Sasraya News

Friday, March 28, 2025

Durga Puja : দুর্গোৎসব ও তার তাৎপর্য

Listen

প্রত্যেক দেবতারই একটি করে বাহন রয়েছে। বাহনগুলোর তাৎপর্য হল সহযোগিতার। অর্থাৎ সমাজে আমরা একে-অপরের সাহায্য ছাড়া চলতে পারি না বা সঠিকভাবে বিকশিত হতে পারি না। লিখেছেন : অভিজিৎ দত্ত

 

বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা। বর্তমানে দুর্গাপূজা ভারতের জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। এই দুর্গাপূজা কীভাবে চালু হল তা নিয়ে নানারকম কাহিনী প্রচলিত আছে। প্রাচীনকালে রাজা সুরথ সর্বপ্রথম দুর্গাপূজা শুরু করেন। পূর্বে বসন্তকালে দেবী দুর্গার পূজা হতো বলে এর নাম ছিল বাসন্তী পূজা।পরবর্তীকালে ত্রেতাযুগে শ্রীরামচন্দ্র শরৎকালে দেবী দুর্গার পূজা করেন। তারপর থেকে শরৎকালে দেবী দুর্গার পূজার প্রচলন শুরু হয়।

 

 

দুর্গাপ্রতিমা। ছবি : সংগৃহীত

 

 

তবে বঙ্গে দেবী দুর্গার পূজার প্রচলন করেন তাহিরপুরের রাজা কংসনারায়ণ। দিল্লিতে তখন রাজত্ব করতেন সম্রাট আকবর। প্রশ্ন হচ্ছে দুর্গা নামটি এল কী করে? কেউ বলেন দুর্গম নামক অসুরকে বধ করার জন্য এই নাম হয়েছে। আবার অনেকের মতে মতে সমস্ত রকম দুর্গতি থেকে তিনি উদ্ধার করেন বলে এই নাম হয়েছে।

মানুষের অতীত ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে যেমন সমাজ সৃষ্টির উদ্দেশ্যগুলো জানা যায়, সেইরূপ দুর্গোৎসব-এর পেছনেও কিছু উদ্দেশ্য আছে। বর্তমানে মানুষ দুর্গোৎসবের বাইরের দিকটি নিয়ে মাতামাতি করায় এর আভ্যন্তরীণ উদ্দেশ্যটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অনেকের মত। তাই আমাদের সর্বাগ্রে প্রয়োজন দুর্গাপূজোর আভ্যন্তরীণ উদ্দেশ্যটি জানা।দেবী দুর্গা প্রতিমার দিকে ভাল করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে দেবী দুর্গার বাঁ পাশে রয়েছে সরস্বতী ও কার্তিক এবং ডানদিকে রয়েছে লক্ষ্মী ও গণেশ। মাথার উপরে রয়েছে মহাদেব। প্রত্যেক দেবতারই একটি করে বাহন রয়েছে। বাহনগুলোর তাৎপর্য হল সহযোগিতার। অর্থাৎ সমাজে আমরা একে-অপরের সাহায্য ছাড়া চলতে পারি না বা সঠিকভাবে বিকশিত হতে পারি না। প্রত্যেকটি দেব-দেবী প্রতীকী এবং তাদের প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু প্রভাব রয়েছে। লক্ষ্মী যেমন ধনের দেবী। সরস্বতী বিদ্যার দেবী। কার্তিক সৌন্দর্য ও সাহসের। গণেশ তেমন জননেতা বা সিদ্ধিলাভের দেবতা। মা দুর্গা হচ্ছেন শক্তির প্রতীক। অর্থাৎ শক্তি সবাইকে চালিত করছে। শক্তি ছাড়া সবকিছুই অচল। আমাদের সমাজে সঠিকভাবে বাঁচতে গেলে মা দুর্গার ও তার সঙ্গীদের একান্ত প্রয়োজন। বিদ্যা ছাড়া যেমন ধনের গুরুত্ব উপলব্ধি কলা যায় না, সেইরূপ নেতা হতে গেলে প্রয়োজন সাহস ও সৌন্দর্যের।রূপ আর গুণ দুই মিলে সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়। আমাদের সমাজ যেহেতু পিতৃতান্ত্রিক তাই পিতৃতান্ত্রিক সমাজে কল্যাণকারীকে অর্থাৎ মহাদেবকে যেমন যেমন মাথায় রাখা হয়েছে তেমনি অকল্যাণকারীকে অর্থাৎ মহিষাসুরকে সমাজের পদতলে অর্থাৎ মায়ের পায়ের নিচে রাখা হয়েছে।অর্থাৎ সমাজে শুভ ও অশুভ থাকবে। কিন্ত শুভর অবস্থান যেন উচ্চে থাকে। উল্টোটা হলে সমাজের বিনাশ অনিবার্য। কল্যাণকারীকে মাথায় রাখো, অকল্যাণকারীকে বিনাশ করো-এটাই দুর্গোৎসব-এর আসল কথা বা বার্তা।

দুর্গোৎসবের সময় দলগতভাবে কাজ করার প্রয়াস আমাদের সামাজিক সংহতিকে সুদৃঢ় করে।দুর্গাপূজোর সময় মন্দিরে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের উপস্থিতি সামাজিক ঐক্য ও সংহতির পরিচায়ক। দুর্গোৎসবের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। দুর্গোৎসব এখন একটা বড় বিনোদন উৎসবে পরিণত হয়েছে। ভক্তির চেয়ে এখন থিম পূজার প্রচলন বেড়েছে। বড় বড় সংস্থা এখন পূজার স্পনসর করছে। মৃৎশিল্পী, শোলা ও ডাকের সাজ শিল্পী, প্যাণ্ডেল ও ডেকোরেটার কর্মী, বাজনা ও বাজির সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষ মা-এর আগমনের দিকে তাকিয়ে থাকে। এমন কি পূজা উপলক্ষ্যে বস্ত্র, চর্ম ও প্রসাধনী বিক্রয়কারীরা এই উৎসবের জন্য সারাবছর অপেক্ষা করে থাকেন।

সর্বোপরি দুর্গোৎসব মিলনের উৎসব, আনন্দের উৎসব, একতার উৎসব। দুর্গোৎসব তখনই সার্থক, যখন আমরা এর ভিতরের উদ্দেশ্য অনুভব করতে পারব। মা দুর্গা একজন মহিলা হয়েও মহিষাসুর এর ন্যায় এক দুর্গম অসুরকে বধ করেছেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় সমাজে মহিলারাও কম শক্তিশালী নয়। উপযুক্ত শিক্ষা ও সুযোগ পেলে তারাও যে কোনও কাজ করতে পারে। অথচ ভারতবর্ষে আজও নারী-পুরুষে ভেদাভেদ, নারীদের অযত্ন, তাদের উপর অত‍্যাচার, কন্যাভ্রণ হত্যা, মহিলাদের উপযুক্ত মর্যাদা না দেওয়া, তাদের গুরুত্ব না দেওয়া, তাদের শ্রদ্ধা না করা ইত্যাদি কত রকম ভুলই না করে চলেছি। মহিলাদের প্রতি শ্রদ্ধা না থাকলে ও তাঁদের মর্যাদা না দিলে সে জাতির উন্নতি অসম্ভব।

দুর্গা পুজো মানুষকে শেখান, শেখান অশুভ শক্তি যতই শক্তিশালী হোক, তার বিনাশ অনিবার্য। আমরা দুর্গাপূজো থেকে শিক্ষা নিচ্ছি তো?বর্তমানে যেভাবে অশুভ শক্তির বাড়-বাড়ন্ত দেখা যাচ্ছে তা কীসের ইঙ্গিত দিচ্ছে? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, “যারে তুমি নিচে ফেলো, /সে তোমারে ফেলিবে যে নিচে /পশ্চাতে রেখেছো যারে/ সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।” সাধারণ মানুষের উন্নয়ন ছাড়া একটা দেশ বা জাতির উন্নয়ন হয় না। বর্তমানে যারা সমাজের মাথা দুর্গাপূজোর সময় তারা যদি একথাটা মনে রাখে সেটাই হবে আমাদের বড় পাওয়া।সমাজে শুভ শক্তির জয় হোক, অশুভ শক্তির বিনাশ হোক এটাই বোধহয় মা এর কাছে সাধারণ মানুষের প্রার্থনা। জয় দেবী দুর্গা।

ছবি : সংগৃহীত 

আরও পড়ুন : Manu Bhaker-Niraj Chopra : ‘মনুর মা কিন্তু নীরজকে সন্তানের মতোই দেখে’ : কিষাণ ভাকের

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment