



পিনাকী চৌধুরী ★ সাশ্রয় নিউজ : হুগলীর সুপ্রাচীন এই দশঘরা বসু পরিবারের দুর্গোৎসবের (Durga Puja) পরতে পরতে মিশে আছে ইতিহাস! এইবছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে এই দুর্গোৎসব ৪২৩ তম বছরে পদার্পণ করছে। দুর্গাদালানে দেবী প্রতিমা নির্মাণ করা হচ্ছে জোরকদমে। কিন্তু এই দশঘরা নামটির উৎপত্তি কিভাবে হয়েছিল? বসু পরিবারের তরফে আর্য বসু এই প্রতিবেদককে জানালেন, ‘মূলত জাড়গ্রাম, শ্রীকৃষ্ণপুর, দিঘরা, শ্রীরামপুর, আগলপুর, ইচ্ছাপুর, পীনগর, গঙ্গেশপুর, পাড়াম্বো ও নলথোবা এই দশটি গ্রাম নিয়েই গড়ে উঠেছিল দশঘরা।’

সুদূর অতীতে বারদুয়ারী রাজারা ছিলেন এখানকার শাসক। এই বংশের পূর্বপুরুষ শ্রীকৃষ্ণ পালচৌধুরীকে তৎকালীন মুঘল সম্রাট ‘রাজা’ উপাধি দিয়ে দশটি গ্রাম রাজত্ব করবার অনুমতি দেন এবং নিরাপত্তার জন্য চারশো পাঠান সৈন্য সঙ্গে রাখতে দেওয়া হয়। আর এই পালচৌধুরী কালক্রমে ‘বারদুয়ারী রাজা’ নামে খ্যাতি অর্জন করেন। ওদিকে আবার যশোহর জেলার জঙ্গল বাদান এলাকার মথুরানাথ বসুর সঙ্গে রাজলক্ষ্মীর বিবাহ হয়। কিন্তু মথুরানাথ ইতিপূর্বে বিবাহিত ছিলেন। প্রথম পক্ষের আট পুত্র এবং কুলদেবতা দামোদর জিউকে নিয়ে পাকাপাকিভাবে দশঘরায় চলে আসেন। প্রথম পক্ষের ছয় পুত্র ‘ছয়ঘর বসু’ এবং দ্বিতীয় পক্ষের তিনপুত্র ‘তিনঘর বসু’ নামে পরিচিতি লাভ করেন। মথুরানাথের যশোহরের বাড়িতে দুর্গাপূজা হয়। তাঁর পূর্বপুরুষ পরমানন্দ বসু ১৬০১ খ্রি খ্রীষ্টাব্দে এই পুজো শুরু করেছিলেন। আজও যাবতীয় আচার অনুষ্ঠান মেনে দশঘরা বসু পরিবারে উল্টোরথের দিন কাঠামো পুজো হয়। একচালার প্রতিমা সঙ্গে শোলার কাজ।
মহাষষ্ঠীর দিন কল্পারম্ভ হয়। পুজো হয় বৈষ্ণব মতে। পুজোর সময় বসু পরিবারের সেই দুর্গাদালান জমজমাট থাকে। কিন্তু কি ভোগ নিবেদন করা হয় দেবীকে? আর্য বসু জানালেন ‘লুচি, নারকেল ভাজা, সন্দেশ, নারকেল নাড়ু ইত্যাদি। তবে আমাদের এই দশঘরা বসু পরিবারের দুর্গোৎসবে সপ্তমীতে এক মণ এবং মহাষ্টমীর দিন তিন মণ চাল দেবী দুর্গাকে নৈবিদ্য দেওয়া হয়।’ সাধারণ ভক্তদের জন্য পুজোর ক’দিন দুর্গাদালান খোলা থাকে। পুজোর ক’দিন দুরদূরান্তে বহু দর্শনার্থী এখানে আসেন দেবী প্রতিমা দর্শন করতে। স্থানমাহাত্ম্যে আজও এই দশঘরা বসু পরিবারের দুর্গোৎসব বিশেষ বার্তা বহন করে।
ছবি : প্রতিবেদক
আরও পড়ুন : Interview : রাতের পর রাত জেগে রাস্তায় বসে ছবি আঁকতাম
