সাশ্রয় নিউজ ডেস্ক ★ নতুন দিল্লি : ভারতের ইতিহাসে এবার এক নতুন অধ্যায় খুলতে চলেছে প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ ডিজিটাল জনগণনা (Digital Census) হতে চলেছে দেশে। প্রায় পনেরো বছর পর ২০২৭ সালে শুরু হবে এই বৃহৎ জাতীয় কর্মযজ্ঞ, আর তার আগে নভেম্বরে হবে পরীক্ষামূলক ডিজিটাল সমীক্ষা (Pilot Survey)। এই পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেখা হবে, দেশের পরিকাঠামো, প্রযুক্তি ও জনবল কতটা প্রস্তুত ডিজিটাল জনগণনার জন্য। বৃহস্পতিবার এক গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেল অ্যান্ড সেনসাস কমিশনার মৃত্যুঞ্জয়কুমার নারায়ণ, জানিয়েছেন, “ডিজিটাল জনগণনা হবে ভারতের গণতান্ত্রিক প্রশাসনের এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। নাগরিকরা চাইলে অনলাইনেই নিজেদের তথ্য দিতে পারবেন, এতে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা দুই-ই বাড়বে।”
আগামী ১০ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের কিছু নির্বাচিত এলাকায় এই পরীক্ষামূলক সমীক্ষা চালানো হবে। এর আগে ১ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে ডিজিটাল ফর্ম পূরণের সুযোগ। অর্থাৎ, নাগরিকেরা চাইলে মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করে নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য সরাসরি জমা দিতে পারবেন। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, এই পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা হবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তথ্য সংগ্রহে কোনও প্রযুক্তিগত প্রতিবন্ধকতা, গ্লিচ বা তথ্য সংরক্ষণে জটিলতা আছে কি না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধু জনগণনার আধুনিকীকরণ নয়, বরং সরকারের ডেটা ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণ নতুন পর্যায়ে নিয়ে যাবে। দেশে শেষবার জনগণনা হয়েছিল ২০১১ সালে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি দশ বছর অন্তর জনগণনা হয়। ২০২১ সালে হওয়ার কথা থাকলেও কোভিড-১৯ মহামারি (COVID-19 Pandemic) -এর কারণে তা স্থগিত রাখা হয়েছিল। সেই সময়ই জনগণনার জন্য একটি বিশেষ মোবাইল অ্যাপ তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অ্যাপটি নতুনভাবে তৈরি করা হচ্ছে। একটি উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “নতুন অ্যাপটি হবে অত্যাধুনিক। এটি অফলাইন ও অনলাইন, দুই মোডেই কাজ করবে। ফলে দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগ থাকা এলাকাগুলোতেও গণনাকারীরা (Enumerators) নির্বিঘ্নে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।”
ডিজিটাল জনগণনার মূল সুবিধা হবে সময় ও নির্ভুলতার দিক থেকে। আগে কাগজে কলমে তথ্য নেওয়া হত, ফলে ভুলের সম্ভাবনা ও তথ্য পাঠাতে বিলম্ব হতো। এবার গণনাকারীরা সরাসরি মোবাইলের মাধ্যমেই তথ্য সংগ্রহ করবেন, যা সঙ্গে সঙ্গে সরকারের সার্ভারে সংরক্ষিত হবে। আর যদি কোনও কারণে কাগজে তথ্য নেওয়া হয়, তা নির্দিষ্ট ওয়েব পোর্টালে আপলোড করতে হবে অবিলম্বে। এতে ডেটা এন্ট্রি -এর ভুল প্রায় শূন্যে নেমে আসবে বলে দাবি কর্মকর্তাদের।
দুই ধাপে হবে জনগণনা
প্রথম ধাপে ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু হবে হাউজ লিস্টিং অপারেশন (House Listing Operation) যেখানে বাড়ি, জমি, সম্পত্তি সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে মূল জনগণনা। তবে চারটি অঞ্চল লাদাখ (Ladakh), জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu & Kashmir), হিমাচল প্রদেশ (Himachal Pradesh) ও উত্তরাখণ্ডে (Uttarakhand) আগেই, অর্থাৎ ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই জনগণনা সম্পন্ন হবে, কারণ শীতকালে এই এলাকাগুলি তুষারাবৃত থাকে। একজন শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, “ডিজিটাল জনগণনার মাধ্যমে কেন্দ্র সরকার দেশজুড়ে বাস্তব তথ্যের উপর ভিত্তি করে নীতি নির্ধারণ করতে পারবে। এটি শুধু সংখ্যা গণনা নয়, বরং উন্নয়ন পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ ভিত্তি।” বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রকল্প সফল হলে ভারতের প্রশাসনিক কাঠামোতে ঘটবে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। গ্রামীণ থেকে শহুরে এলাকা পর্যন্ত তথ্যের প্রবাহ হবে আরও দ্রুত। আর নাগরিকের অংশগ্রহণও হবে স্বেচ্ছায় ও সহজতর উপায়ে। ডিজিটাল জনগণনা প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার কেবলমাত্র তথ্য সংগ্রহ নয়, বরং নাগরিক ডেটা সুরক্ষাকেও সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তথ্য নিরাপত্তা বজায় রাখতে থাকছে মাল্টি-লেভেল এনক্রিপশন ব্যবস্থা ও ডেটা প্রটেকশন প্রোটোকল।নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিয়ে আত্মবিশ্বাসী মৃত্যুঞ্জয়কুমার নারায়ণ বলেন, “দেশের জনগণ প্রযুক্তিবান্ধব। আমরা বিশ্বাস করি, সবাই সক্রিয়ভাবে অংশ নেবেন। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ভারত আরও একধাপ এগোবে স্মার্ট গভর্নেন্সের পথে।” উল্লেখ্য, ২০২৭ সালের এই ডিজিটাল জনগণনা শুধু একটি সরকারি পরিসংখ্যান সংগ্রহ নয়, তা হবে দেশের প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, প্রযুক্তি নির্ভরতা এবং নাগরিক অংশগ্রহণের এক নতুন মাইলফলক।
ছবি : প্রতীকী ও সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Census 2027: ১৬ বছর পর দেশে ফের আদমশুমারি, ২০২৭-এ শুরু প্রক্রিয়া




