



পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায় ★ সাশ্রয় নিউজ : ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ শুরুর ঠিক এক সপ্তাহ আগে থেকেই উত্তেজনার পারদ চড়ল ভারতীয় শিবিরে। প্রশিক্ষণ শিবিরে একপ্রকার উষ্মা তৈরি হল ভারতীয় হেড কোচ গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir) ও প্রতিভাবান ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল (Yashasvi Jaiswal)-এর মধ্যে। ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবারের নেট অনুশীলনে। ভারতের তরুণ মুখরা যখন টেস্ট দলের প্রথম একাদশে জায়গা পাকা করার মরিয়া চেষ্টায় ব্যস্ত, তখন এই ধরনের ঘটনার ছায়া রীতিমতো অস্বস্তির।ঘটনার সূত্রপাত একেবারে নেটে। ‘রেভস্পোর্টস’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, যশস্বী অনুশীলনের সময় একের পর এক বল মারতে গিয়ে দ্রুতগতির ক্রিকেটের (T20 mindset) প্রতিফলন ঘটাচ্ছিলেন। প্রত্যেক ডেলিভারিতেই তিনি বড় শট নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন, যা শেষ পর্যন্ত তাঁকে আউট করে বসায়। সেখানেই গম্ভীরের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে বলে অনুমান। গম্ভীর তাঁকে ডেকে নেন পাশে, তাঁদের ভেতর চলতে থাকে বেশ কিছুক্ষণের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়।
এই মনোমালিন্য বেশিদূর না গড়ালেও, প্রথম টেস্টের আগে দলের ভিতরে যে চাপ তৈরি হয়েছে, তা অস্বীকার করা যাচ্ছে না। সেই ঘটনার পরে যশস্বীকে ফের নেটে ব্যাট করতে দেখা যায়। তবে এবার তিনি আগের চেয়ে অনেকটাই শান্ত এবং ধীর-স্থির। ব্যাটিংয়ে তাঁর আগ্রাসন হ্রাস পেয়েছে ও গম্ভীরের বার্তা যে তাঁর কানে পৌঁছেছে, তারই ইঙ্গিত মেলে।বিশেষজ্ঞদের মতে, গম্ভীর আসলে চেয়েছেন যশস্বীকে বোঝাতে যে, ইংল্যান্ডের সুইং পিচে চোখ বন্ধ করে চালিয়ে খেলা মানে আত্মঘাতী হওয়া। ইংল্যান্ড লায়ন্সের বিরুদ্ধে বেসরকারি টেস্টে যশস্বীর ফর্মও এই আশঙ্কাকে উসকে দিচ্ছে। চারটি ইনিংসে তিনি করেছেন মাত্র ২৪, ৬৪, ১৭ ও ৫ রান। এই পরিসংখ্যান যথেষ্ট নয় পাঁচ ম্যাচের মর্যাদাপূর্ণ টেস্ট সিরিজে নিজের জায়গা পাকা করতে।
প্রসঙ্গত, বিরাট কোহলি (Virat Kohli), রোহিত শর্মাদের (Rohit Sharma), অনুপস্থিতিতে এই সিরিজে নেতৃত্বের ভার সামলাচ্ছেন শুভমান গিল (Shubman Gill)। মূলত তরুণ মুখদের নিয়েই তৈরি হয়েছে এই নতুন ভারতীয় দল। আর সেই তরুণদের নিয়েই নিয়মিত অনুশীলনে ঘাম ঝরাচ্ছেন কোচ গম্ভীর।
বিসিসিআই (BCCI) তরফে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, ভারতীয় দলের অনুশীলন সেশনে পেপটক দিচ্ছেন গম্ভীর। ভিডিওতে তাঁর বক্তব্য স্পষ্ট, “আমরা আমাদের দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ তিনজন ক্রিকেটারকে পাচ্ছি না। কিন্তু এটা শুধু দুঃসংবাদ নয়। এই সুযোগটাই আমাদের জন্য এক নতুন ইতিহাস গড়ার প্ল্যাটফর্ম। দেশের হয়ে কিছু করে দেখানোর সুযোগ।” গম্ভীর তাঁর বক্তব্যে তরুণদের উদ্দেশে আরও বলেন, “তোমাদের মধ্যে খিদে আছে, প্যাশন আছে, দায়িত্ববোধও রয়েছে। আমাদের আত্মত্যাগ করতে হবে। আমাদের কমফোর্ট জোনের বাইরে গিয়ে লড়তে হবে। যদি আমরা প্রত্যেক সেশন, প্রত্যেক ঘণ্টা, প্রত্যেক বলে লড়াই করতে পারি, তবে এই সফরটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আর সেই লড়াই শুরু করতে হবে আজ থেকেই।” এই বার্তাতেই স্পষ্ট হয়ে যায়, গম্ভীর খেলোয়াড়দের থেকে শুধু দক্ষতাই নয়, চাইছেন মানসিক পরিণতিও। এই সময়েই যশস্বীর মতো একজন প্রতিভাবান ব্যাটারের কাছ থেকে টেস্ট ক্রিকেটের ধৈর্য ও শৃঙ্খলার প্রত্যাশা থাকা স্বাভাবিক। গম্ভীর যেমন বলেছেন, “দেশের হয়ে খেলার থেকে বড় সম্মানের কিছু নেই।” অর্থাৎ যশস্বীদের মত তরুণদের সামনে এখন নিজেকে প্রমাণ করার মোক্ষম সময়।
ভারতের প্রাক্তন ওপেনার হিসেবে নিজের ক্রিকেট-দর্শনের সঙ্গে কোনও রকম আপস করতে নারাজ গম্ভীর। সোজা কথায় বিশ্বাসী, সরলতাকে অস্ত্র করে কঠিন মনোভাবের এই কোচ চাইছেন, ভারতীয় দলে আগুন থাক, কিন্তু সেই আগুন যেন শৃঙ্খলিত হয়।তবে এও ঠিক, যশস্বীর মতো একজন তরুণ এবং আগ্রাসী ব্যাটারের মধ্যে T20-এর ছাপ থাকাটা অবাক করার মতো নয়। কিন্তু সেই মানসিকতা টেস্ট ক্রিকেটে কার্যকর না-ও হতে পারে। আর সেই দ্বন্দ্বেই যে গম্ভীর আর যশস্বীর এই মৃদু সংঘাত, তা বলাই যায়।
সিরিজের আগে এমন ঘটনা যদিও কিছুটা বিতর্ক তৈরি করেছে, তবে এটাও ঠিক, এই উত্তেজনা হয়ত অনুপ্রেরণাতেই রূপ নিতে পারে। কোচ-খেলোয়াড়ের মধ্যেকার এই ক্ষণিক উত্তাপ যদি ভবিষ্যতে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে রূপান্তরিত হয়, তাহলে ভারতীয় দলই লাভবান হবে। সময়ই বলবে, গম্ভীরের এই কঠোর কোচিং যশস্বীর ব্যাটে কেমন সুর তোলে।
ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Salman Khan : ‘ভাইজান’ থেকে বিনয়ী শিল্পী সলমন খানের মুখে তাঁর সাফল্য আর সংশয়ের গল্প
