



দেহ হল দেহঘট। তাৎপর্যের বিষয় হল, এই ঘট প্রতিষ্ঠার একটি বিশেষ নিয়ম রয়েছে। প্রথমে পঞ্চগুড়ি দিয়ে পীঠ তৈরি করতে হয়। আর সেই পঞ্চগুড়ি হল ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম – এই পঞ্চভূতের প্রতীক। লিখেছেন : পিনাকী চৌধুরী
যদিও এখন ভাদ্র মাস চলছে, তবুও বাঙালির প্রাণের উৎসবের সময় ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। পুজো কমিটিগুলো থেকে শুরু করে কুমোরটুলিতে ব্যস্ততা বেড়েছে। আর এ হবে না-ই বা কেন? বছর শেষে ঘরের মেয়ে উমা বাপের বাড়ি আসছেন, তাই বোধহয় আন্দোলিত কাশফুলগুলো আনন্দে আত্মহারা! প্রস্ফুটিত শিউলি ফুলের সুবাস যেন জানান দিচ্ছে দেবীর আগমনীবার্তা! দুর্গোৎসব সমাগত প্রায়। আর তো মেরেকেটে সাতচল্লিশ দিনের অপেক্ষা! তারপরেই দেবীর বোধন। আর বোধন শব্দের অর্থ হল জাগরণ! তবে শুধুমাত্র দুর্গা পুজোই নয়, যে কোনও পুজোতেই কিন্তু ঘট প্রতিষ্ঠা করে তারপর দেব দেবীদের পুজারম্ভ করাটাই আমাদের হিন্দু ধর্মের রীতি। কিন্তু ঘট প্রতিষ্ঠা করা হয় কেন? আসলে ঘট হল আমাদের দেহের প্রতীক। আর আমাদের দেহ হল দেহঘট। তাৎপর্যের বিষয় হল, এই ঘট প্রতিষ্ঠার একটি বিশেষ নিয়ম রয়েছে। প্রথমে পঞ্চগুড়ি দিয়ে পীঠ তৈরি করতে হয়। আর সেই পঞ্চগুড়ি হল ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম – এই পঞ্চভূতের প্রতীক। তারপরে সেই মৃত্তিকা পীঠের ওপর পঞ্চশষ্য দিতে হয়। আর সেই পঞ্চশষ্য হল আমাদের কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মাৎসর্য অর্থাৎ পঞ্চবৃত্তির প্রতীক। এখানেই শেষ নয়। ঘটটি পবিত্র গঙ্গাজল দিয়ে পূর্ণ করে, তার মধ্যে পঞ্চরত্ন দিতে হবে। আর সেই পঞ্চরত্ন হল আমাদের চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা , জিহ্বা ও ত্বকের প্রতীক। ঘটটি গঙ্গাজল দিয়ে পূর্ণ করবার অর্থ হচ্ছে, ঠিক যেমন আমাদের দেহ রক্তরস দিয়ে পূর্ণ থাকে। তারপরে সেই ঘটে পঞ্চ পল্লব দিতে হবে। পঞ্চ পল্লব যেন আমাদের দেহের গলা বা গ্রীবাকে নির্দেশ করছে! আর তার ওপরে একটি নারকেল স্থাপন করা হয়, যেটি কিনা আমাদের মুখ মণ্ডলের প্রতীক।
ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Society : ধর্ষণ এবং ক’য়েকটি প্রশ্নের অবতারণা
