



সাশ্রয় নিউজ ★ রায়গঞ্জ : ‘স্থায়ী কাজ, ইনসাফের দাবিতে চাই ঐক্যবদ্ধ লড়াই’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে সোমবার , ৯ জুন, শুরু হল ডিওয়াইএফআই (DYFI) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির ২০তম সম্মেলনকে সামনে রেখে পদযাত্রা। DYFI-এর ৫৭তম প্রতিষ্ঠা দিবসে শুরু হওয়া এই যাত্রার নাম দেওয়া হয়েছে ‘কাজ ও সম্প্রীতির যাত্রা’। এই কর্মসূচি চলবে ১২ই জুন পর্যন্ত। সূচনা হয়েছে উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ (Raiganj) শহর থেকে। শেষ গন্তব্য মুর্শিদাবাদের বহরমপুর (Berhampore)। তিন দিনব্যাপী এই পথ চলায় মুখর হয়ে উঠবে গ্রাম বাংলা, শহর, বাজার, পাড়া। শ্রমিকের অধিকার ও যুব সমাজের ভবিষ্যতের প্রশ্ন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি প্রভৃতি দাবিকে সামনে রেখে পথ হাঁটবেন সংগঠনের কর্মী ও সমর্থকেরা।
ডিওয়াইএফআই (Democratic Youth Federation of India) বরাবরই দেশের যুবসমাজকে সংগঠিত করে এসেছে বিকল্প সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে। এবারের এই বিশেষ যাত্রা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির ২০তম সম্মেলনের প্রেক্ষাপটে শুধু একটি সাংগঠনিক কর্মসূচি নয়, সামাজিক চেতনার জাগরণ। চাকরি, শিক্ষার সুযোগ, বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে এই যাত্রা পৌঁছাবে একাধিক জেলা ও শহরে। সোমবার সকালে রায়গঞ্জে একটি প্রতীকী সভার মাধ্যমে যাত্রার সূচনা হয়। স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠকদের অংশগ্রহণে রঙিন হয়ে ওঠে শহরের রাস্তা। উপস্থিত ছিলেন ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য নেতৃত্ব এবং জেলার গুরুত্বপূর্ণ সংগঠকরা। জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদ বেদীতে মাল্যদান ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে সূচনা হয় কর্মসূচির। বক্তৃতায় উঠে আসে কর্মসংস্থানের সংকট, শিক্ষাক্ষেত্রে বেসরকারিকরণের বিপদ ও সমাজে ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় মেরুকরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর বার্তা। ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, “এই যাত্রা নিছক এক সাংগঠনিক আনুষ্ঠানিকতা নয়। এটা যুবসমাজের বুকে গর্জে ওঠার আহ্বান। যেখানে প্রতিটি বেকার তরুণ-তরুণীর কণ্ঠে থাকবে স্থায়ী কাজের দাবি। আর সেই দাবি পৌঁছে যাবে মানুষের দরজায় দরজায়।” সংগঠনের দাবি, রাজ্যে এবং দেশে দিন দিন কর্মসংস্থানের সঙ্কট ঘনীভূত হচ্ছে। চুক্তিভিত্তিক কাজের যাঁতাকলে পড়ে যুবসমাজ আজ নিঃস্ব। এর বিরুদ্ধে আন্দোলনই একমাত্র পথ বলে উল্লেখ।
অন্যদিকে, DYFI-এর এই কর্মসূচি শুধু দাবি নিয়ে নয়, সম্প্রীতির বার্তাও বয়ে আনছে। সম্প্রতি দেশে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার ঘটনাগুলি ক্রমবর্ধমান। সংগঠনের মতে, এই বিভাজনমূলক রাজনীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাই কর্মসূচির নামেই রয়েছে ‘কাজ ও সম্প্রীতির যাত্রা’। কর্মসংস্থান যেমন জরুরি, তেমনই জরুরি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। এই দুইয়ের মিলিত বার্তাই দিচ্ছে ডিওয়াইএফআই।
উল্লেখ্য, ‘কাজ ও সম্প্রীতির যাত্রা’ রায়গঞ্জ থেকে শুরু হয়ে মালদা (Malda), বহরমপুর (Berhampore) হয়ে আরও ক’য়েকটি অঞ্চলে থামবে। পথে পথে হবে পথসভা, পোস্টার প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও জনসংযোগ বলে সূত্রের খবর। সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানাচ্ছেন, এই কর্মসূচির মাধ্যমে শুধুমাত্র সদস্য সংখ্যা বাড়ানো নয়, যুবকদের মধ্যে সামাজিক-রাজনৈতিক সচেতনতা গড়ে তোলা তাদের মূল লক্ষ্য।
প্রসঙ্গত, সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ডিওয়াইএফআই তাদের আগামী কর্মসূচি, দাবিদাওয়া ও আন্দোলনের রূপরেখাও স্পষ্ট করবে। তারা মনে করে, বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিসরে যুবসমাজকে সংঘবদ্ধ করে তুলতে না পারলে বৃহত্তর পরিবর্তনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে জিতবো আমরাই’। শুধু স্লোগান নয়, এটি ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে রাখা এক দৃঢ় সংকল্প। ১২ই জুন বহরমপুরে এই যাত্রার শেষ দিনে হবে একটি সমাবেশ। সেখানে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যুব প্রতিনিধি ও কর্মীরা যোগ দেবেন।
DYFI নেতৃত্ব প্রত্যাশা করছে, এই সম্মেলন নতুন প্রজন্মের মধ্যে নতুন চেতনার জন্ম দেবে।যেখানে রুটি-রুজির দাবি আর সম্প্রীতির আবহ একসঙ্গে এগিয়ে যাবে ভবিষ্যতের পথে। রাজনীতির ক্যানভাসে যখন বারবার বিভাজন আর নিঃস্বতার গল্প, তখন ডিওয়াইএফআইয়ের এই পদক্ষেপ অনেকের কাছেই আশার আলো। সংগঠন সূত্রে খবর, আগামী দিনে এই কর্মসূচিকে আরও বৃহৎ পরিসরে নিয়ে যাওয়া হবে। কারণ, তরুণরাই দেশের ভবিষ্যৎ। আর সেই ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতেই চাই সংগঠিত লড়াই।
ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন :USA-Nepal : নেপালের নাগরিকদের জন্য ‘টিপিএস’ সুবিধা বন্ধ
