Sasraya News

China women’s crisis : বিয়ের জন্য মেয়ের খোঁজে বেপরোয়া চিনা পুরুষদের ঘিরে তৈরি হচ্ছে আন্তর্জাতিক সঙ্কট, বিদেশি বউ নয়, বার্তা চিন সরকারের!

Listen

সাশ্রয় নিউজ ★ বেজিং : চিনে (China) বিপুল হারে বাড়ছে পুরুষের সংখ্যা। বিপরীতে কমছে নারীর সংখ্যা। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এক সন্তান নীতির (One-child policy) ফলস্বরূপ চিনে বর্তমানে প্রতি ১,০০০ নারীর (female) বিপরীতে পুরুষের সংখ্যা ১,১১৩। সংখ্যার এই অসমতা তৈরি করেছে এক বিশাল সামাজিক ফাটল। যার পরিণতিতে এখন পুরুষরা বিয়ের জন্য বিদেশমুখো।

-প্রতীকী চিত্র।

চিনের এই অসাম্যতা শুধু সংখ্যায় থেমে নেই। বাস্তবে পুরুষ ও নারীর এই ফারাক দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ কোটি ৪০ লক্ষ। সমাজতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যেও এই সঙ্কট এক অভূতপূর্ব চাপ সৃষ্টি করেছে। অধিকাংশ চিনা পরিবার ঐতিহ্যগতভাবে পুরুষ সন্তানকে গুরুত্ব দেওয়ায় ও এক সন্তান নীতির বলি হয়ে বহু কন্যাভ্রূণ ধ্বংসের শিকার হয়েছে। ফলে দেশের এই পরিণতি অস্বাভাবিক নয়। অর্থনৈতিক বিকাশের সময় যখন নাগরিকদের হাতে টাকা এসেছে। তখনই জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি থেমে যায়। চিনা সমাজে ক্রমেই তৈরি হয় ‘বিবাহযোগ্য নারী সঙ্কট’। এর মাঝেই তৈরি হয়েছে এক নতুন ব্যবসা। বিদেশ থেকে বউ আনা। আর এই ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ (Bangladesh)। পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে প্রতি ১০০ জন নারীর বিপরীতে পুরুষের সংখ্যা মাত্র ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই চিনা ‘বিবাহ ব্যবসায়ী’রা নজর ফেলছে বাংলাদেশের দিকেই।পদ্মা (Padma) পাড়ে এক চক্র গড়ে উঠেছে, যারা চিনা পুরুষদের কাছে বাংলাদেশি মেয়েদের প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে এটিকে ‘লিগ্যাল আরেঞ্জড ম্যারেজ’ হিসেবে চালানো হলেও বাস্তবের চিত্র ভয়াবহ। সূত্রের খবর, একদিকে প্রতারণা, অন্যদিকে পাচার,উভয়ই ঘটছে এই ব্যবস্থার আড়ালে। একাংশ বাংলাদেশি পরিবার অর্থের লোভে মেয়েকে বিদেশে পাঠাতে রাজি হলেও, অনেক ক্ষেত্রেই মেয়েরা গিয়ে পড়ছে দুর্বিষহ জীবনের মুখে। চিনের সমাজে এমনিতেই টাকা দিয়ে বিয়ে করার সংস্কৃতি প্রচলিত। কাজেই এক বিদেশি স্ত্রী যদি টাকা দিয়ে পাওয়াই যায়, তাহলে অনেক পুরুষই সেই পথে হাঁটতে দ্বিধা করেননি। চুক্তিভিত্তিক বিয়ের সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে, বহু ক্ষেত্রেই বিয়ের পর সম্পর্ক আর টেকে না। মেয়েদের উপর চলে নির্যাতন। অনেককে আবার পাচার করে দেওয়া হয় অন্য দেশে। এই চিত্র সামনে আসতেই অবশেষে নড়েচড়ে বসেছে চিন সরকার। প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং (Xi Jinping) সরাসরি বলে দিয়েছেন, ‘বিদেশি বউ কিনবেন না’। চিনা সরকারের এই বিবৃতিতে স্পষ্ট, তারা চায় না এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠুক। আন্তর্জাতিক স্তরে ইতিমধ্যেই মানবাধিকার সংগঠনগুলি এই চুক্তিভিত্তিক বিয়ের বিরোধিতা করেছে।

চিনে অব্যাহত এই জনসংখ্যাগত ভারসাম্যহীনতা যে সমাজকে দীর্ঘমেয়াদে বিপন্ন করতে চলেছে, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই সতর্কবার্তা দিয়েছেন। জনসংখ্যার আধিপত্য ছেলেদের দিকে ঝুঁকে পড়লে, অপরাধ বাড়ে, যৌন হিংসা বৃদ্ধি পায় ও সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়। চিন তার অনেকটাই ইতিমধ্যেই প্রত্যক্ষ করছে। এদিকে বাংলাদেশেও উদ্বেগ বাড়ছে। একদিকে দেশের মেয়েরা বিদেশে পাচার হচ্ছে। অন্যদিকে গোটা প্রক্রিয়াটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে দুর্নীতির জাল। কিছু এনজিও ও মানবাধিকার সংগঠন এই চক্র ভাঙতে উদ্যোগ নিয়েছে বলে উল্লেখ। তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে এই সমস্যার সমাধান কঠিন।

চিনের ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এক সন্তান নীতির দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ও সমাজে নারীর মূল্যায়ন না করার ফল যে কতটা মারাত্মক হতে পারে, চিন এখন তারই মূল্য দিচ্ছে। আর সেই মূল্য চোকাতে গিয়ে গড়ে উঠেছে এমন এক চিত্র, যেখানে বিয়ে আর প্রেম নয়, কিন্তু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মোড়কে রূপ নিচ্ছে এক ভয়াবহ মানবিক সঙ্কট।

ছবি : প্রতিনিধিত্বমূলক

আরও পড়ুন : MS Dhoni : ধোনির নাম উঠল আইসিসি হল অব ফেমে

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment

Also Read