Sasraya News

Dalai Lama | দলাই লামার উত্তরসূরি বাছাইয়ে ভারতের কড়া বার্তা, চিনের অনুমোদন নয়, চলবে প্রচলিত নিয়মেই

Listen

বিনীত শর্মা ✪ সাশ্রয় নিউজ, নতুন দিল্লি : দলাই লামার (Dalai Lama) উত্তরসূরি নির্বাচন নিয়ে ফের উত্তপ্ত আন্তর্জাতিক মহল। এবার সেই বিতর্কে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু (Kiren Rijiju) জানিয়ে দিলেন, পরবর্তী দলাই লামার বাছাই হবে একান্তই প্রচলিত নিয়ম মেনে। তাঁর কথায়, “উত্তরসূরি নির্বাচনের প্রক্রিয়া প্রচলিত পদ্ধতিতেই হবে এবং এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বর্তমান দলাই লামা (Dalai Lama)। অন্য কারও এই বিষয়ে কোনও অধিকার নেই।” রিজিজুর এই মন্তব্যকে কূটনৈতিক মহল সরাসরি চিনের (China) প্রতি নতুন দিল্লির (New Delhi) বার্তা হিসেবেই দেখছে। কারণ সম্প্রতি চিনা প্রশাসন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বেজিঙের (Beijing) অনুমোদন ছাড়া পঞ্চদশ দলাই লামার মনোনয়ন সম্ভব নয়। ঠিক এই সময়ে রিজিজুর বক্তব্য যে তিব্বত (Tibet) নিয়ে ভারতের অবস্থানকে আরও জোরালো করল, তা বলাই যায়।

দলাই লামা। তেনজ়িং গ্যাৎসো। ছবি: সংগৃহীত

আগামী ৬ জুলাই ৯০ বছরে পা দেবেন বর্তমান দলাই লামা তেনজ়িং গ্যাৎসো (Tenzin Gyatso)। জল্পনা চলছে, জন্মদিনের আগে হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় (Dharamshala) বসেই তিনি ঘোষণা করতে পারেন তাঁর উত্তরসূরির নাম। তবে চিনা সরকার আগে থেকেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে, তাদের অনুমোদন ছাড়া এই নির্বাচন মানা হবে না। চিনের এই অবস্থান নিয়ে বৌদ্ধ সমাজে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কারণ, বৌদ্ধ ধর্মের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী দলাই লামার পুনর্জন্ম বা উত্তরসূরি নির্বাচনের দায়িত্ব একমাত্র বর্তমান দলাই লামার হাতেই থাকে।

অন্যদিকে, নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দলাই লামা সম্প্রতি বলেছেন, “পরবর্তী দলাই লামার মনোনয়নের দায়িত্ব গাহদেন ফোড্রাং ট্রাস্টের। বাইরের কাউকে এই প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের সুযোগ দেওয়া হবে না।” এর আগে ২০১৯ সালে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়ে দেন, তাঁর উত্তরসূরি মনোনীত হবেন ভারত থেকেই, চিন থেকে নয়। সেই সময় থেকেই চিনা প্রশাসন নানা কৌশলে তিব্বতের উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। সাম্প্রতিককালে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং (Xi Jinping) তিব্বতি বৌদ্ধদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পাঞ্চেন লামা (Panchen Lama)-র সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। তবে দলাই লামাপন্থীরা চিন সরকারের নিযুক্ত পাঞ্চেন লামাকে স্বীকৃতি দেননি। তিব্বতের নির্বাসিত সরকারের ডেপুটি স্পিকার ডোলমা শেরিং তেখাং (Dolma Shering Tekhang) এই বিষয়ে কড়া সুরে বলেন, “চিন আমাদের প্রতিষ্ঠান কব্জা করতে চাইছে। রাজনৈতিক কারণেই এই পদক্ষেপ।” তিনি স্পষ্ট জানান, দলাই লামার উত্তরসূরি বাছাইয়ের দায়িত্ব বেজিঙের হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে না। তাঁর কথায়, “আমরা আমাদের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় স্বাধীনতা কোনওভাবেই বিসর্জন দেব না।”

প্রায় ৬০ বছর আগে, মাত্র ২৪ বছর বয়সে চিন-অধিকৃত তিব্বত ছেড়ে ভারতে আসেন তেনজ়িং গ্যাৎসো। তাঁর সঙ্গে আসেন বহু তিব্বতি বৌদ্ধ। হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালাকে তখন থেকে তিব্বতের নির্বাসিত সরকারের মূল কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। বর্তমানে ভারতে প্রায় হাজার হাজার তিব্বতি শরণার্থী বসবাস করছেন, যাঁদের কাছে দলাই লামা শুধু ধর্মগুরু নন, জীবনের অন্যতম প্রেরণা। উল্লেখ্য যে, রিজিজুর এই মন্তব্যকে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা ভারতের এক সুস্পষ্ট কূটনৈতিক বার্তা হিসেবে দেখছেন। বিশেষ করে, সম্প্রতি চিন-ভারত সীমান্ত উত্তেজনার আবহে নতুন দিল্লি যে তিব্বতের স্বায়ত্তশাসন ও ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে, তার ইঙ্গিতই মিলল। তবে চিন এই বিষয়ে কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেদিকেই এখন নজর আন্তর্জাতিক মহলের।

ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Narendra Modi Ghana speech | ঘানার সংসদে মোদী : ‘ভারতের গণতন্ত্র কোনও সিস্টেম নয়, এ এক সংস্কার’

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment

Also Read