Sasraya News

Wednesday, April 23, 2025

International Mother’s Day : আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবস নিয়ে কলম ধরলেন চৈতালী

Listen

আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবস। পৃথিবীর সুমিষ্ট শব্দটি হল মা। আজ আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবসে ‘মা’ বিষয়ে লিখলেন : চৈতালী… 

 

 

মা 

 

ন্ধ্যা ছটার ট্রেনটা মিস্ হয়ে গেল। স্টেশনে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেই নাকের ডগা দিয়ে বেরিয়ে গেল। পরের ট্রেন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটাযয়। মুনমুন বলল, দিদি বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে যাবে, তাছাড়া স্টেশনে এক ঘন্টার বেশি বসে থাকতে হবে, তার চেয়ে বরং চলো আমাদের বাড়িতে রাত্তিরে থেকে, কাল সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়ব। 

 

 

এই মাত্র মুনমুনের বাড়ি থেকেই ফিরছি, আবার ওখানে যাওয়ার ইচ্ছে নেই একদম। নিজের বিছানা ছাড়া ঘুম ও আসে না। তাই বললাম, একটু না হয় দেরি হবে! কিন্তু বাড়ি তো ফিরে যাব। এক ঘন্টা স্টেশনে বোসতে কোনও অসুবিধা নেই। ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও তাকে রাজি হতে হল। আমাকে একা ফেলে যেতেও পারল না।

ছোট স্টেশন। লোকজন কম। দু-তিনটে খাবারের স্টল ছাড়া প্রায় কিছুই নেই। সামনেই একটা সিমেন্টের বেঞ্চ, সেখানেই আমরা বসলাম। সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। আলো আধো অন্ধকার। দিনের এই সময়টা আমার সব থেকে প্রিযয়। মুখে চোখে ঠাণ্ডা হাওয়ার ছোঁয়া পেতেই বুঝলাম বৃষ্টি আসবে। বেশ জোরে জোরে হাওয়া দিচ্ছে।

 

 

অভ্যাস বসত বসে থাকতে না পেরে হাঁটাহাঁটি শুরু করলাম। দু-পা এগিয়েই দেখলাম, পর পর দু-তিনটে স্টল। অ্যালমুনিয়ামের গামলায় উনুনের ওপর কিছু গরম হচ্ছে। সামনে গিয়ে দেখি ঘুগনি বিক্রি হচ্ছে। দেখতে বেশ ভাল লাগল।  মনে হল যেন, কতদিন খাইনি!

 

 

ও… ভুলে গিয়েছিলাম! বিষ্ণুও সঙ্গে। মুনমুনের ছেলে।  আমার ল্যাজ! বলল, পিপি (পিসি) আমি মামলেট (ওমলেট) খাব।

তিন প্লেট ঘুগনি আর একটা মামলেট নেওয়া হল।  মটরের ওপর শসা-পেঁয়াজ কুচি, সেউ ভাজা আর তেঁতুলের চাটনি দিয়ে সাজানো। সে কি সুন্দর খেতে!
মনে মনে ভাবলাম বাড়িতে তৈরি করলে এত সুন্দর হয় না কেন? বিষ্ণুর ঘুগনিতে দু-একটা লঙ্কা কুচি পড়ে গেছিল, সে ঝালে উ…. আ…. করতে করতে দোকানদারকে বলল, তুমি আমার ঘুগনিতে ঝাল দিয়েছ কেন? তোমায় পয়সা দেব না। ছোট ছেলেটার মুখে এমন কথা শুনে দোকানদার হেসে অস্থির। সঙ্গে সঙ্গে বিষ্ণুর হাতে একটা চকলেট দিয়ে দিল। চকলেট পেয়েই বিষ্ণুর রাগ শেষ।

খাওয়া শেষ হলে আবার স্টেশনে হেঁটে বেড়ানো। হাতে এখনো আধ ঘন্টা সময়। খানিকটা এগিয়ে গিয়ে দেখি একটা স্টেশনারি স্টল। সেখানে বিভিন্ন রকমের খেলনা থেকে শুরু করে রাক্ষসের মুখ বানানো মালা।  ঠাকুরের মূর্তি। ইত্যাদি আরও অনেক কিছু সাজানো রয়েছে। বিষ্ণু খেলনা দেখতে শুরু করে দিল আর আমার চোখ পড়ল একটা বাজনার ওপর।

বাজনার সঙ্গে যেন পূর্বজন্মের সম্পর্ক। বাজাতে পারি না পারি কালেকশনের কমি নেই। বাজনাটা খুবই চেনা। মনে পড়ে গেল, বর্ণপরিচয়ে পড়েছিলাম, এ থেকে একতারা। হাতে নিয়ে বাজাতে শুরু করে দিলাম। সুর বাঁধার চেষ্টা করলাম। হচ্ছে না দেখে দোকানদার ছেলেটি বাজিয়ে দেখিয়ে দিল। খুব সহজেই সুর তুলে দেখাল। কতটা শিখতে পারলাম জানি না। তবে শুনতে দারুণ লাগছিল। বিষ্ণু একটা রাক্ষুসের মুখ বানানো মালা আর একটা খেলনা গাড়ি কিনল। মাত্র দেড়শো টাকায় ওই সুন্দর দেখতে একতারাটা পেয়ে গেলাম। ছেলে-মানুষের মতন বাজাতে বাজাতে মনের আনন্দে দু’জনে মিলে হাঁটতে লাগলাম।

 

 

এতক্ষণে স্টেশনে বেশ ভিড় হয়েছে। বোঝা গেল সবার ট্রেনের টাইম জানা আছে। হঠাৎ চোখে পড়ল এক বৃদ্ধাকে। পরনে পরনে ছেঁড়া শাড়ি, খালি পা, দুর্বল।  যেন হাঁটার ক্ষমতাই নেই। সামনে এগুতে দু’হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে যান। কী করব বুঝতে পারলাম না!  কে ইনি? নিশ্চয়ই কোনও সন্তানের মা! এনার সন্তান এভাবে রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছে! নানান প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে… 

দাঁড়িয়ে পড়েছি দেখে বিষ্ণু বলে উঠল, পিপি চলো ট্রেন এসে যাবে। কিছু টাকা বৃদ্ধার হাতে দিয়ে আবার হাটতে লাগলাম। মনটা কেমন খারাপ হয়ে গেল।  নিজের ওপর খুব লজ্জা লাগছিল। ভাবছিলাম, কিছু কীআর করা যেত না!

চোখে মুখে ফোঁটা ফোঁটা জল পড়া অনুভব করলাম। বৃষ্টি… ! ততক্ষণে মুনমুন বেঞ্চ থেকে উঠে দোকানের ভেতরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি সেখানে যেতে গিয়ে দেখলাম, একটা ছোট্ট তিন ফুটের বাঁশের গেট।  একদম নিচু হয়ে ঝুঁকে দোকানের ভেতরে গেলাম।  বিষ্ণুর জন্য খুব সোজা। ও-বেশ টুক করে গেট পার করে নিল। 

 

 

ততক্ষণে মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে। দোকানের ভেতর ক’য়েকটি বাঁশের বেঞ্চ। একটাতে আমরা বসলাম।  সামনে ছোট্ট জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে নিচের পুকুর।  নামার জন্য মই এর ব্যবস্থা রয়েছে। প্রচণ্ড বজ্রপাত সহ বৃষ্টি পড়ছে। সঙ্গে বিদ্যুৎও চমকাচ্ছে। মনে হচ্ছিল,  এমন বৃষ্টি অনেক দিন পর দেখছি। অথবা খোলা বাঁশের দোকানের ভেতরে বসে এমন বৃষ্টি জীবনে আগে কখনও দেখিনি!

দোকানের ছেলেটি চা খাওয়াল। মাটির ভাঁড়ে চা। সঙ্গে মামলেট। এবার বিষ্ণুর মামলেটে কাঁচা লঙ্কা দেয়নি। ভাঁড়ে চা খেতে খেতে বৃষ্টি দেখা। সে যে কি অপূর্ব অনুভব বলে বোঝানো যাবে না। সঙ্গে নায়ক হিসেবে একতারা। সেদিন যদি ট্রেন না আসত তাহলে হয়ত নিজেকে কোথাও হারিয়ে ফেলতাম। বৃষ্টি আর একতারা সেদিন যেন বাকি সময়টা কাটানোর জন্য যথেষ্ট ছিল।

ট্রেনে বসে মায়ের মুখটা ভীষণ ভাবে মনে পড়ছে। সঙ্গে স্টেশনের সেই বৃদ্ধা মহিলার মুখটা। 🦋

ছবি : আন্তর্জালিক 

 

আরও পড়ুন : Sasraya News, Literature Special, May 12, 2024, Issue : 16।। সাশ্রয় নিউজ, সাহিত্য স্পেশাল।। মে ১২, ২০২৪, সংখ্যা ১৬

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment