



আমেরিকায় দুর্গাপুজোয় /দুই
মেঘশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় ★ ম্যাসাচুসেটস, আমেরিকা : কলকাতায় নবমী নিশিতে যখন ভিড় উপচে পড়ছে প্যান্ডেলে তখন আমেরিকার ম্যাসাচুসেটসে নবমীর সকাল। ধরা যেতে পারে এখানে আজই পুজোর শেষ দিন। যদিও কিছু কমিটির পুজো হতে চলেছে আসছে শনি আর রবিবার। কিন্তু নবমীর সকাল মানেই ছুটি নয়। অফিস খোলা, স্কুল চলছে। ঠিক একটা সাধারণ দিনের মতোই। তবু ভিতরে ভিতরে সাজ সাজ রব। আজ সিঁদুর খেলতে যাব বোস্টন দুর্গাবাড়ির পুজোয়।
এই পুজো কিন্তু স্কুল বাড়ি ভাড়া নিয়ে হয় না। আবার মন্দিরের ভেতরেও যে হয়, তা নয়। পুজো হয় ব্রজমন্দির সংলগ্ন চত্বরে টেন্ট বানিয়ে। এতে বাংলার পুজো প্যান্ডেলের একটা অনুভব আসে।
সারাদিন ঠাণ্ডা হাওয়া আর আকাশের মুখ গোমড়া থাকার পর ঠিক বিকেল পাঁচটার দিকে নামল বৃষ্টি। রাস্তায় বাড়তে থাকা ট্রাফিক টপকে যখন ব্রজ মন্দিরে পৌঁছলাম বেশ চিন্তা হচ্ছিল টেন্টের মধ্যে ঠান্ডা কেমন থাকবে? এ তো কোনও বিল্ডিং নয় যে টেম্পারেচার কন্ট্রোল করা যাবে সহজে। অস্থায়ী টেন্টে ঢুকে দেখা গেল ওপর থেকে টুপটাপ জল পড়লেও ভিতরে ঠাণ্ডা নেই। একচালায় মায়ের ছোট মূর্তি, ঢাকের আওয়াজ, পুরোহিতের মন্ত্র সব মিলিয়ে ভীষণ আদুরে পরিবেশ, যেন কোনও বাড়ির পুজোয় চলে এসেছি। নিয়ম ও সময় মেনে সমস্ত পুজো এখানে হয়। অফিস কাছারির পরে ধীরে ধীরে ভিড় জমতে লাগল। বলে নেওয়া ভালো, এই পুজো টিকিট কেটে দেখতে হয়না। তবে ভোগ নিতে গেলে কুপন লাগে। আর কেউ কিছু দক্ষিণা দিতে চাইলে তা অবশ্যই নেওয়া হয়। পুজোর হোতা মহিলামণ্ডলী পুজোর প্রসাদ ও ভোগ গুছিয়ে রাখতে লাগলেন। রান্নাবান্নাও এরা নিজেরাই করে থাকেন। পুরোহিত মশাই নিষ্ঠা সহকারে পুজো করছেন। এখানে ঢাক, কাঁসর ঘন্টা সবই উপস্থিত। তা বাজাচ্ছেন সদস্যরাই। কিছুক্ষণের মধ্যেই অঞ্জলি ও বরণ শেষ হল। উলু দিয়ে ঢাকের বাদ্যের সঙ্গে শুরু হল ধুনুচি নাচ। ছোট থেকে বড় কেউ বাদ নেই। এরপরেই মাকে বরণ করার জন্য পড়ল লম্বা লাইন।
মায়ের বড় মূর্তি বিসর্জন যায় না। সংরক্ষিত থাকে কোনও এক সদস্যের বাড়িতে। পরেরবার ওই মূর্তিই পুজো হয়। ছোট আরেকটি মূর্তি একটি পাত্রের জলে ডুবিয়ে নিয়ম রক্ষা করা হয়।
ঠাকুর যাঁরা বরণ করে তুলেছিলেন সেই পাঁচ এয়োস্ত্রীই কেবল মায়ের মূর্তি বরণ করলেন। বাকি আমরা বরণ করলাম মায়ের ছোট্ট ধাতু মূর্তি। এরপর সিঁদুর খেলা। গত কয়েকদিনে কিছু কালচারাল প্রোগ্রাম হয়েছে পিছনের স্টেজে যা করেছেন সদস্যরাই অথবা পুজো দেখতে আসা মানুষজন। বাইরে থেকে শিল্পী না এনে এই ঘরোয়া ব্যবস্থা বেশ মন কাড়া। আজ অবশ্য বাড়তে থাকা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে মোটে একটি গান দিয়ে সভা সমাপ্ত হল। বৃষ্টি মাথায় করে টেন্ট থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে সুর ভেসে এলো “মেঘের পরে মেঘ জমেছে, আঁধার করে আসে”।
ছবি : প্রতিবেদক
