



দিলীপ গুহ, সাশ্রয় নিউজ ★ নতুন দিল্লি : ভারতের ইতিহাসে সবথেকে ব্যয়বহুল বিমা নিষ্পত্তির সাক্ষী হতে চলেছে আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা। এয়ার ইন্ডিয়ার ওই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ২৯২ জন। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই দুর্ঘটনার পর বিমা দাবির পরিমাণ ছুঁতে চলেছে প্রায় ৪৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪,০৮০ (Indian Rupee) কোটি টাকা। এই বিপুল অঙ্কের বিমা দাবি প্রসঙ্গে জেনারেল ইনশিওরেন্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর রামাস্বামী নারায়ণন (Ramaswamy Narayanan) জানিয়েছেন, “এত বড় অঙ্কের বিমা দাবি এর আগে ভারতের ইতিহাসে দেখা যায়নি। বিমানের ক্ষয়ক্ষতি ও যাত্রী বিমা মিলিয়ে এই অঙ্ক দাঁড়াচ্ছে। এটি সম্ভবত দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিমা নিষ্পত্তি হতে চলেছে।”
এই বিমা দাবির মধ্যে প্রায় ১২৫ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ প্রায় ১,০৭৫ কোটি টাকা নির্ধারিত হচ্ছে বিমানের ইঞ্জিন ও হালচাল সংক্রান্ত ক্ষয়ক্ষতির জন্য। বাকি ৩৫০ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৩,০০০ কোটি টাকার বেশি থাকবে যাত্রী বিমার আওতায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, যেহেতু দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে একাধিক বিদেশি নাগরিকও ছিলেন, তাই তাদের নিজ নিজ দেশের আইন অনুযায়ী আলাদা করে ক্ষতিপূরণ হিসেব করা হবে, সেক্ষেত্রে বিমার দাবির অঙ্ক আরও বাড়াতে পারে। বিশ্লেষক সংস্থা গ্লোবালডেটা (GlobalData)-র মতে, ভারতীয় বিমা শিল্পের উপরে এই বিপুল অঙ্কের বিমা দাবির প্রভাব তেমন হবে না। সংস্থাটির মতে, “ভারতীয় বিমা সংস্থাগুলি সাধারণত তাদের মোট ঝুঁকির ১০ শতাংশেরও কম বহন করে। বাকিটা পুনর্বিমাকারী সংস্থাগুলির হাতে সঁপে দেওয়া হয়।” অর্থাৎ, এই দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণের আসল ভার বহন করবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের আন্তর্জাতিক রিইনশিওরেন্স সংস্থাগুলি। নারায়ণন আরও জানিয়েছেন, “প্রথম ধাপে বিমানের কাঠামো ও ইঞ্জিন সংক্রান্ত বিমা দাবি নিষ্পত্তি করা হবে। যাত্রী বিমা এবং অন্যান্য সংবেদনশীল দাবির নিষ্পত্তি তুলনায় সময়সাপেক্ষ হবে।” তিনি আশাবাদী, দেশের বিমা কাঠামো এই চ্যালেঞ্জ সামাল দিতে সক্ষম হবে।

উল্লেখ্য, ১২ জুন যখন আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে টেক-অফ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই এয়ার ইন্ডিয়ার একটি আন্তর্জাতিক বিমান যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ভেঙে পড়ে। দুর্ঘটনার তীব্রতায় সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটে। এবং আগুন লেগে যায় পুরো বিমানে। উদ্ধারকাজে নামে বিমানবাহিনী, দমকল ও স্থানীয় প্রশাসন। ওই দুর্ঘটনায় নিহতদের সংখ্যা প্রায় ২৯২ জন। বিমা দুনিয়ার অভিজ্ঞদের মতে, এই দুর্ঘটনা শুধুমাত্র বিমা শিল্পে আর্থিক চাপ সৃষ্টি করবেই না, বরং বিমা কাঠামো, ঝুঁকি বণ্টন ও পুনর্বিমা ব্যবস্থার ওপরও নতুন করে প্রশ্ন তুলবে। তবে গ্লোবালডেটা’র মতে, ২০২৩ সালে ভারতীয় বিমান শিল্পে মোট যত বিমা প্রিমিয়াম জমা পড়েছিল, এই একটি দুর্ঘটনার বিমা দাবি তা থেকে তিন গুণেরও বেশি।উল্লেখযোগ্যভাবে, ১৯৯৯ সালে ভারত ‘মন্ট্রিল কনভেনশন’ (Montreal Convention)-এ সই করে, যার ফলে দেশের সমস্ত বিমান পরিষেবাই আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী বিমা ও ক্ষতিপূরণ নীতির আওতায় পড়ে। এই নিয়ম অনুসারে, যাত্রী যদি বিমানে থাকা অবস্থায় মারা যান কিংবা আজীবন শারীরিক অক্ষমতায় ভোগেন, সেক্ষেত্রে বিমা দাবি করা যায়। পাশাপাশি, দুর্ঘটনার চিকিৎসা খরচ ও সম্পত্তি ক্ষতির ক্ষেত্রেও বিমার সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। বিমা পরিষেবা প্রদানকারী এজেন্সিগুলির কাছে এ ধরনের দাবির মোকাবিলা নতুন নয়। কিন্তু একসঙ্গে এত বিশাল পরিমাণ দাবি নিষ্পত্তি বিরল। বিমা বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, সামনের দিনে বিমা প্রিমিয়ামের হার বাড়তে পারে। বিশেষত আন্তর্জাতিক উড়ান পরিষেবার ক্ষেত্রে।
এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার তদন্ত ইতিমধ্যেই শুরু করেছে এয়ারক্র্যাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (Aircraft Accident Investigation Bureau)। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ ও দায় নির্ধারণ হলে বিমা নিষ্পত্তির প্রক্রিয়াও আরও স্পষ্ট হবে বলে আশা করা হচ্ছে।ভারতের বিমান দুর্ঘটনার ইতিহাসে বড় মমর্মান্তিক ঘটনা শুধু প্রাণহানি নয়, অর্থনৈতিক ও বিমা ক্ষেত্রেও এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে পড়বে। তবে এই বিপুল অঙ্কের বিমা দাবি দেশের বিমা ব্যবস্থার কার্যকারিতা ও আন্তর্জাতিক বিমা কাঠামোর ওপর ভারতীয় সংস্থাগুলির নির্ভরতার বাস্তব ছবি তুলে ধরছে।
ছবি : প্রতীকী ও সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Jackfruit recipe | বাংলার রান্নাঘরে ফিরছে গাছের মাংস, ফলের দুধস্নান ও এঁচোড় বিরিয়ানি
