সাশ্রয় নিউজ ডেস্ক ★ কলকাতা : কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল (Calcutta Medical College and Hospital) চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এক মহিলা জুনিয়র চিকিৎসককে হেনস্থার ঘটনায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police)। জানা গেছে, ওই ব্যক্তিকে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ (Central Avenue) সংলগ্ন এলাকা থেকে আটক করা হয়। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, এই ব্যক্তিই সোমবার রাতের ঘটনার মূল অভিযুক্ত। এদিকে, এই হেনস্থার ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার ও চিকিৎসা পড়ুয়ারা। তাঁদের দাবি, হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ভয়াবহ ফাঁক রয়েছে। “পুলিশ থাকলেও যদি এক মহিলা ইন্টার্ন নিরাপদ না থাকেন, তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের নিরাপত্তা কে দেবে?” এই প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনরত চিকিৎসকরা।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার রাতের ঘটনা এখনও সবার মনে দাগ কেটে আছে। সেদিন রাতে এক রোগীকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি করা হয় মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগে (Emergency Ward)। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, রোগীটি মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। অভিযোগ, চিকিৎসার সময় ওই ব্যক্তি আচমকাই দায়িত্বে থাকা এক মহিলা ইন্টার্নের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। তিনি তাঁকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করারও চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।অভিযোগ আরও গুরুতর, ওই সময় জরুরি বিভাগের বাইরে কর্তব্যরত পুলিশকর্মী শব্দ শুনেও ভিতরে আসেননি। পরে ইন্টার্ন নিজেই বাইরে গিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানান। তখনই হস্তক্ষেপ করে পুলিশ।হাসপাতালের সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা হয় এবং হাসপাতালের নিরাপত্তা বিভাগের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ঘটনার পরই কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন আক্রান্ত ইন্টার্ন।
কিন্তু সেই ঘটনার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছে মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসা পড়ুয়ারা। তাঁদের বক্তব্য, “এটা প্রথম নয়। আমরা বারবার নিরাপত্তা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছি, কিন্তু কোনও বাস্তব পদক্ষেপ দেখা যায়নি।” বুধবার দুপুরে প্রিন্সিপালের (Principal) ঘরের সামনে ছাত্রছাত্রীরা অবস্থান-বিক্ষোভে বসেন। সেখানে তাঁরা হাসপাতাল চত্বরে সিসিটিভি নজরদারি জোরদার, নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা বৃদ্ধি, এবং পুলিশের টহলদারি বাড়ানোর দাবি জানান। একজন জুনিয়র ডাক্তার বলেন, “রোগীর সেবা করতে এসে আমরা যদি নিজেরাই নিরাপত্তাহীন বোধ করি, তাহলে চিকিৎসা কীভাবে সম্ভব? হাসপাতালের ভেতরে মদ্যপ রোগীর এমন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। এটা শুধু এক ইন্টার্নের অপমান নয়, পুরো চিকিৎসক সমাজের নিরাপত্তার প্রশ্ন।”
প্রতিবাদের সময় ছাত্ররা পোস্টার ও ব্যানার হাতে নীরব মিছিলও করেন হাসপাতালের ভিতরে। একাধিক চিকিৎসক বলেন, এই ঘটনায় প্রশাসনের শিথিল ভূমিকা স্পষ্ট। তাঁদের মতে, কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের কারণেই এমন দুর্ঘটনা ঘটছে। হাসপাতালের প্রিন্সিপাল ঘটনাটিকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি জানান, “ঘটনার তদন্ত চলছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করার জন্য ইতিমধ্যেই পুলিশের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। জুনিয়র চিকিৎসকদের উদ্বেগ আমরা বুঝি, তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাই এখন আমাদের অগ্রাধিকার।”
এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেলেই ঘটনাটির তদন্তে নেমে পড়ে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি বিশ্লেষণ করে রাতেই অভিযুক্তকে আটক করা হয়। লালবাজার (Lalbazar) সূত্রে খবর, প্রাথমিকভাবে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং মদ্যপ অবস্থায় হেনস্থার অভিযোগের প্রমাণ মিললে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ও সিনিয়র চিকিৎসকরা জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাসপাতালের ভেতরে চিকিৎসকদের উপর আক্রমণ বা হেনস্থার ঘটনা বেড়ে চলেছে। এর পেছনে প্রশাসনিক গাফিলতি ও অপর্যাপ্ত নিরাপত্তাকেই দায়ী করছেন অনেকে। তাঁদের মতে, হাসপাতালের ভেতরে নিয়োজিত পুলিশকর্মীদের প্রশিক্ষণ ও মনিটরিং ব্যবস্থাও জরুরি। অন্যদিকে, চিকিৎসা পড়ুয়াদের আন্দোলন শুক্রবারও চলতে পারে বলে সূত্রের খবর। অনেকেই জানিয়েছেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্পষ্ট আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা তাঁদের প্রতিবাদ চালিয়ে যাবেন।
এই ঘটনার পর নতুন করে প্রশ্ন উঠছে, দেশের অন্যতম প্রাচীন ও মর্যাদাপূর্ণ হাসপাতাল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিরাপত্তার চিত্র এতটাই নড়বড়ে কেন? যেখানে দিনরাত অসংখ্য রোগী ও চিকিৎসক কাজ করেন, সেখানে মহিলা চিকিৎসকদের নিরাপত্তা যদি নিশ্চিত না হয়, তবে সেটি পুরো ব্যবস্থার জন্যই উদ্বেগজনক বার্তা। আইনি মহল মনে করছে, এই ঘটনা কেবল এক হাসপাতালের নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, বরং সমগ্র রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি আস্থার পরীক্ষা।
ছবি : প্রতীকী
আরও পড়ুন : Amit Shah Bengal 2026 | ২০২৬-এ বাংলার মুখ কে? স্পষ্ট বার্তা দিলেন অমিত শাহ, আত্মবিশ্বাসী বিজেপি




