



অভিজিৎ দত্ত : বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ধর্ম খ্রীষ্টধর্ম। খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বীদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র দিন বড়দিন বা ক্রীশমাস (Christmas Day) ২৫ ডিসেম্বর যীশু খ্রীষ্টের জন্মের দিনে উৎসব পালিত হয়। যীশুর জন্ম নিয়ে সাধারণত যা জানা যায় তা হল, যীশু কুমারী মেরীর গর্ভে পবিত্র আত্মার দ্বারা জন্মগ্রহণ করেছিলেন বেথলেহেমে। পিতার নাম জোসেফ। শহরে তাঁদের থাকার জায়গা ছিল না বলে একটি খাঁচার মধ্যে যীশুকে রাখা হয়। এবং দেবদূতেরা একদল রাখালদের কাছে তার জন্ম ঘোষণা করে। এই রাখালরাই তাকে মসিহা বা প্রভু হিসাবে উপাসনা করেছিল।
যীশুখ্রীষ্ট মাত্র ৩৩ বছর বেঁচে ছিলেন (৪ খ্রী.পূ. থেকে ৩০বা ৩৩ খ্রীষ্টাব্দ)। যীশুর জন্মস্থান বেথলেহেমে হলেও পরবর্তীকালে নাসরথে বসতি স্থাপন করেছিলেন। খ্রীষ্ট ধর্ম অনুসারে, যীশুখ্রীষ্ট হলেন মসীহ এবং ঈশ্বরের পুত্র যিনি মানবতাকে রক্ষার জন্য মারা গিয়েছিলেন এবং স্বর্গে আরোহণ করেছিলেন। তিনি জন দ্য ব্যাপ্টিস্টের দ্বারা বাপ্তিস্ম নেওয়ার পর তিনি শিক্ষাদানের পরিচর্যা শুরু করেছিলেন।
এইজন্য তিনি তাঁর বারো জন শিষ্যকে বেছে নিয়েছিলেন। এবং বেশ কিছু অলৌকিক কাজ করেছিলেন। গ্যালিন সাগরের কাছে পর্বতে তাঁর অনুপ্রেরণামূলক উপদেশ দিয়েছিলেন। ভাল কাজ করার জন্য যীশুর জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তৎকালীন শাসকরা এতে ভয় পেয়ে যায়। যীশুখ্রীষ্টকে মারার চক্রান্ত শুরু করেন। ক্যলোনিকাল গসপেল অনুসারে, যীশুকে মহাসভার দ্বারা গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং বিচার করা হয়েছিল। তারপর তৎকালীন শাসনকর্তা পন্টিয়াস পিলেটের দ্বারা ওঁর বেত্রাঘাতের শাস্তি হয়েছিল। সবশেষে রোমানদের দ্বারা তিনি ক্রশবিদ্ধ হয়েছিলেন। ক্রশবিদ্ধ থাকার দু’দিন পর তিনি প্রাণ ত্যাগ করেন। মৃত্যুর আগে যীশু বলেছিলেন : হে ঈশ্বর এরা জানে না এরা কী ভুল করছে। এদের তুমি ক্ষমা করো। ভাবা যায়! কতটা করুণাময় হলে এই কথা বলা যায়! সত্যিই তিনি ছিলেন করুণার অবতার। তৎকালীন কিছু মানুষ তাকে ভুল বুঝেছে। শাসক বা কুচক্রীদের প্ররোচনার পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে। আজও কী মানুষ ভুল করছে না? শাসকদের প্ররোচনার ফাঁদে পা দিচ্ছে না? অনেকে বলেন যীশুখ্রীষ্টের মৃতদেহকে সমাধি দেওয়ার ক’য়েক দিন পর সমাধি স্থল থেকে যীশুর দেহ পাওয়া যায়নি।অনেকে বলেন যীশুখ্রীষ্ট সমাধি দেওয়ার ক’য়েক দিন পর তিনি তার শিষ্যদের দেখা দেন (যাকে পুনরুথান বলা হয়) ভাল কাজ বা তার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করতে বা এগিয়ে নিয়ে যেতে বলেন।
যীশুখ্রীষ্ট শুধু খ্রীষ্টান ধর্মের প্রর্বতক নন, ছিলেন একজন প্রকৃত মানবতাবাদি। মানুষের মঙ্গলের জন্যই তিনিই প্রাণ দিয়েছিলেন। একথা যেন কেউ ভুলে না যান। একজন মানবতাবাদী বা মানবপ্রেমী হিসাবে যীশুখ্রীষ্টকে সবাই মনে রাখবে। তবে ওঁর শিক্ষা যদি আমরা জীবনে গ্রহণ করতে পারি ও মানুষকে ভালবাসতে বা মানুষের মঙ্গল করতে পারি তবেই বড়দিন পালন সার্থক হবে। বড়দিনকে আমরা কী মনটাকে বড় করার দিন হিসাবে পালন করতে পারি না? আসুন না, সেই লক্ষ্যেই আমরা সকলে ব্রতী হই। 🍁
