Sasraya News

Indian Astronauts, Shubhanshu Shukla | SpaceX : ৪১ বছর পর ফের মহাকাশে ভারত, শুভাংশুদের নিয়ে উড়ল ‘ড্রাগন’

Listen

সৌমি নন্দ, সাশ্রয় নিউজ ★ ফ্লোরিডা : ভারতীয় সময় ১২টা ১ মিনিট। সারা দেশের নিঃশব্দে অপেক্ষা করা মুহূর্তটিই তখন ফেটে পড়ল গর্বে, উত্তেজনায়। কেনেডি স্পেস সেন্টার (Kennedy Space Center) থেকে স্পেসএক্সের (SpaceX) ‘ড্রাগন’ মহাকাশযান যখন মহাশূন্যে পাড়ি দিল, সঙ্গে ছিলেন এক ভারতীয়ও শুভাংশু শুক্লা (Shubhanshu Shukla)। রাকেশ শর্মা (Rakesh Sharma)-র পরে দীর্ঘ ৪১ বছর বাদে ফের এক ভারতীয় পাড়ি দিলেন মহাকাশের পথে। শুধু তাই নয়, এই মিশন ভারতের মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ও রচনা করল। এই অভিযানটির নাম ‘অ্যাক্সিয়ম-৪’ (Axiom-4)। মার্কিন  যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা (NASA) ও বেসরকারি সংস্থা অ্যাক্সিয়ম স্পেসের (Axiom Space) যৌথ উদ্যোগে এই মহাকাশ যাত্রা পরিকল্প না হয়েছিল বহুদিন আগেই। প্রথমে এই মিশনের সম্ভাব্য দিন ধার্য হয়েছিল ২৯ মে, কিন্তু খারাপ আবহাওয়া ও কিছু প্রযুক্তিগত জটিলতার কারণে তা পিছিয়ে যায় বারবার। অবশেষে ২৬ জুন, ভারতীয় সময় অনুযায়ী দুপুর ১২টা ১ মিনিটে, ফ্যালকন ৯ (Falcon 9) রকেটের মাধ্যমে সফলভাবে উৎক্ষেপণ ঘটে ‘ড্রাগন’ মহাকাশযানের। তাঁদের এই মিশনে রয়েছেন চার নভশ্চর। ভারতের শুভাংশু শুক্লা ছাড়াও রয়েছেন নাসার প্রাক্তন নভশ্চর ও বর্তমান অ্যাক্সিয়ম স্পেসের মানব মহাকাশযানের ডিরেক্টর রেগি হুইটসন (Reggie Whitson), হাঙ্গেরির টিবর কাপু (Tibor Kapu), এবং পোল্যান্ডের স্লায়োস উজ়নানস্কি-উইসনিউস্কি (Slawosz Uznanski-Wisniewski)। চার জনের দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন হুইটসন, তিনি এর আগেও বহু মহাকাশ অভিযানে অংশ নিয়েছেন। ড্রাগন মহাকাশযানের পাইলট হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন শুভাংশু।

ভারতীয় মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্লা। ছবি : সংগৃহীত

এই সফল উৎক্ষেপণের আগে বুধবার সকালেও তৈরি হয়েছিল এক উদ্বিগ্ন পরিস্থিতি। উৎক্ষেপণের মাত্র ঘণ্টাখানেক আগে আচমকা দেখা দেয় এক প্রযুক্তিগত সমস্যা। জানা যায়, মহাকাশযানে আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য ঠিকমতো আপলোড হচ্ছিল না। ফলে উৎক্ষেপণ নিয়ে তৈরি হয় ধোঁয়াশা। কিন্তু নাসা ও স্পেসএক্সের (SpaceX) প্রযুক্তিবিদদের দ্রুত হস্তক্ষেপে সমস্যার সমাধান হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়েই উৎক্ষেপণ সম্ভব হয়।

উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ের বাসিন্দা শুভাংশু শুক্লা ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন। তাঁর বেছে নেওয়ার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ প্রশিক্ষণ এবং অসাধারণ শারীরিক-মানসিক দক্ষতার স্বীকৃতি। ইসরো (ISRO)-র তরফ থেকে প্রথমে দুই ভারতীয়। শুভাংশু ও প্রশান্ত বালকৃষ্ণন নায়ার (Prashant Balakrishnan Nair)-কে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়েছিল। শেষপর্যন্ত মূল অভিযাত্রীর ভূমিকায় থাকেন শুভাংশুই। প্রশান্ত রয়েছেন তাঁর বিকল্প হিসেবে। এই মিশনের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল নভশ্চরদের দীর্ঘ প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রস্তুতি। গত এক মাস ধরে চার অভিযাত্রীই ছিলেন নিভৃতবাসে (quarantine), যাতে কোনও সংক্রমণ তাঁদের মিশনে বিঘ্ন না ঘটাতে পারে। ১৪ দিনের এই মিশনে তাঁরা থাকবেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (International Space Station)। সেখানে তাঁরা অন্তত ৬০টি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ চালাবেন। এর মধ্যে রয়েছে ঔষধ গবেষণা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, দূর মহাকাশে মানুষের জীবদ্দশা সংক্রান্ত বিশ্লেষণ ও পরিবেশগত তথ্য সংগ্রহ। এই অভিযানের মাধ্যমে শুধু শুভাংশুই নন, সারা দেশ নতুন করে এক গর্বের অংশীদার হয়ে উঠল।

ভারতীয় মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্লা। ছবি : সংগৃহীত

ভারতীয়দের মহাকাশ গবেষণায় অংশগ্রহণ নতুন কিছু নয়, কিন্তু এতদিন পরে আবারও সরাসরি মহাশূন্যে একজন ভারতীয়ের পদার্পণ নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক। রাকেশ শর্মা ১৯৮৪ সালে সোভিয়েত মহাকাশযান ‘সয়ুজ টি-১১’ (Soyuz T-11) তে করে মহাকাশে পা রেখেছিলেন। তাঁর সেই বিখ্যাত উক্তি “সারে জাহাঁ সে আচ্ছা” আজও বহু ভারতীয়ের হৃদয়ে গাঁথা। এবার সেই পথেই পা ফেললেন শুভাংশু। যত সময় এগোচ্ছে, প্রযুক্তি আরও উন্নত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে ভারতের অংশীদারিত্বও বেড়েছে। এই অভিযানের সাফল্য শুধু ভারতের নয়, এটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ সহযোগিতার প্রতীকও বটে। ভবিষ্যতের দিকে তাকালে পরিষ্কার, ভারতের মহাকাশ গবেষণার পরিধি কেবল বিস্তৃতই হচ্ছে না, বিশ্বমঞ্চেও তা উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠছে। শুভাংশু শুক্ল ও তাঁর সঙ্গীদের এই মিশন কেবল একটি অভিযান নয়, এটি ভারতের এক নতুন স্বপ্নের সূচনা। যাত্রা শুরু হয়েছে, এবার অপেক্ষা তাঁদের মহাকাশ থেকে সাফল্য সঙ্গে নিয়ে ফিরে আসার। সমগ্র ভারতবাসী ও বিশ্ববাসী তাঁদের জন্য এই প্রার্থনাই এখন করছেন।

ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন : 

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment

Also Read