Sasraya News

Friday, March 28, 2025

International women’s day : নারী দিবসের শতনাম

Listen

ওরা চিত্রাঙ্গদা চেনে না, ওরা সবলা কবিতা পাঠ করেনি। ওরা শুধু জানে লিপস্টিক বা মেকাপের আড়ালে কিভাবে গতকাল রাতে পুরুষের দেওয়া ক্ষত ঢাকতে হয়। ওদের জন্য বিনিয়োগের কথা ভেবেছেন কিছু? ওদের তো শিক্ষা নেই। কাজেই ওই একমাত্র ভরসা বাবা মহেশ্বর! ওরা কিন্তু খুব নিষ্ঠা সহকারে পুজো করে। কারণ এদেশের এখনও অনেক মেয়ে জার্মান‌ জানে না, ফার্সি জানে না শুধু কাঁদতে জানে। লিখেছেন : হৈমন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

 

 

.
—- হ্যালো, প্রতিমা, তোমার কাজের মেয়ে এসেছে?

—- না। দেখো, আবার না বলে বসে আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের জন্য ছুটি নিয়েছি। ঘরে ঘরে এখন মোবাইল…।

—- আরে আমার তো আবার আজকে নারী দিবসের বক্তৃতা দিতে যেতে হবে। কি মুস্কিল হল বল দেখি!

২. ফেরী ঘাট-

—- আরে ও মুঙলি যারা জোরসে ঠ্যেল ! কুছু জোর নাহি তোহোরি বাহ মে ক্যা।

—- প্যাঙলা কাঠি মেয়ে মুঙলি নিজের সবটুকু জোর প্রয়োগ করে গঙ্গার ঘাটে সব্জি সহ ভ্যান রিক্সা তুলতে বাধ্য হয়।

৩. কলেজ ঘাট বটতলা-

প্রতিদিন তার সঙ্গে আমার হাসি বিনিময় হয়। কোনোদিন স্কুলের অনুষ্ঠান থাকলে তার কাছে গাঁদা ফুল নিয়ে থাকি। এর বাইরে আর কিছু নয়। তবে বেশ বুঝতে পারি ওর সংসারে ও একা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

 

 

 ৪. মধুপুর বাজার-

প্রতিদিন আমি যখন গাড়ির পেছনে চেপে স্কুলে যাই, তখন তার সঙ্গে আমার হাসি বিনিময় হয়। আমি ওর নাম জানি না। দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করবার সময়টুকু মেলেনি আজ পর্যন্ত। তবে আমাদের হাসিতে একটা আত্মিক টান আছে।

৫. স্কয়ার ফিল্ডের কাছে-

একদল লাল পাড় শাড়ি পরিহিত মহিলা গঙ্গার জল নেওয়ার জন্য ছুটছে‌! মুখে তাদের শিবের জয়গান। বুঝলাম এ দেশের উন্নয়নে ধর্মের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। কিছু নিয়ে তো ভুলে থাকতে হবে। তবে এই দলের কাউকেই আমার শিক্ষিত মনে হয়নি হওয়ার কথাও তো নয় । নিজের অধিকার বুঝে নিতে মিনিমাম এডুকেশনের প্রয়োজন হয়।

৬.স্কুলে

অনেকেই অনুপস্থিত কারণ তাদের ধারণা হয়েছে পুজোর জন্য অন্যান্য স্কুলের ছুটি আছে তাহলে …. এরপরেও যারা এসেছেন। কিছু সংখ্যকের বক্তব্য বড়দি তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দিন উপোস আছি জোগাড় করতে হবে সবকিছু। কেউ প্রকাশ না করলেও মুখ দেখলেই বোঝা যায় সংসারে এদের মূল্য কতখানি!

 ৭. মধুপুর বাজার-

যথারীতি সব্জি নিয়ে হাজির মেয়েরা এবং চা এর দোকানের মহিলা মালিক রাধা। আমি জানি না তারা বিন্দুমাত্র ওয়াকিবহাল কি না এ-বিষয়ে আর যদি হয়েও থাকেন উপায় কোথায়? বাঁচতে হবে তো সেই লড়াই করেই।

৮. এবছরের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের থিম –
অন্তর্ভুক্তি বিনিয়োগ। অবশ্যই হয়েছে পাঁচশো থেকে বেড়ে একহাজারে পৌঁছেছে এবং সেটা সারাজীবনের জন্য। মেয়েদের আবার হাত খরচ কী? সে তো কেবলমাত্র পুরুষের জন্য। শিক্ষিত -অশিক্ষিত নির্বিশেষে এ অধিকার ভোগ করছে। পায়ের উপর পা তুলে খাও, পুরুষ মানুষ পরিশ্রম করে খাওয়াবে এই অঙ্গিকারেই তো বিবাহ নামক ব্যবস্থা উপরি পাওনা মাস গেলে একহাজার টাকা।

৯. আমার মোবাইল-

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুভেচ্ছায় ছড়াছড়ি। এমনকি মহিলারাও‌ অন্য মহিলাদের সেই বার্তা দিচ্ছেন। দেশ উন্নয়নের দিকে এগোচ্ছে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। মানুষে মানুষে এই যে মেলবন্ধন ফেসবুক মারফত তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই।

 

 

এবার আসুন একটু বিশ্লেষণ করি—

১. প্রথম ঘটনা দুজন নারী তুলনামূলক নীচু মানের পরিচারিকা’কে নীচু করেছেন অথচ এই নারী মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে বলবেন নারী শক্তির জয় হোক। সকলকেই সমান ভাবতে হবে। জিও! এই না হলে নারী দিবসের তাৎপর্য।

২. একজন বয়স্ক জ্যাঠাইমা তার বৌমা’কে ভারি পরিশ্রমের কৌশল শিখে নিতে হবে এই মর্মে জ্ঞান দিচ্ছেন। সাব্বাস! একজন দুর্বল মহিলার শরীরের উপর একজন মহিলার সহমর্মিতা।

৩. কলেজ ঘাট বটতলায় এই মেয়েটিকে সামনে বসে থাকা টুকটুকে চালকদের অকথ্য গালিগালাজ এবং নোংরা কথাবার্তার মাঝে‌ বসে তাকে‌ লড়াই করতে হয়। শুধু তাই নয় সকালবেলায় পাশের বাপুজী‌ পাঠাগারের দিদিমণিরা দাবি করেন এটা আমাদের জায়গা এখানে বসতে গেলে আমাদের কম মূল্যে ফুল দিতে হবে সঙ্গে ফাউ দিতে হবে। চমৎকার আজ নারী দিবস।

৪. মেয়েটি একদিন একটু ভালো শাড়ি পরে ঝাঁট দিচ্ছিল পরক্ষণেই দেখি এই কাজে নিযুক্ত সার্ভে করা মহিলাটি বলে উঠল, ” কি রে , বিধবার‌ এত সাজ কেন? মজে গেলি না কি? ছিঃ! ছিঃ।আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস।

৫. ওরা চিত্রাঙ্গদা চেনে না, ওরা সবলা কবিতা পাঠ করেনি । ওরা শুধু জানে লিপস্টিক বা মেকাপের আড়ালে কিভাবে গতকাল রাতে পুরুষের দেওয়া ক্ষত ঢাকতে হয়। ওদের জন্য বিনিয়োগের কথা ভেবেছেন কিছু? ওদের তো শিক্ষা নেই। কাজেই ওই একমাত্র ভরসা বাবা মহেশ্বর! ওরা কিন্তু খুব নিষ্ঠা সহকারে পুজো করে। কারণ এদেশের এখনও অনেক মেয়ে জার্মান‌ জানে না, ফার্সি জানে না শুধু কাঁদতে জানে।

৬. অনেকের স্বামী ছেড়ে দিয়েছেন অথবা অন্য মেয়ের সঙ্গে থাকেন কিন্তু তাতে কী? ওরা প্রতিশোধ নেবে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখবে কোন ভরসায়? আছে কিছু বিনিয়োগ এদের জন্য। লজ্জা! আজ নারীদিবস।

 

 

৭. অনেক পুরুষের কুৎসিত ইঙ্গিত মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। ওরা বুঝে গেছে ব্লাউজের একদিকটা একটু অবচেতন মনে বের করে রাখতে‌ পারলে পুরুষ খদ্দেরের ভিড় বেশ জমবে। জেনেশুনে বিষ করেছি পান…। সংসারের‌ লড়াইটা চলছে আশৈশব। গরীব মাতা জন্ম দেওয়ার পর একটা শিক্ষা দিয়ে‌ থাকে মেয়েমানুষকে, সবকিছু সহ্য করতে হয়। কিন্তু মানুষ কোথায়! পড়ে থাকে শুধুই মেয়ে। স্যালুট এইসব লড়াকু নারীদের আজ নারী দিবস।

৮. মধ্যবিত্ত স্বচ্ছল পরিবারের বেশিরভাগ মেয়েরাই ভাবেন‌ পদস্থ স্বামীর ইনকামের খাওয়া না কি অনেক সম্মানজনক। পাঁচ দশহাজার টাকার বিনিময়ে কোনো প্রাইভেট স্কুলে বা কোনো সংস্থায় জব নেওয়া লজ্জার। সুন্দর! চিন্তাভাবনা নারী। নারী দিবসের শুভেচ্ছা রইল।

৯. ফেসবুক এ শুভেচ্ছা বার্তা জানানোর পর আড়ালে দাঁড়িয়ে সেই নারীর উন্নতি দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে আমরা প্রায়শই তার নামে বদনাম করে থাকি। ছাড়ো তো… ঢুলানি করে কাজ হাসিল করে। ধন্যবাদ। আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস।

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের থিম ছেড়ে আসুন অঙ্গীকারবদ্ধ হই একজন নারী হয়ে অপর একজন নারীর প্রাপ্যসম্মানটুকু থেকে তাকে বঞ্চিত করব না। সেইদিন সফল নারী দিবস পালিত হবে অন্যথা পুরুষের দোষ, পুরুষের করুনা , “নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার কেন নাহি দিবে অধিকার হে বিধাতা”! বিধাতার কোটে বল ফেলে দিয়ে পরম নিশ্চিন্তে কাল কাটানোর দিন গেছে নারী মাত্রই।

আরও পড়ুন : Sasraya News Sunday’s Literature Special | 2 March 2025, Issue 54| সাশ্রয় নিউজ রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল | ২ মার্চ ২০২৫ | সংখ্যা ৫৪

ছবি : আন্তর্জালিক 

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment