন : ইদানিং বই পড়বার অভ্যাস কিছুটা হলেও কমে গিয়েছে। অতীতে মধ্যবিত্ত বাঙালি গভীর রাতে রবীন্দ্র রচনাবলী পড়ে তবেই নিদ্রা যেতেন। আর এখন হোয়াটস অ্যাপে মুচমুচে চটুল জোকস আর নিম্নমানের ফেক নিউজের ছড়াছড়ি। কি বলবেন?
পিয়ালী : হ্যাঁ ঠিকই। এর প্রভাব নেতিবাচক।
প্রশ্ন: লেখালেখি অথবা সাংবাদিকতা, জীবন শুরু হয় চল্লিশের পর থেকেই। মানবেন?
পিয়ালী : একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই তার জীবন শুরু হয়। সে তার চাহিদা, সুবিধা, অসুবিধা কান্নার মাধ্যমে প্রকাশ করে। লড়াই আর জীবন একে অপরের পরিপূরক। আর জীবনের প্রতিটি অধ্যায়েই একটা করে নতুন জীবন শুরু হয়। শুধুমাত্র লেখালেখি অথবা সাংবাদিকতা নয়, যে কোনও পেশার ক্ষেত্রে এটি সত্য।
প্রশ্ন : এটা একবিংশ শতাব্দীর ফেসবুকের যুগ! সেখানে যে যত বেশি লাইক পাবেন, তিনিই হলেন স্বঘোষিত সেলিব্রেটি! কি বলবেন?
পিয়ালী : এটাও একটা সাধনার পথ। বেশি লাইক পাওয়া কখনও যোগ্যতা বিচারের মানদণ্ড হতে পারে না। সেকারণেই তাঁরা স্বঘোষিত সেলিব্রেটি।
প্রশ্ন : সাংবাদিকতা আপনার পেশা। আর সুললিত কণ্ঠে কবিতা পাঠ আপনার নেশা…
পিয়ালী : হ্যাঁ একদমই তাই। একটা পেশা আর অপরটি নেশা।🍁
আরও পড়ুন : RG Kar Protest : ‘সিপিকে মেরুদণ্ড দিয়ে এসেছি’ ডেপুটেশন থেকে ফিরে বললেন জুনিয়র চিকিৎসক
