



বসুধা চৌধুরী ★ সাশ্রয় নিউজ : ভালবাসা মানে কি শুধুই বাহ্যিক আকর্ষণ? জীবনসঙ্গী যদি অপূর্ব রূপের অধিকারী হন, তবে কি বিশ্বাসঘাতকতা অসম্ভব (extramarital affairs)? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়ানো এক আবেগপ্রবণ পোস্ট সম্প্রতি ফের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এনে দিয়েছে এই পুরনো প্রশ্নকে। যেখানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, পরকীয়ার (extramarital affairs) সঙ্গে জীবনসঙ্গীর সৌন্দর্যের কোনও সম্পর্কই নেই। আসলে, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার প্রশ্নে সৌন্দর্য বা সামাজিক মর্যাদা কোনওদিনই মূল নিয়ামক ছিল না। অনেকেই হয়ত মনে করেন, ‘আমি সুন্দর, আমি সব দিক থেকে যোগ্য। তাই আমার সঙ্গী বা সঙ্গিনী নিশ্চয়ই আমায় ঠকাবে না।’ বাস্তব কিন্তু অন্য। এবং একেবারেই আলাদা ছবি আঁকে। মন ও মননের গভীরতা, একাগ্রতা ও মূল্যবোধ যেখানে নেই, সেখানে সম্পর্কের মাধুর্য যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে।

একটা চিরন্তন প্রবাদ রয়েছে, ‘Once a cheater, always a cheater’। বিখ্যাত রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্সেস ডায়না (Princess Diana) যখন প্রতারিত হন, তখন গোটা পৃথিবী বুঝেছিল যে সৌন্দর্য, যশ কিংবা প্রতিপত্তি কোনও কিছুর গ্যারান্টি দেয় না।

সম্পর্ক যদি আত্মিক না হয়, যদি শ্রদ্ধার ভিত না থাকে, তাহলে বাইরে মন চলে যেতেই পারে। গায়ে রঙ, সাজসজ্জা কিংবা চেহারা তখন আর সম্পর্কের দেওয়াল হয়ে দাঁড়াতে পারে না।

এই যে দেখুন, বর্তমান প্রজন্মের সম্পর্কগুলিতে এমন বহু উদাহরণ আছে যেখানে একজন মানুষ অপরজনকে একনিষ্ঠভাবে ভালবেসেছেন, তার সমস্ত খুঁত জেনেও তাঁকে আঁকড়ে ধরেছেন। কিন্তু সেই ভালবাসার কোনও মূল্যায়ন হয়নি।

একটি ঘটনা বারবার উঠে আসে, এক তরুণী যিনি এখনও তার প্রাক্তন প্রেমিককে ভালবাসেন, জানেন যে তিনি তাকে ঠকিয়েছেন। কিন্তু বিশ্বাস করেন ভালবাসা একদিন তাকে বদলে দেবে। বাস্তব কিন্তু বলছে, তেমন ঘটনা একেবারেই বিরল। যাদের জীবনে ঘটে, তারা ভাগ্যবান, আর বাকিরা শুধু যন্ত্রণার পথচলা বেছে নেয়।অনেকেই বলেন—‘লাইট অফ করলে তো সবই কালো’। এই বাক্যটা যেন নিখুঁতভাবে তুলে ধরে ভালবাসার গূঢ় ব্যাখ্যা। মানুষ ভালবাসে হৃদয় দিয়ে, চোখ দিয়ে নয়। তাই ‘হ্যান্ডসাম’, ‘গর্জিয়াস’ বা ‘স্মার্ট’ সঙ্গী পাওয়াটাই যে সুখের নিশ্চয়তা নয়, তা যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন ততই মঙ্গল।

একটা সময় ছিল যখন মানুষ সম্পর্ক মানে বুঝত প্রতিশ্রুতি। সময় দেওয়া। একে অপরের পাশে থাকা। এখন অনেক ক্ষেত্রেই সম্পর্ক মানে হয়ে দাঁড়িয়েছে চেহারার গ্ল্যামার, সামাজিক ‘স্ট্যাটাস’ ও ফেসবুক বা ইন্সটাগ্রামের পোস্টে লাইক গোনা। তার ফলেই তো আজ এত সংখ্যক মানুষ তাঁদের সঙ্গীর পাশে থেকেও একাকীত্বে ভোগেন।

একদিকে যেমন ভালবাসার আকুতি, অন্যদিকে অবিশ্বাসের কাঁটা। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে ‘বাইরে নজর দেওয়া’ যেন একটা ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। নিজের জীবনের প্রতি অখুশি, অস্থির বা অপ্রাপ্ত মানুষজন নতুনত্ব খুঁজতে গিয়ে এমন কিছু বেছে নেয়, যেটা হয়ত সাময়িক উত্তেজনা দেয়। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে কিছুই রেখে যায় না। শুধু একটা ধ্বস্ত সম্পর্কের ধ্বংসাবশেষ।

তবে এই প্রসঙ্গে একটি ভয়ঙ্কর ‘আয়াত’তুলে ধরা যায় : ‘তুমি চাইলেই তোমার পছন্দের মানুষকে সৎ পথে ফিরিয়ে আনতে পারবে না। বস্তুত স্রষ্টা যাকে চান, তাকেই সৎ পথে পরিচালিত করেন।’ এই উপলব্ধিই বোঝায় যে, সম্পর্কের মধ্যে যুক্তি বা আত্মত্যাগ সবসময় কাজ নাও করতে পারে। তাই বলা হয়, সম্পর্কে ভালবাসা থাকুক কিন্তু অন্ধবিশ্বাস নয়। নিজের আত্মসম্মান ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য প্রতিটি মানুষকেই নিজের ‘ত্রিনেত্র’ সজাগ রাখতে হবে। যে সঙ্গী একবার প্রতারণা করতে পারেন, তিনি আবারও করতে পারেন, এ বাস্তবতা মেনে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
Aloso read : Sex : যৌন সম্পর্ক বিষয়ে আপনি সঠিক জানেন তো?

আসলে, সম্পর্কের সুরক্ষা রূপে নয়, বিশ্বাসে নিহিত। চোখধাঁধানো সৌন্দর্যের চেয়ে মনোমুগ্ধকর চরিত্রই অনেক বেশি আকর্ষণীয়। এই সত্য যত দ্রুত সমাজ বুঝবে, ততই টিকবে বিশ্বাস, টিকবে সম্পর্ক, টিকবে ভালবাসা। নয়ত, বাহ্যিকতার মোহে আটকে পড়ে বহু সম্পর্ক আগেই থেমে যাবে, ঠিক যেমন থেমে যায় ট্রেন, যেখানে সিগন্যাল পড়ে গিয়েছে লাল আলোয়।
-প্রতীকী চিত্র
আরও পড়ুন : Extramarital affair : বন্ধ দরজার পেছনে কী চলল? পরকীয়ার অবাক সবাই
